নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ
প্রসবপরবর্তী জটিলতায় দিনে ১০ জনের মৃত্যু
জাহিদ হাসান
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩৬ লাখ শিশুর জন্ম হয়। এর মধ্যে গর্ভধারণজনিত জটিলতায়, প্রসবকালে ও প্রসবপরবর্তী বিভিন্ন সমস্যায় বছরে ৩ হাজার ৭০০ প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। প্রাপ্ত হিসাবে প্রতিদিন গড়ে মারা যাচ্ছেন ১০ জন মা। যা দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ ছাড়া বাকি দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য পরিস্থিতি খারাপ। বাংলাদেশে এমন বাস্তবতায় আজ পালিত হচ্ছে নিরপদ মাতৃত্ব দিবস।
বৈশ্বিক মাতৃমৃত্যুর প্রবণতাবিষয়ক ২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফ ও ইউএনএফপিএ সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। আবার বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইচএস) সবশেষ সমীক্ষা বলছে, বর্তমানে প্রসবজনিত মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬৩ জন। এর মধ্যে রক্তক্ষরণজিনত জটিলতায় মৃত্যু হয় ৩০ শতাংশের বেশি। খিঁচুনিতে ২৩ শতাংশ মারা যান এবং অন্যান্য জটিলতায় ২১ শতাংশ মায়ের মৃত্যু হয়। এছাড়াও গর্ভপাত এবং সন্তান জন্মদানকালেও অনেকের মৃত্যু হয়ে থাকে। দেশে ২০০১ সালে প্রতি এক লাখ জীবিত জন্মে এই হার ছিল ৩২২ জন। সর্বশেষ ২০১৬ সালে মাতৃস্বাস্থ্য জরিপে মাতৃমৃত্যুর হার পাওয়া গিয়েছিল ১৯৬। এরপর সরকারিভাবে আর কোনো জরিপ হয়নি। ২০২৫ সালে অর্থাৎ গত দুই মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। কিন্তু জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ৭০-এ নামিয়ে আনা। ফলে সরকারের হাতে সময় আছে পাঁচ বছর। তাই এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সংশয় প্রকাশ করেছে জনস্বাস্থ্যবিদেরা ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞরা। প্রসূতি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অবসট্রিটিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ’ (ওজিএসবি) সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌসী বেগম বলেন, প্রসব-পরবর্তী সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভধারণজনিত জটিলতার কারণে, প্রসবকালে এবং প্রসব-পরবর্তী জটিলতার কারণে কোনো নারী মৃত্যুর হলে তাকে মাতৃমৃত্যু হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু মাতৃমৃত্যুর হারে অনেক অগ্রগতি হলেও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। এখন মৃত্যু কিভাবে কমানো যায় কিংবা উন্নত বিশ্ব কিভাবে ভালো রাখে তা দেখতে হবে। দেখা গেছে, তাদের কিছু জেনারেল ফ্যাক্টর রয়েছে। যেমন তাদের শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন কেমন? কিন্তু আমাদের দেশে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র রয়েছে। একজন নারী গর্ভবতী কি খাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। পুষ্টির অভাব এবং স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে অনেক নারী ভালো নেই। আবার সচেতনতার অভাব রয়েছে, পারিবারিক শিক্ষা কম, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নারীরা অনেক পিছিয়ে। কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নারীর নেই। অনেক সম্পদ থাকতে পারে কিন্তু টাকা খরচ কিন্তু সেই টাকা খরচ করার ক্ষমতা নেই। তাকে সম্পদের অধিকার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে। আমাদের দেশে যদি সব নারী যদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকত তাহলে মৃত্যুর হার অনেক কমে যেত। ফলে নারীদেরকে ক্ষমতায়ন করতে হবে।
দেশে মৃত্যুর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞানী ড. আহমদ এহসানূর রহমান । তিনি বলেন, দেশে মাতৃমৃত্যুর হার রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আগে যা ছিল তাই রয়ে গেছে। আর মাতৃমৃত্যু এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের হাতে আর মাত্র ৫ বছর রয়েছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে যেতে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। বিশেষ করে ২০০০ সালের পর থেকে যে গতিতে মাতৃমৃত্যুর হার কমছিল সেটি ২০১০ সালের পর আর বজায় রাখা যায়নি। বর্তমানে যে হারে মাতৃমৃত্যু কমছে এ হারে এগোলে ২০৩০ সাালের মধ্যে বাংলাদেশ এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে না।
তারা বলছেন, দেশে গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন সেবার চরম ঘাটতি রয়েছে। এখনো হোম ডেলিভারি বা বাড়িতে সন্তান প্রসবের হার ৫০ শতাংশের বেশি। কিন্তু হাসপাতালে ও ক্লিনিকে প্রসব হলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশে কম থাকে। এছাড়াও প্রসব-পরবর্তী জটিলতা ও রক্তক্ষরণ, বাসা বাড়িতে অদক্ষ ধাত্রী দিয়ে সন্তান প্রসব, স্থানীয় পর্যায়ে জরুরি ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি, পারিবারিক, আর্থিক ও সামাজিক এবং সরকারি ব্যবস্থাপনার গাফিলতির কারণেই মাতৃমৃত্যু কমানো যাচ্ছে না। তাই নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সেবার ব্যাপ্তি ও মান বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।
