Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: মাদারীপুর-৩

দৌড়ে বিএনপির মাশুক-খোকন জামায়াতের রফিকুল

Icon

নজরুল ইসলাম পলাশ, মাদারীপুর

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দৌড়ে বিএনপির মাশুক-খোকন জামায়াতের রফিকুল

মাদারীপুর-৩ (সদরের একাংশ, কালকিনি ও ডাসার) আসন বরাবরই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ছিল। সৈয়দ আবুল হোসেন সংসদ-সদস্য হওয়ার পর থেকে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে রেখেছিলেন। মন্ত্রী থাকাকালীন পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়েন। পরে নির্বাচন থেকেও সরে দাঁড়ান। এরপর এই আসনে সংসদ-সদস্য হন আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তখন এই আসনে আওয়ামী রাজনীতি দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরের নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হন আবদুস সোবাহান গোলাপ। তিনি সংসদ-সদস্য হওয়ার পর তার স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির কারণে এই আসনে আওয়ামী লীগ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। ২০২৪ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোছা. তহমিনা বেগম। এমনিতেই দুর্বল ছিল আওয়ামী লীগ, তার ওপর ৫ আগস্টের পর বেশির ভাগ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এই আসনে দলটি এখন নিষ্ক্রিয়। ফলে মাদারীপুর-৩ আসনকে বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত করার সুযোগ এসেছে বলে মনে করছেন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তবে বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতার মনোনয়ন যুদ্ধে তা মলিন হতে বসেছে। দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এই আসনে বিএনপির রাজনীতি। আর এর সুযোগ নিয়ে দলটির স্থানীয় কিছু নেতা দখল ও চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে জামায়াত তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনি মাঠে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

মাদারীপুর-৩ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাশুকুর রহমান মাশুক মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহগণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনও প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে অংশ নিয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। মাসুক ও খোকন দুজনই নির্বাচনি এলাকায় সভা-সেমিনারসহ নেতাকর্মীদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন। কালকিনি ও ডাসার উপজেলাসহ মাদারীপুর সদর উপজেলার একাংশের নেতাকর্মীরা এই দুই নেতার হাত ধরে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দুজনই এলাকায় সুপরিচিত ও জনপ্রিয়। কে মনোনয়ন পান সেদিকে তাকিয়ে আছেন সাধারণ ভোটাররা। কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় এবার আওয়ামী লীগের কেউ নির্বাচনে আসবে না এটা প্রায় নিশ্চিত। তাই ফুরফুরে মেজাজে আছেন বিএনপির সমর্থকরা।

জামায়াতে ইসলামী মাদারীপুর-৩ আসনে কালকিনি পৌরসভার আমির মো. রফিকুল ইসলাম মৃধাকে তাদের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছে। এই আসনেও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে তারা। প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চালাচ্ছেন প্রচারণা। ভোটারদের নিজেদের দিকে টানতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও মনোনায়নপ্রত্যাশী মাশুকুর রহমান মাশুক বলেন, আমি ৪৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করি। এই আসনে যখন বিএনপির পক্ষে কথা বলার লোক ছিল না তখন থেকে আমি কথা বলেছি। তিলে তিলে এই আসনে বিএনপির রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছি। ৫ আগস্টের পর এই অল্পদিনেই অনেকের গায়ে কাদা লেগেছে, কলঙ্কের তিলক লেগেছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আওয়ামী লীগের লোকদের পার করে দেওয়া ও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমি এসব কোনো কাজে নিজেকে জড়াইনি বা কোনো প্রকার অসৎ উপায় অবলম্বন করিনি। আমি মনে করি দলের জন্য সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করায় আমি মনোনয়নপ্রাপ্য, আমিই হকদার।

জামায়াতে ইসলামী মাদারীপুর জেলার নায়েবে আমির মাওলানা মো. মোকলেসুর রহমান বলেন, মাদারীপুর-৩ আসনের প্রতিটি কেন্দ্রে কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলাভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে। এই আসনের সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে গণসংযোগ করা হচ্ছে। এবার এই আসনে জামায়াতের শক্ত অবস্থান তৈরি হবে বলেও তিনি দাবি করেন।

মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী জাহান বলেন, বিএনপি একটি আদর্শিক দল। দেশের বৃহৎ এই দলের কোনো নেতা বা কর্মী কোনো অন্যায় কাজে জড়ালে দল থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কাজেই কেউ যদি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা নেবে দল। মাদারীপুরের প্রতিটি আসনের দিকে আমরা নজর রাখছি। মনোনয়ন একাধিক নেতা চাইতেই পারে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে জয়ী করে আনার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাসী আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন লন্ডনে অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি। এছাড়া জামায়াতের প্রার্থীকে বারবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম