Logo
Logo
×

শেষ পাতা

তৃতীয় দিনেও স্বাভাবিক হয়নি চক্ষু হাসপাতাল

কখন চালু হবে, জানে না কর্তৃপক্ষ * ভর্তি রোগীদের দুর্ভোগ, সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন নতুন রোগী

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তৃতীয় দিনেও স্বাভাবিক হয়নি চক্ষু হাসপাতাল

রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সংঘর্ষের জেরে শুক্রবার তৃতীয় দিনও চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালে এই অচলাবস্থা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপত্তার অভাবে চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফিরছেন না। তাছাড়া আহতরা বাসা-বাড়িতে হামলার পরিকল্পনা করছে-এমন গুঞ্জনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হাসপাতালটির চিকিৎসকরা। চিকিৎসাসেবা কখন চালু হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বুধবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরীর কক্ষে ভাঙচুরের পর চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলা করে আহতদের একাংশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করলে সেখানেও হামলা করা হয়। পরে সংঘর্ষে ৯ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আহত হন। বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক সাধারণ রোগী ইতোমধ্যে অন্যত্র চলে গেছেন। তবে জুলাই আহতদের কেউ হাসপাতাল ছেড়ে যাননি। শুক্রবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ও নার্স নেই। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নতুন রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। আগে যেসব রোগী এখান থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের অনেকে ফলোআপের জন্য এসে তা না পেয়ে ফিরে যান।

এদিকে হাসপাতালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবারের পর আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। নির্দেশনা অনুযায়ী তারা হাসপাতালে অবস্থান করবেন। হাসপাতালে দায়িত্বরত সহকারী আনসার কমান্ডার অমৃত বালা বলেন, এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। কবে হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারীরা আসবেন, তা তারা জানেন না। ছয় মাস ধরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন জুলাই আহত কোরবান হোসাইন। তার ডান চোখ ইতোমধ্যে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বুধবার হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় বাঁ হাত ভেঙে গেছে বলে জানান কোরবান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এখানে সব চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। ডান চোখের বিরূপ প্রভাব বাঁ চোখেও পড়ছে। বাঁ চোখ জ্বালাপোড়া করে, পানি বের হয়। আমি এখন বাঁ চোখও হারানোর শঙ্কায় আছি। তিন দিন ধরে চিকিৎসা ও খাবার কিছুই পাচ্ছি না।

হাসপাতালে কবে নাগাদ চিকিৎসাসেবা চালু হবে, তা জানা নেই বলে উল্লেখ করেন কোরবান। তিনি বলেন, এখান থেকে চিকিৎসা আর হবে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আমার ধারণা, আমরা হাসপাতালে থাকায় এখানকার কর্মচারী ও ডাক্তাররা তাদের খেয়ালখুশিমতো রোগী নিয়ে সিন্ডিকেট চালাতে পারছেন না। তাই তারা আমাদের বের করে দিতে চান।

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গাউসুল আজম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিতে এক চোখ হারিয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হওয়ার বিষয়টি জানতেন না তিনি। ফলোআপ চিকিৎসা নিতে বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ দেখে হতাশ হন। তিনি হাসপাতাল স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। 

গাউসুল বলেন, এক চোখ নেই। আরেক চোখেও কিছু সমস্যা অনুভব করছি। কয়েকদিন পরপর এখানে ডাক্তার দেখাতে আসি। কিন্তু এভাবে সেবা বন্ধ থাকলে তো সমস্যা। এই হাসপাতালের বিকল্পও নেই। আর বেসরকারি হাসপাতালে তো অনেক খরচ। দ্রুত চিকিৎসাসেবা চালু হোক, এটাই চাই। নারায়ণগঞ্জের মো. কাউসার আহাম্মেদ সম্প্রতি এই হাসপাতালে তার চোখের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে ফলোআপে এলে চিকিৎসক ফের ভর্তি হতে বলেন। কিন্তু বুধবারের সংঘর্ষের জেরে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে গেলে বিপাকে পড়েন তিনি। কাউসার বলেন, তিন দিন ধরে চিকিৎসা পাচ্ছি না। চোখ নিয়ে শঙ্কায় আছি। চিকিৎসা না পেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। এ অবস্থায় অন্য কোথাও যেতেও পারছি না। এ ব্যাপারে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম বলেন, হাসপাতাল বন্ধ। কোনো চিকিৎসক ও কর্মচারী প্রবেশ করতে পারছেন না। কবে নাগাদ পুনরায় সেবা চালু হবে, সেটা জানা নেই। হাসপাতালে কোনো রোগীর অবস্থানের তথ্যও আমার কাছে নেই।

প্রসঙ্গত, নানা দাবিতে ২৫ মে হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষে বিষপান করেন চার আহত তরুণ। এর রেশ না কাটতেই মঙ্গলবার পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরীকে অবরুদ্ধ করে গায়ে পেট্রোল ও কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান তারা। পরদিন বুধবার চিকিৎসকদের ওপর হামলা হয়। এসব ঘটনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। পরে তাকে সাত দিনের ছুটি দেওয়া হয়। তার স্থানে ডা. জানে আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।


Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম