পুশইন বন্ধে ভারতকে ফের চিঠি দেবে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘পুশইন’ বন্ধে বাংলাদেশ ভারতকে আবার চিঠি দেবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ভারত থেকে ‘পুশইন’ হচ্ছে। এটা নিয়ে ভারতের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদান হচ্ছে। আমরা বলছি, এটি যাতে পদ্ধতি অনুযায়ী হয়। দুই দেশের বিদ্যমান কনসুলার সংলাপ ব্যবহার করে বিষয়গুলোকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা যায় কি না, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা কিছু ক্ষেত্রে বলেছে, অনেক কেস আটকে রয়েছে, সেগুলো ঠিকমতো বাংলাদেশ করছে না। যাচাই করে দেখেছি খুব দীর্ঘদিনের তালিকা রয়েছে। পাশাপাশি এটাও দেখেছি যে ভারতের তালিকা অনুযায়ী যাচাই করে অনেককে ফেরত নেওয়া হয়েছে। কাজেই দুপক্ষের বক্তব্য থাকতে পারে। তিনি বলেন, কনসুলার সংলাপ ব্যবহার করে বিষয়গুলোকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি কি না, আমরা সে চেষ্টা করছি। নিয়মিত পদ্ধতিতে যাতে হয়, তার জন্য বাংলাদেশ আরেকটি চিঠি দেবে ভারতকে। তারা যে তালিকা দিয়েছে, তা যাচাই করে যাদের বাংলাদেশি পেয়েছি, তাদের ফেরত নিয়েছি।
প্রতিবাদপত্র নাকি কূটনৈতিকপত্র পাঠানো হবে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা একটি বস্তুনিষ্ঠ চিঠি পাঠাব। যেটাতে পদ্ধতির কথা উল্লেখ করব। কনসুলার সংলাপ ব্যবহারের চেষ্টা করব। অনেকদিন এ সংলাপ হয়নি।
ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত আনা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে পাঠানো চিঠির ব্যাপারে ভারত থেকে ফিরতি কিছু আসেনি। শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে দ্বিতীয় চিঠি দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো দ্বিতীয় চিঠি দেওয়া হয়নি। তবে প্রয়োজন হলে অবশ্যই দেওয়া হবে।
সীমান্তে বেসামরিক নাগরিক হত্যার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কি নমনীয় হয়ে গেছে-এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে নমনীয়তা দেখানো সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করছি এবং এ প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। অবশ্যই সীমান্ত হত্যা নিয়ে খুব শক্ত ভাষায় প্রতিবাদ করব। সীমান্ত হত্যাকে কখনোই মেনে নেওয়া হবে না। সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা পৃথিবীর আর কোনো সীমান্তে নেই।
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পালটা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশের নির্ভরতা ভারতের ওপর কমে গেছে। এতে রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়ছে না। এখন দিল্লির পরিবর্তে সিলেট থেকে পণ্যবাহী ফ্লাইট যাচ্ছে এবং কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। এখন স্পেনে সরাসরি পণ্যবাহী ফ্লাইট যাচ্ছে। পালটা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, আমরাও আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ভারতের সুতা আমদানির সুবিধা বাতিল করেছি। তারা তাদের প্রয়োজনে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করেছে কি না, আমি তা জানি না। উন্নয়ন অংশীদাররা নির্বাচন নিয়ে কী জানতে চায়-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা দেখা করেন বা বিদেশে যখন কোনো আলোচনা হয়, তখন নির্বাচনের বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করা নিয়ে আমরা সরকারের অবস্থান জানিয়ে দিই।
সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা বন্ধ বা কমিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, যে সিদ্ধান্তগুলো আমাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়, এর অনেকখানির জন্য আমরা দায়ী। আমাদের দেশের মানুষ ও ব্যবসায়ীরা দায়ী। বিশেষ করে যারা শ্রমশক্তি রপ্তানি করেন। মালয়েশিয়ায় তো বাংলাদেশের প্রতি কোনো বিরূপ মনোভাব নেই। আমাদের ঘর সামলাতে হবে। আমার কথা অনেকের পছন্দ হবে না। এক্ষেত্রে আমাদের অনেক কিছু করার রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে ওষুধ নিয়ে শ্রীলংকা উপকৃত হতে পারে : এদিকে এদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলংকার হাইকমিশনার ধর্মপাল বীরাক্কোদি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সাক্ষাৎকালে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, ওষুধ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, শিক্ষা, পর্যটনসহ একাধিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ঔষধশিল্পের শক্তির কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ওষুধ আমদানি বাড়িয়ে শ্রীলংকা ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে।
শ্রীলংকার হাইকমিশনার দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সহযোগিতামূলক উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশে শ্রীলংকার ব্যবসা এবং বিনিয়োগ সম্পর্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, জুনের শেষে বাংলাদেশ থেকে একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের শ্রীলংকা সফরের আশা করা হচ্ছে। এ সফর উভয় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পৃক্ততা বাড়বে। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি পর্যটকের শ্রীলংকা ভ্রমণের প্রশংসা করেন হাইকমিশনার।
