Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সাংবাদিকদের ড. আসিফ নজরুল

চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় উপদেষ্টা কমিটি হচ্ছে

সচিবালয়ে মঙ্গলবারও মিছিল-সমাবেশ হয়েছে * ঈদের পর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় উপদেষ্টা কমিটি হচ্ছে

ফাইল ছবি

কর্মচারীদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ পর্যালোচনায় একটি উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতাদের কাছ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণের পর আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, উপদেষ্টা পর্যায়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ বা কাল কমিটি গঠন হবে। যেসব বিষয়ে তাদের আপত্তি আছে সেগুলো পর্যালোচনার পর সে অনুযায়ী সুপারিশ করার জন্য কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে (অধ্যাদেশ) অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। এ অধ্যাদেশের বিষয়ে সরকারি কর্মচারীদের অনেক আপত্তি আছে। তাদের আপত্তিগুলো শোনার পূর্ণ মানসিকতা সরকারের আছে। মঙ্গলবার কর্মচারীরা দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেন।

এদিকে চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবারও সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন কর্মচারীরা। এটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। নেতারা ঈদের পর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছেন। তারা বলেন, অধ্যাদেশ যদি বাতিল না করা হয় তবে আমরা শুধু কর্মবিরতি নয়, অবস্থান কর্মসূচিও দিতে পারি। আমরা সারা দেশে এ কর্মসূচি ছড়িয়ে দেব। আমরা সব সরকারি সেক্টর স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো ক্ষমতা রাখি। কিন্তু সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সহযোগিতার জন্য এমন কর্মসূচি দিচ্ছি না। কিন্তু আপনারা আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন।’

আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, উচ্চপর্যায়ের ওই কমিটির সুপারিশ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ মানবিক দিক থেকে তাদের অসুবিধার বিষয়গুলো বিবেচনা করার মানসিকতা সরকারের রয়েছে। আমি যদি কমিটিতে থাকি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে তাদের বক্তব্যগুলো শুনব এবং উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তুলে ধরার চেষ্টা করব। এই অধ্যাদেশের কিছু ধারা অপপ্রয়োগের সুযোগ আছে কি না এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে (অধ্যাদেশ) অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। অপপ্রয়োগের সুযোগ থাকা কখনোই প্রত্যাশিত ব্যাপার হতে পারে না। ভালো করে শোনা-বোঝার জন্যই কমিটিটা গঠন করা হচ্ছে।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল না হলে কুরবানির ঈদের পর কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছেন কর্মচারী নেতারা। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইন উপদেষ্টা বলেন, এটা তাদের ব্যাপার। এরপর কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবীর বলেন, ঈদের ছুটির পর ১৬ জুন আমরা বসব। আশা করি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে এটার একটা পূর্ণাঙ্গ সমাধান আসবে। এই কালো ও নিবর্তনমূলক আইন প্রত্যাহার হবে।

এর আগে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেছেন সরকারি কর্মচারীরা। এটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবগুলো সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।

সকাল ১১টায় সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন কর্মচারীরা। এরপর অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে অর্থ উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন। বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের চার নম্বর ভবনের সামনে থেকে কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিল নিয়ে তারা সচিবালয় চত্বর প্রদক্ষিণ করে ৬ নম্বর ভবনের সামনে বাদামতলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, গতকালের বাজেটে মহার্ঘ-ভাতার কোনো ঘোষণা নেই। সেটা না করে উলটো আমাদের ওপর কালো আইন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনারা যদি মনে করেন আন্দোলন থেমে গেছে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আমরা এমন কর্মসূচি দেব আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না।

তিনি বলেন, আমরা আগামী ১৫ জুনের মধ্যে যদি কোনো ভালো সংবাদ না পাই তাহলে ওইদিন বসে কঠোর কর্মসূচি দেব। আমরা বলতে বাধ্য হবো-আপস নয়, সংগ্রাম। ঐক্য ফোরামের আরেক কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবীর বলেন, আগামীকাল (আজ) যেহেতু ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস, তাই আমাদের কোনো কর্মসূচি থাকবে না। আগামী ১৬ জুন আপনারা সবাই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন। ওইদিন বেলা ১১টায় কেউ যাতে কর্মস্থলে না থাকেন। আমরা সবাই একত্রিত হয়ে সমস্বরে বলব- অবৈধ কালো আইন, মানি না মানব না। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে কর্মচারীরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। এরপর অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পরে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বরাবর স্মারকলিপি দেন।

গত ২৫ মে জারি করা অধ্যাদেশে চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুতির বিধান রাখা হয়েছে। চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার ১১ দিনের মতো সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন কর্মচারীরা। তারা গত তিন দিনে সাতজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম