কুষ্টিয়ায় সাবেক এমপি আনারের গাড়ির সন্ধান
ফেরত চান কন্যা ডরিন
এ এম জুবায়েদ রিপন, কুষ্টিয়া
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভারতে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারের গাড়ির সন্ধান মিলেছে কুষ্টিয়ায়। কোটি টাকার ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়িটি তিন মাস পড়ে ছিল কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের একটি বহুতল ভবনের গ্যারেজে। সোমবার রাতে ওই গ্যারেজ থেকে সংসদ-সদস্যের স্টিকার লাগানো গাড়িটি জব্দ করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। ২০২৩ সালের ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের একটি বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাবেক এমপি আনার। এরপর থেকে গাড়িটির সন্ধান পায়নি তার পরিবার।
প্রয়াত এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, কুষ্টিয়ায় ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের যে গাড়ির সন্ধান মিলেছে, সেই গাড়িটি আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম আনারের। এই গাড়িতে করে আমি ও আমার বাবা চলাফেরা করেছি। আমাদের গাড়ি আমাদের ফেরত দেওয়া হোক। বাবার গাড়ি আমরা ফেরত চাই।
সোমবার রাত ১২টার দিকে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে আটতলাবিশিষ্ট সাফিনা টাওয়ার নামে ওই ভবনের গ্যারেজে ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়িটি দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে তারা পুলিশকে খবর দিলে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় গাড়ির মধ্য থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ-সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করে পুলিশ। কালো কালারের গাড়িটির নম্বর ‘ঢাকা মেট্রো-ঘ ১২-৬০৬০’।
ঘটনাস্থলে থাকা কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন বলেন, গাড়ি থেকে এর কাগজপত্র, সংসদ-সদস্য ও সিআইপির স্টিকার উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে গাড়িটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের।
প্রত্যক্ষদর্শী সাব্বির বলেন, আমরা প্রথমে শুনতে পাই, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের গাড়ি রাখা আছে সাফিনা টাওয়ারের গ্যারেজে। পরে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র উদ্ধার করেছে। সংসদ-সদস্যের স্টিকার উদ্ধার করেছে। এই গাড়ির চালক শান্ত এক সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন। তিনিই গাড়ি থেকে কাগজপত্র ও স্টিকার দেন পুলিশকে। গাড়ির কাগজপত্র দেখে নিশ্চিত গাড়ির মালিক ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।
বাসার কেয়ারটেকার আলমগীর হোসেন বলেন, জেনুইন লিফ কোম্পানি নামে একটা সিগারেট কোম্পানি দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থতলায় ৫টি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে। সেখানে ফরেনাররা আসেন, থাকেন এবং খাওয়া-দাওয়া করেন। তারাই গাড়িটা রাখার ব্যবস্থা করেছেন। জেনুইন লিফ কোম্পানির বেলাল স্যার জিএম আর জাহিদ স্যার সিইও। এর বেশি আমরা কিছুই জানি না।
গাড়িচালক শান্ত বলেন, ৫ বছর আগে আমি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ির ড্রাইভার ছিলাম। এখন আর নেই। আমি জেনুইন লিফ কোম্পানির গাড়িচালক হিসাবে চাকরি করি। জিএম স্যার বেলাল ও সিইও জাহিদ স্যারের গাড়ি চালাই। তারা দুজন আমাকে চাবি দিয়ে গাড়ি স্ট্যার্ট দিতে বলেন। গাড়ির মালিক কে? তা আমি জানি না। বেলাল স্যার আর জাহিদ স্যার সবকিছু জানেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবনের গার্ড বলেন, উনারা গাড়ি এনে রাখেন। আমি জানি না, গাড়িটা কার। আজকে শুনছি গাড়িটা এক এমপির। সিগারেট কোম্পানির অফিসের স্যাররা এই গাড়িটি রেখেছেন বেশ কয়েক মাস আগে। গাড়িটা বাইরে বের করা হয় না সেভাবে। তবে মাঝে মধ্যে স্ট্যার্ট দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাফিনা টাওয়ারের মালিক, জেনুইন লিফ টোব্যাকোর সিইও জাহিদ ও জিএম বেলাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের অফিসেও কেয়ারটেকার, দারোয়ানকে ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে জেনুইন লিফ টোব্যাকো কোম্পানির পাবলিক রিলেশন অফিসার এএম সালেহীন তৌহিদ বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি, কিছুই জানি না। স্যাররা কোথায় আছে তাও বলতে পারব না।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
