Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বিএনপি-গণঅধিকার সংঘর্ষ-ভাঙচুর, আহত ২০

গলাচিপায় পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ভিপি নুর

দুই উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি

Icon

বরিশাল ব্যুরো ও গলাচিপা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গলাচিপায় পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ভিপি নুর

পটুয়াখালীর গলাচিপায় বৃহস্পতিবার রাতে টানা পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয় গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুরকে (ভিপি নুর)। ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতার ‘চান্দিনা ভিটি বাণিজ্য’ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নে দুই দলের নেতাকর্মীরা হামলা-সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় একে অপরের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে। নুরুল হক নুরের গ্রামের বাড়ি এই চরবিশ্বাসে। দুই দলের এই বিরোধ গলাচিপা ও পার্শ্ববর্তী দশমিনা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ৪৮ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে দুই উপজেলা প্রশাসন। বর্তমানে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিএনপি অবশ্য কোনোরকম হামলা-ভাঙচুর কিংবা অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ স্বীকার করেনি। গণঅধিকারের নেতারা মিথ্যা ছড়াচ্ছে বলে পালটা অভিযোগ তাদের। বুধবার বিকালে গলাচিপা উপজেলা ছাত্রঅধিকার পরিষদের পরিচিতি সভায় যোগ দেন নুর। উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত ওই সভায় চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাকের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বুধবাড়িয়া বাজারের চান্দিনা ভিটি (দোকান করার জন্য সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া আধাশতাংশ করে জমি) নিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন নুর। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ভিটি বরাদ্দ পেতে সরকারিভাবে মাত্র ১৩০ টাকা দিতে হয়। সবমিলিয়ে ২-৩ হাজারের বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়। অথচ বাকের বিশ্বাস ভিটিপ্রতি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩৫-৪০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। সে নাকি ডিসিকে ম্যানেজ করে ভিটি বরাদ্দ এনে দেবে।’ তিনি বাকের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপিকে। একই সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও অনুরোধ করেন ব্যবস্থা নিতে।

নুরের এই অভিযোগের কথা জানতে পেরে বিকালেই চরবিশ্বাসে প্রতিবাদ মিছিল করেন বাকের বিশ্বাসের অনুসারীরা। ভিপি নুর ও গণঅধিকার পরিষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। তাৎক্ষণিকভাবে গণঅধিকার পরিষদও পালটা মিছিল বের করলে দেখা দেয় উত্তেজনা। এরপর বৃহস্পতিবার বিকালে বুধবাড়িয়া বাজারে পালটা-পালটি সমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদ। নির্ধারিত সময়ে কাছাকাছি দূরত্বে জড়ো হন দুই দলের নেতাকর্মীরা। মাইকে একে অপরের বিরুদ্ধে চলতে থাকে স্লোগান আর হুমকি। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুপক্ষ। এতে আহত হন নুরের ভাই আমিনুল ইসলাম নুরসহ উভয়পক্ষের ১৫-২০ জন। চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করা হয় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদ কার্যালয়ের।

আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘লিজ এনে দেওয়ার কথা বলে বাজারের অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩৫-৪০ হাজার টাকা করে নিয়েছে বাকের বিশ্বাস। জামান খলিফা, আদম খলিফা ও বাচ্চু হাওলাদারসহ অনেক ব্যবসায়ী তাকে টাকা দিয়েছে। ভিপি নুর এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বলায় আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।’

ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, ভিটি বরাদ্দ এনে দেওয়ার কথা বলে আমরা কারও কাছ থেকে চাঁদা নেইনি। কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে ভিপি নুরের লোকজন। আমাদের অফিসও ভাঙচুর করেছে।

বিএনপি অফিসে হামলা ভাঙচুরের খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা দেখা দেয় উপজেলার অন্যান্য এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। ভিপি নুর এসময় ছিলেন বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের পাতাবুনিয়া এলাকায়। সেখানে একটি স্মরণসভায় যোগদান শেষে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় বটতলা এলাকায় বাধার মুখে পড়ে তার গাড়িবহর। রাত ৩টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশ ও সেনাসদস্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে গলাচিপা সদরে নিয়ে আসেন।

ভিপি নুর বলেন, ‘বাকের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছি বলে আজ আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখে বিএনপির নেতাকর্মীরা। দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওরা (বিএনপি) ঘোষণা দিয়ে বলেছে আমার সঙ্গে থাকা কয়েকজনের লাশ ফেলে দেবে। আমি জেলা প্রশাসককে জানালেও কোনো সহযোগিতা পাইনি।’

বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিকালে ছাত্রদলের উদ্যোগে ইউনিয়নের তরুণদের মধ্যে বিনামূল্যে ফুটবল বিতরণ করা হয়। ইউনিয়ন বিএনপি কার্যালয়ে ওই অনুষ্ঠান শেষে ফুটবল নিয়ে ফেরার সময় আমাদের দুই কর্মীকে পাতাবুনিয়া এলাকায় মারধর করে গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা। এ ঘটনায় খানিকটা উত্তেজনা দেখা দিলেও ভিপি নুরের গাড়িবহর অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ সত্য নয়। তিনি নিজেই ভয়ে সেখানে রাস্তার ওপর অবস্থান নেন। পুলিশ ও সেনাসদস্যরা আসার পর নিরাপদ ভেবে গলাচিপায় যান। মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের অভিযোগও মিথ্যা। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে তাকে ভিডিও ফুটেজ বা ছবি দেখাতে বলুন।’

বৃহস্পতিবার রাতের এসব ঘটনা কেন্দ্র করে শুক্রবারও তীব্র উত্তেজনা ছিল গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলায়। দুই জায়গাতেই পালটাপালটি সভা সমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদ। সকালে দশমিনা উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিএনপি। পরিস্থিতি সামাল দিতে গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলায় শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে দুই উপজেলা প্রশাসন।

এদিন বিকালে গলাচিপা উপজেলা পরিষদ চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে হামলা-ভাঙচুর ও অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করেন নুর। তার প্রাণনাশের উদ্দেশ্যেই এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ভিপি নুর বলেন, ‘বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন তার অনুসারীদের দিয়ে এসব ঘটিয়েছে। আমি বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কাছে এর বিচার চাই।’

অভিযোগ সম্পর্কে হাসান মামুন যুগান্তরকে বলেন, ‘ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতার সঙ্গে তার বিরোধ। এটি আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যেত। অথচ তিনি (ভিপি নুর) তিলকে তাল বানাতে গিয়ে সমালোচিত হচ্ছেন। আমি ঢাকায় আছি। তিনি চাইলে খুব সহজেই আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।’ গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। উভয়পক্ষকে বলা হয়েছে শান্ত থাকতে। আশা করি আর কোনো সমস্যা হবে না।’

এদিকে নুরকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে পটুয়াখালীর বাউফল, চাঁদপুরের কচুয়া ও টাঙ্গাইলে মানববন্ধন-বিক্ষোভ মিছিল করেছেন গণঅধিকারের নেতাকর্মীরা। এ সময় জড়িত বিএনপির নেতাকর্মীদের শাস্তির দাবি জানান তারা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম