সিলেট গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন শেষে জ্বালানি উপদেষ্টা
আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ সম্ভব নয়
প্রতিবছর গ্যাস উৎপাদন কমছে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট
সিলেট ব্যুরো ও গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগের সম্ভাবনা নেই। সরকারের লক্ষ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পে গ্যাস সরবরাহ করা। বাসাবাড়িতে এলপি গ্যাসই ব্যবহার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার পক্ষে যদি সম্ভব হতো তাহলে ঢাকার বাসাবাড়িতেও গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম। উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবছর ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন কমছে। নতুন করে উৎপাদনে যুক্ত হচ্ছে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। তাই গ্যাস আমদানি বাড়ছে। সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শুক্রবার সকালে সিলেট গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা। সিলেটের গ্যাস উৎপাদন ও পাথর কোয়ারিগুলোয় খনিজসম্পদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুক্রবার সকালে দুই দিনের সফরে সিলেট যান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সিলেটে নেমেই চলে যান সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের গোলাপগঞ্জের কৈলাসটিলা গ্যাস ক্ষেত্রে। সেখানে নতুন করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়া কৈলাসটিলা-৭ কূপটি পরিদর্শন করেন। পরে সেখান থেকে যান এমএসটিই প্ল্যান্টে। সেখানে বসেই এ অঞ্চলের গ্যাস উৎপাদনে নেওয়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের খোঁজখবর নেন। ঘুরে দেখেন বিভিন্ন স্থাপনা।
পরিদর্শন শেষে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা গণমাধ্যমে তুলে ধরেন দেশের জ্বালানির সীমাবদ্ধতা ও নানা পরিকল্পনার কথা। তিনি বলেন, আমরা এখানে এসেছি মূলত গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডের বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। পুরোনো কূপগুলোর ওয়ার্কওভার এবং নতুন কূপ খনন হচ্ছে। সেগুলো দেখতে এসেছি।
তিনি বলেন, প্রতিবছর গ্যাসের উৎপাদন কমছে দুইশ মিলিয়ন ঘনফুট। যার বিপরীতে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমরা যুক্ত করতে পারছি। সেই ঘাটতির কারণে এলএনজি আমদানি বাড়ছে। গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে কীভাবে আমদানি কমানো যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, উৎপাদন বাড়াতে ইতোমধ্যে ভোলা ও জামালপুরে নতুন কূপ খনন হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভূতাত্ত্বিক জরিপ চলমান রয়েছে। আমরা কূপ খননের জন্য নতুন একটি রিগ ক্রয় করছি। একটি রিগ দিয়ে সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া নতুন রিগগুলো অত্যাধুনিক মানের। ইতোমধ্যেই ডিপিডি তৈরি হয়েছে। দ্রুতই তা ক্রয় করা হবে।
এক মাস ধরে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের কৈলাসটিলা-৭ ও সিলেট-১০ কূপ হতে ৮ মিলিয়ন করে দৈনিক ১৬ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। নতুন এই ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
আবাসিকে নতুন গ্যাস দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না-জানতে চাইলে ফাওজুল কবির খান বলেন, আবাসিকে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও সম্ভাবনা নেই। আমার পক্ষে যদি সম্ভব হতো তাহলে আমি ঢাকা শহরেও আবাসিকে গ্যাস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতাম। কারণ, আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ সবচেয়ে ‘ইনএফিশিয়েন্ট’। যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস মিলছে না, শিল্পকারখানায় গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না, সেখানে বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ অপচয় মনে করি। তিনি বলেন, বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহের যে খরচ, এর তুলনায় যে পরিমাণ অর্থ পাওয়া যায়, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।
যেসব এলাকায় গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে, সেসব এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংযোগের যে দাবি করছেন, তাও নাকচ করেন তিনি। বলেন, যেসব এলাকা থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে, সেসব এলাকায় আমরা স্বল্পমূল্যে এলপিজি সিলিন্ডার দিচ্ছি। বাজারে যেখানে এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য ১৪শ টাকা, সেখানে এসব এলাকায় ৮০০ টাকায় দেবে সরকার।
এ সময় তিনি গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা সচেতনতা তৈরি করুন, আর বাসাবাড়িতে গ্যাস কেউ পাবেন না। এলপিজি এসে গেছে, আমরা দামও কমানোর চেষ্টা করছি। এখন থেকে বাসাবাড়িতে এলপিজি, শিল্পকারখানায় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
পরে বিকালে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের সিলেট-১০ কূপসহ আরও কয়েকটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করেন তিনি। আজ সিলেটের জাফলং ও ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করবেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
