Logo
Logo
×

শেষ পাতা

শেয়ার কারসাজি

তারকা ক্রিকেটার সাকিবের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তারকা ক্রিকেটার সাকিবের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

কারসাজির মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে ২৫৭ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাকিব পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিএসইসি) ও দুদকের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর (শুভেচ্ছা দূত) ছিলেন।

মঙ্গলবার কমিশনের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানান, সাকিব ও অন্য আসামিরা মিলে পরস্পর যোগসাজশে শেয়ার কারসাজি করে প্রায় ২৫৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেয়ার কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল বিএসইসি।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন-শেয়ার কারসাজির মাফিয়া হিসাবে পরিচিত সমবায় অধিদপ্তরের বহুল আলোচিত উপনিবন্ধক মো. আবুল খায়ের ওরফে হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজি ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, জাহেদ কামাল, হুমায়ুন কবির ও তানভির নিজাম। আসামিরা প্রায় সবাই সাকিব ও হিরুর পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এদের নামে খোলা বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবে শেয়ার বেচাকেনার নামে কারসাজি করা হতো।

এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে শেয়ার বাজারে কারসাজি করেছেন। তারা পরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সম্পর্কিত প্রচলিত আইন ও বিধান-সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। তারা নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিও অ্যাকাউন্টগুলোতে অসাধু, অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে ফাটকা ব্যবসার মতো ধারাবাহিক লেনদেন, প্রতারণামূলক সক্রিয় লেনদেন, ফাটকা ও অনুমাননির্ভর লেনদেনের মাধ্যমে বাজারে কারসাজি করতেন।

এজাহারে আরও বলা হয়-আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র গঠন করে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ারে ধারাবাহিকভাবে ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সেই শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করতেন। এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন এবং চক্রটি ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকারও বেশি আত্মসাৎ করে। যা অস্বাভাবিক মূলধন লাভ হিসাবে উপস্থাপন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে ছিল অপরাধলব্ধ অর্থ।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মো. আবুল খায়ের ওরফে হিরু শেয়ারবাজার থেকে তোলা অর্থ থেকে ২৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ টাকা তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের সহায়তায় বিভিন্ন খাতে স্থানান্তরের মাধ্যমে ‘মানি লন্ডারিং’ করেন। হিরুর নামে থাকা ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ টাকার ‘অস্বাভাবিক, অযৌক্তিক এবং সন্দেহজনক লেনদেন করা হয়েছে। হিরুর কারসাজি করা প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এবং সোনালী পেপারস লিমিটেডের শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করেন। হিরুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে শেয়ার বাজারে বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে সাকিব মার্কেট ম্যানিপুলেশনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন। তিনি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওই কারসাজিকৃত শেয়ারে বিনিয়োগে প্রতারণার মাধ্যমে প্রলুব্ধ করে তাদের ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অপরাধলব্ধ আয় হিসাবে শেয়ার বাজার হতে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেন। প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দরে কারসাজির অভিযোগেই গত সেপ্টেম্বরে সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জারিমানা করেছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসি। সে সময় আবুল খায়ের ওরফে হিরুকে ২৫ লাখ টাকা, ইশাল কমিউনিকেশন লিমিটেডকে ৭৫ লাখ টাকা, মোনার্ক মার্ট লিমিটেডকে এক লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবরকে ১০ লাখ টাকা, লাভা ইলেকট্রোড ইন্ডাস্ট্রিজকে এক লাখ টাকা এবং জাহেদ কামালকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছিল বিএসইসি।

দুদক জানায়, দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব পুঁজিবাজার ব্যবসায় যোগ দিয়ে যৌথ অংশীদারত্বে ব্রোকারেজ হাউজ (শেয়ার কেনা-বেচার প্রতিষ্ঠান) মোনার্ক হোল্ডিংস প্রতিষ্ঠা করেন। কারসাজির অভিযোগ ওঠার পর মোনার্ক হোল্ডিংসের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

জানা যায়, বাজার উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য ২০১৭ সালে সাকিবকে শুভেচ্ছা দূত করেছিল বিএসইসি। পরের বছর দুদকের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া হটলাইন-১০৬ উদ্বোধনকালেও তার সঙ্গে কাজ করেছিল দুদক। ২০২২ সালে বিএসইসির এক তদন্ত প্রতিবেদনে শেয়ার কারসাজির অভিযোগে সাকিবের নাম জড়ালে তাকে আর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর না রাখার কথা জানায় দুদক।

বাংলাদেশ ক্রিকট দলের অধিনায়ক থাকাবস্থায়ই ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাগুরা থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন সাকিব। আগস্টে তিনি যখন কানাডায়, সেই সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর তার আর দেশে ফেরা হয়নি। গত বছরের ৮ নভেম্বর সাকিব আল হাসানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কথা জানায় আর্থিক খাতের গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম