Logo
Logo
×

শেষ পাতা

৩৮ কোটি টাকার চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চুরি হয়ে যাচ্ছে নতুন ভবনের মালামাল

চালু হয়নি ১০০ শয্যা * ৪ চিকিৎিসক দীর্ঘদিন অনুপস্থিত

Icon

তৌহিদ জামান, যশোর

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চুরি হয়ে যাচ্ছে নতুন ভবনের মালামাল

একশ শয্যায় উন্নীত চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখনো চালু হয়নি। ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন ভবন থেকে চুরি যাচ্ছে মালামাল। অপরদিকে, জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। দেশসেরা পুরস্কারপ্রাপ্ত এই হাসপাতালে প্রচুর রোগী হয়। এ কারণে তা একশ শয্যায় উন্নীত করা হয়।

প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ৬ তলা ভবন নির্মিত হলেও শুরু হয়নি কার্যক্রম। আগের ৫০ শয্যার জন্য যে লোকবল প্রয়োজন, আছে তার ৩ ভাগের ১ ভাগেরও কম।

চৌগাছা ছাড়াও পাশের ঝিকরগাছা, ঝিনাইদহের মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার রোগীরা এখানে সেবা নিতে আসেন। প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৬শ থেকে ৭শ রোগী নিবন্ধিত হন। ৫০ শয্যার বিপরীতে গড়ে ৮০-৯০ রোগী ভর্তি থাকেন। যাদের বেশিরভাগই নারী।

৫০ শয্যার হাসপাতালে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ চিকিৎসক থাকার কথা ৩২ জন। বাস্তবে ১৭ জন থাকলেও মূলত প্রেষণে রয়েছেন ৪ জন। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত আছেন ডা. মৃদুল কান্তি (১১ বছর), ডা. গোলাম রসুল (১ বছর), সামান্তা রহমান শান্তা (২ বছর) এবং ডা. সঞ্চিতা সেন (২ মাস)।

অনুপস্থিত ৪ জনের ৩ জনই দেশের বাইরে আছেন। স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন ৯ জন। মূলত স্বাস্থ্যসেবার সহজপ্রাপ্তির জন্যে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী বেশি হয়। রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য আরও একটি ৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে তিনটি গুচ্ছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের এ অবকাঠামো নির্মিত হয়। এর মধ্যে ৬ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালের মূল ভবন ২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল এই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। এছাড়া অক্সিজেন প্ল্যান্টসহ সরবরাহ লাইন স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কিন্তু নতুন ভবন নির্মাণ ও হস্তান্তর হলেও ভবনটিতে কার্যক্রম শুরু হয়নি।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ভবনটি কার্যক্রমের আওতায় না এলেও সেখানকার বাথরুম ফিটিংস, ট্যাপ, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের দৃশ্যমান পাইপ ইত্যাদি চুরি হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় রংও চটে গেছে।

জনবল সংকটের বিষয়ে হাসপাতালের সিনিয়র সেবিকা ঝুমুর রাণী হালদার বলেন, চিকিৎসক, সেবিকাসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সংকটের কারণে আমাদের সেবা দিতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখান থেকে চারজন মিডওয়াইফারি বদলি হলেও নতুন কেউ আসেননি। রয়েছে সুইপার ও ঝাড়ুদার সংকট।

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহ. আহসানুল মিজান রুমী বলেন, আমাদের মেডিকেল অফিসার, কনসালট্যান্ট, সেবিকা, সুইপার সব জনবলই সংকটে। একটা ডিজিটাল এক্সরে মেশিনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি। কিন্তু মেলেনি। ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও আমরা এখনো সেই কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি।

এ বিষয়ে কথা হয় যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, যতদূর জানি ১০০ শয্যার জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন হয়ে গেছে। ওষুধ ও রোগীদের খাবারের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।

জনবল সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, সারা দেশের হাসপাতালে এই একই সংকট রয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, সেপ্টেম্বর নাগাদ স্পেশাল বিসিএসের মাধ্যমে ৩ হাজার চিকিৎসক নেওয়া হবে। আশা করা যায়, সেই সময় এই সংকট থেকে উত্তরণ হবে। ২০০৪-২০১৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে টানা দেশসেরা হাসপাতাল হিসাবে স্বীকৃতি পায় এটি। ২০১৮ সালেও জাতীয় পুরস্কার পায়। সর্বশেষ স্বাস্থ্যসেবায় সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করে পায় ‘হেল্থ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড-২০২০’।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম