মুছে যাচ্ছে কাশিমপুর রাজবাড়ির স্মৃতি
সুকুমল কুমার প্রামাণিক, রাণীনগর (নওগাঁ)
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ছোট যমুনা নদীর পাশে অবস্থিত কাশিমপুর রাজবাড়ি। উপজেলার একমাত্র ঐতিহাসিক স্থান এটি। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বাড়িটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুধু ভাঙাচোরা-বিধ্বস্ত একটি ভবন। সেই স্মৃতিটুকু দেখতেই দূরদূরান্ত থেকে এখানে আসেন অনেকে।
জানা গেছে, কাশিমপুর রাজবাড়ির রাজা ছিলেন নাটোরের রাজার বংশধর। শ্রী অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ী বাহাদুর ছিলেন এই রাজত্বের শেষ রাজা। তার চার ছেলে ও এক মেয়ে ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রাজবংশের সবাই ভারতে চলে যান। শুধু ছোট রাজা শ্রী শক্তি প্রসন্ন লাহিড়ী বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই রাজবাড়িতে বসবাস করতেন। তিনিও একসময় রাজবাড়ির অঢেল সম্পদ রেখে ভারতে চলে যান।
রাজবাড়িটি দুই একর ১৯ শতক জমির ওপর অবস্থিত। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা-অযত্নে পড়ে থাকায় প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এ বাড়ির নিদর্শনগুলো মুছে যাচ্ছে। বাড়ির মূল ভবনের সামনের চারটি গম্বুজ, উত্তর পাশে হাওয়াখানা ও পশ্চিম পাশে একটি দুর্গামন্দির ছিল। মন্দিরের পাশে ছিল রাজবাড়ির বৈঠকখানা, পুকুর ও নদীর ধারে একটি কাচের তৈরি ঘরের বালিকা বিদ্যালয়।
আরও জানা যায়, কাশিমপুর রাজার কয়েকশ বিঘা জমি ও পুকুর স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখলে নিয়েছে। কেউ আবার লিজের নামেও দখল করেছে। রাজবাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে চাতাল, মিল, কলকারখানা ও বসতবাড়ি। অভিযোগ উঠেছে, রাজবাড়ি ও রাজার সম্পদ রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্থানীয় এফাজুল, বাদেশ আলী, মোহাতাব হোসেনসহ কয়েকজন জানান, বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে অনেকেই রাজবাড়িটি দেখতে আসেন। রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার না করায় বর্তমানে রাজবাড়ির শেষ স্মৃতিটুকুও হারিয়ে যেতে বসেছে। তারা বলছেন, যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এটি একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে।
উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান বাবু বলেন, শুনেছি স্বাধীনতার পর এবং এর আগে কাশিমপুর রাজার বংশধররা সবাই এই রাজত্ব ছেড়ে চলে যান। পরে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ইচ্ছেমতো রাজার এই বিশাল সম্পত্তি দখলে নেয়। বিভিন্ন কায়দায় লিজ নেওয়ার কথাও শুনেছি। রাজবাড়ির কারুকাজখচিত ভবন আজ জৌলুস হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান বলেন, কাশিমপুর রাজবাড়ির বেহাল দশার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের কোনো নির্দেশনা এখনো আসেনি। আমরা চেষ্টা করছি রাজবাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য দর্শনীয় স্থান হিসাবে গড়ে তুলতে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সম্পত্তিগুলো লিজ দেওয়া রয়েছে। কেউ যদি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে থাকেন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
