Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের ১০ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

তীব্র যানজটে ভোগান্তি * ২৪ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের ১০ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবিতে শনিবার সড়ক অবরোধ করেন বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর ভাটারার নতুন বাজার এলাকায় সড়কের একপাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে ব্যাপক লাটিচার্জ করে পুলিশ। এতে ছয় শিক্ষার্থী আহত হন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শর্তসাপেক্ষে ২৪ শিক্ষার্থীর স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলে তারা সড়ক থেকে সরে যান এবং আজকের ‘ঢাকা ব্লকেড’ কর্মসূচিও স্থগিত করেন।

এদিকে সড়ক অবরোধের কারণে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরাগামী সড়কসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও চরম ভোগান্তিতে পড়েন গণপরিবহণের যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নতুন বাজার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ। বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ভাটারা থানা পুলিশ। শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছাড়তে না চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে ৬ শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের মধ্যে দুজনকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরিয়ে দেওয়ার কিছু সময় পর আবারও রাস্তা অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। দাবি না মানা পর্যন্ত নতুন বাজারের রাস্তা ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দেন। এ সময় তারা রাস্তায় শুয়ে পড়েন। দাবি মানা না হলে রোববার ‘ঢাকা ব্লকেড’ করারও হুঁশিয়ারি দেন তারা। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি করেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অন্যায়ভাবে হামলা করে বেধম লাঠিপেটা করেছে। পুলিশ কোনো একটি গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-২৪ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ নিঃশর্ত প্রত্যাহার এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা, বহিষ্কারের সঙ্গে জড়িত সব ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা, ইউআইইউতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম-অসুবিধা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রিফর্ম দাবিগুলো বাস্তবায়ন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর বাতিল করা।

ইউআইইউ সূত্র ও শিক্ষার্থীরা জানান, গত ২৬ ও ২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষের জেরে উপাচার্যসহ ১১ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। এরপর ২৮ এপ্রিল ইউআইইউ কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। যদিও ২০ মে থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তা প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসে সরাসরি ক্লাস ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি করেন। ৫৪ দিন পর শনিবার পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী ক্লাস চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের যৌক্তিক ১৩ দফা দাবি দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করে আসছে। উল্টো আন্দোলন দমন করতে বহিষ্কার করা হচ্ছে। গত ২ জুন ৪১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ২৪ জনকে স্থায়ী ও ১৬ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। বাকি একজনকে সতর্ক বার্তা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অবরোধের কারণে রামপুরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোডগামী রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। উপায় না পেয়ে কর্মস্থলগামী এবং বিভিন্ন গন্তব্যের লোকজন যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে রওয়ানা হন।

ভোগান্তিতে পড়ে ইমরান হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সবাইকে হেঁটে যেতে হচ্ছে। রাস্তায় কেন এত দাবি-দাওয়ার আন্দোলন চলে, সেটি বোধগম্য নয়। আন্দোলনকারীরা কখনো মানুষের কষ্ট বোঝে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস সূত্রে জানায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিকালে জরুরি সভা ডাকে কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী সালমান বারী রিজাল যুগান্তরকে জানান, আমাদের দাবি পুরোপুরি না মানলেও শর্তসাপেক্ষে স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কৃর্তপক্ষ। এজন্য জনস্বার্থে রোববারের ব্লকেড কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাকিবুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে গেলে ধাক্কাধাক্কি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলে তারা রাস্তা ছেড়ে চলে যান। পরে যান চলাচল পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এদিকে, আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে এবং কোনো ধরনের বল প্রয়োগের ঘটনা ঘটেনি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম