Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন ওএসডি

টাকা না দেওয়ায় ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছি- দাবি ডিসির

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন ওএসডি

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। শনিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। শুক্রবার এক নারীর সঙ্গে তার একটি আপত্তিকর ভিডিও ও স্থির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপরই এই ডিসির বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হলো। এছাড়া বিষয়টির তদন্ত শেষে বিদ্যামান আইন অনুসারে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এদিকে আশরাফ উদ্দিন শরীয়তপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন ওই নারী তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। চাহিদা মতো টাকা না পেয়ে আগের কিছু ভিডিও ও ছবি ভাইরাল করে দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ২০১৯ সালে জামালপুরের সাবেক ডিসি আহমেদ কবীর ও ২০২২ সালে পটুয়াখালীর সাবেক ডিসি মো. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে একই ধরনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। এর মধ্যে জামালপুরের ডিসির বিরুদ্ধে এক বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি বন্ধের শাস্তি আরোপ করা হয়েছে। আর হাবিবুর রহমানের বিষয়টি তদন্তের অপেক্ষায় আছে। আগের দুই ঘটনা ঘটার পরও শিক্ষা নেয়নি শরীয়তপুরের ডিসি-এমনটি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে-এমন কয়েকটি ঘটনায় প্রশাসন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। প্রতিটি ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত, যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, জেলা প্রশাসকের ঘটনা এখন শরীয়তপুরে ‘টক অব দ্য টাউন’। ওই নারী প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন, ডিসি আশরাফ উদ্দিন তাকে বিয়ের প্রলোভনে প্রতারণা করছেন।

বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্থতাকারী আইনজীবীর দাবি, পরকীয়া সম্পর্ককে কেন্দ্র করে এক পর্যায়ে ডিসির কাছে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন ওই নারী। ডিসি ওই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তিনি আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিওতে থাকা ওই নারী টাঙ্গাইল সদরের বাসিন্দা। তিনি ঢাকার মিরপুরে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন ওই নারীর স্বামীর বড় বোনের জামাই। তার বাসাও মিরপুর এলাকায়। পারিবারিক সম্পর্ক এবং বাসায় যাতায়াতের এক পর্যায়ে দুজন পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বেশ কয়েক মাস ধরে তাদের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল। দুই মাস ধরে জেলা প্রশাসক ও ওই নারীর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছিলেন শরীয়তপুরের এক আইনজীবী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আইনজীবী বলেন, ‘ওই নারী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান যে, ডিসি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্কে তৈরি করে এখন তাকে বিয়ে করছেন না। পরে আমিও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। দুজনই আমাকে আইনজীবী হিসাবে মানেন। তখন আমি মধ্যস্থতাকারী হিসাবে দুজনকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেই। তখন ওই নারী বলেন, বিয়ে করলে উনি (ডিসি) আমাকে মারধর করবেন ও তালাক দেবেন। পরে তিনি বিয়ের পরিবর্তে এককালীন পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসক না মানলে প্রতি মাসে এক লাখ করে হাত খরচের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক কিছু টাকা তাকে দেন। পরে তিনি এক পর্যায়ে পুরো পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন। তখন জেলা প্রশাসক টাকা দিতে অপারগতা জানালে ব্যক্তিগত ভিডিও ভাইরাল করে দেন।

আইনজীবী আরও বলেন, ‘কারও ব্যক্তিগত ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া অপরাধের শামিল। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ও পর্নোগ্রাফি আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী এটি একটি অপরাধ। যেহেতু জেলা প্রশাসক ব্ল্যাক মেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন, এ বিষয়ে তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

এদিকে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর অবশেষে মুখ খুলেছেন ডিসি আশরাফ উদ্দিন। সাংবাদিকদের কাছে তিনি দাবি করেন-ওই নারী তাকে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে আসছিলেন। তাকে কয়েক দফায় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘ওই নারী সম্পর্কের সূত্র ধরে বিভিন্ন সময় ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল। ব্ল্যাকমেইল যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন সে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। সেই টাকা মেটানোর সামর্থ্য আমার নেই, তখন সে টাকা আদায় করতে শরীয়তপুরের এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। এক পর্যায়ে সে আমার ডিসি পোস্টিংয়ের অনেক আগের কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

আশরাফ উদ্দিন আরও বলেন, ‘ডিসি পোস্টিংয়ের পর থেকে সে টাকার জন্য অনেক চাপাচাপি করছিল। পরে মাসে মাসে তার অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। সে একে তো আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে, অন্যদিকে এগুলো (গোপন ছবি) সব জায়গায় দিল। আমি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেব।

প্রসঙ্গত, শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে তার সঙ্গে এক নারীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা গেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম