নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন
এনসিপিসহ ১৪৭ নতুন দলের আবেদন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দ্বিতীয় ধাপের শেষ দিন রোববার পর্যন্ত এনসিপিসহ আরও অন্তত ৮২টি দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। এর আগে ৬৫টি রাজনৈতিক দল আবেদন করেছিল। সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করল অন্তত ১৪৭টি দল।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতীক হিসাবে প্রথম পছন্দ দিয়েছে ‘শাপলা’। বিকল্প প্রতীক চেয়েছে কলম ও মোবাইল ফোন। নিবন্ধন পেয়ে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের আশা প্রকাশ করেছেন এনসিপির নেতারা। নতুন দল নিবন্ধন আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন রোববার এ আবেদন করে তারা। আবেদন জমা দিতে ইসিতে দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ভিড় করেন। তারা নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন দাবি করেন। এদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা।
এনসিপি ছাড়া গতকাল আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-ড. মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বাধীন জনতার পার্টি বাংলাদেশ (জেপিপি), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামালের নেতৃত্বাধীন জনতার দল, বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি (বিসিপি) গণদল, বাংলাদেশ জনজোট পার্টি (বাজপা), বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ সমতা পার্টি, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, বাংলাদেশ সিটিজেন পার্ট, ইসলামী ঐক্যজোট, নতুন বাংলাদেশ পার্টি (এনবিপি), বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা পার্টি, বাংলাদেশ গণ-বিপ্লবী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাষানী ন্যাপ), বাংলাদেশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ফেডারেশন, জনতার দল, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি (বিসিপি), জাতীয় ন্যায়বিচার পার্টি, বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিডিপি) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ গতকাল রাতে যুগান্তরকে জানান, সব মিলিয়ে ১৪৭টি আবেদন জমা পড়েছে। আইন ও বিধি অনুযায়ী এসব দলের আবেদন যাচাই-বাছাই করা হবে। জাতীয় ফুল ‘শাপলা’ প্রতীক এনসিপি চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করব। দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করে কী না- তা যাচাই করব। তারপর নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দের প্রশ্ন আসবে। তাই এ মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো কিছু বলা যাবে না।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ১০ মার্চ রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ২০ এপ্রিল আবেদনের শেষ সময় ছিল। পরে তা বাড়িয়ে ২২ জুন করা হয়। শেষ দিনে দিনভর নির্বাচন কমিশনে আবেদনকারী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয় ইসি।
দ্রুততম সময়ে নিবন্ধন পাওয়ার আশা নাহিদের : ট্রাকভর্তি কাগজপত্র এনে দলের নিবন্ধন আবেদন করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা। এ সময় নির্বাচন কমিশনে দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কয়েকজন নেতা সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে দল নিবন্ধনের জন্য সব শর্ত পূরণ করে আবেদন করেছি। ১০৫টি উপজেলা এবং ২৫টি জেলায় কমিটি করা হয়েছে। সব কাগজপত্র ইসিতে জমা দিয়েছি। আমরা আশাবাদী দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নিবন্ধন পাব। নিবন্ধিত দল হিসাবে জনগণের কাছে যাবে।
দলের প্রতীকের বিষয়ে তিনি বলেন, দলীয় প্রতীক হিসাবে তিনটি পছন্দ দিয়েছি। শাপলা, কলম ও মোবাইল। আমাদের প্রথম পছন্দ শাপলা প্রতীক। আমরা আশা করছি জনগণের মার্কা হিসাবে এবং গণ-অভ্যুত্থানের মার্কা হিসাবে গ্রাম বাংলার প্রতীক হিসাবে শাপলা এনসিপি পাবে। এই শাপলা মার্কা নিয়ে আমরা আগামী দিনে জনগণের মধ্যে কাজ করব এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি শাপলা প্রতীক দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনা বাধা নেই। জাতীয় ফল কাঁঠাল একটি দলের মার্কা হিসাবে রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা কোনো সমস্যা দেখিনি বলে আবেদন করেছি। সেক্ষেত্রে কোনো আইনগত সমস্যা আমরা দেখি না। ইসির সাথেও আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি। আমরা শাপলাকে মার্কা হিসাবে নিয়েছি।
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি, শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। সেখানে আমরা প্রবাসী ভোটাধিকারের কথা বলেছি। যাতে প্রবাসীদের ভোটাধিকার যেকোনো মূল্যে রক্ষা করা হয়। তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কোন প্রক্রিয়ায় প্রবাসী ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। তবে তারা বলেছেন, এটা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করা হবে।
এর আগে বিকালে এক ব্রিফিংয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারি বলেন, আমরা এখনো দাবি করছি বর্তমান ইসির পুনর্গঠন করতে হবে। এ ইসি পুনর্গঠন হতে হবে এবং পুনর্গঠন হবেই। আমরা বি অপশনে যাচ্ছি না। আর কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, সংসদের ৪০০ আসনের মধ্যে ৩০০ আসন এনসিপি পেয়ে সরকার গঠন করবে।
বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি : ডেসটিনি খ্যাত ড. মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছে। দলটি প্রতীক হিসেবে আনারস ও কলস চেয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশন যেসব শর্ত দিয়েছে তার সব পূরণ করে আমরা আবেদন জমা দিয়েছি। আমরা সবার সহযোগিতা চাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকার গণতন্ত্র, রাজনৈতিক বান্ধবে এবং আমাদের পছন্দের একটি সরকার। আমাদের নিবন্ধন দিয়ে সর্বস্তরে ন্যায়ভিত্তিক, ন্যয্যতার ভিত্তিতে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ করে দেবেন বলে সেই প্রত্যাশা রাখি।
হাতি প্রতীকে নিবন্ধন চায় জনতা পার্টি বাংলাদেশ : হাতি প্রতীকে দলের নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছে জনতা পার্টি বাংলাদেশ (জেপিবি)। আবেদন জমা দিয়ে জেপিবির মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। নিবন্ধন বিধিমালার যে শর্ত আছে সেগুলো পালন করা খুব কষ্টকর। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের এ বিধিমালার কিছু কিছু বিধিমালা সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে। সেই প্রস্তাবগুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তার পরও পুরোনো বিধিমালা অনুযায়ী আমরা আবেদন জমা দিয়েছি এবং আমরা আশা করি, রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাব।
চাবি প্রতীকে নিবন্ধনের প্রত্যাশা জনতার দল : জনতার দলের আবেদন জমা দেন দলের আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল ও সদস্য সচিব আজম খান। আবেদন জমা দেওয়ার পর শামীম কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করে আমরা আবেদন করেছি। আমাদের জেলা ও উপজেলা কমিটি আইন অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে। এখন বাকি সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। তিনি জানান, দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের জন্য সাহসী, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক মানুষদের সংগঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য পরবর্তী প্রজন্ম, সামনে নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০টি। সম্প্রতি নিবন্ধন স্থগিত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। আর আদালতের আদেশে নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
