Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বিতর্কিত তিন সংসদ নির্বাচন

শেখ হাসিনা সাবেক তিন সিইসি ও ইসিদের বিরুদ্ধে বিএনপির মামলা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), ১০ জন নির্বাচন কমিশনারসহ অন্তত ২১ জনকে আসামি করে মামলা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। ওই মামলায় পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে উলটো ভয়ভীতি দেখিয়ে জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার পক্ষে থানায় এজাহার জমা দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহ উদ্দিন খান। মামলা নম্বর ১৮।

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইমাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলা করার আগে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে মো. সালাহ উদ্দিন খানসহ বিএনপির প্রতিনিধিদল। তারা সিইসির কাছে ওই মামলার অভিযোগপত্র এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের অনিয়মের ঘটনায় আরেকটি পৃথক অভিযোগ দেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি মহাসচিবের পক্ষ থেকে দুটি চিঠি ইসিকে দেওয়া হলো। এতে ১৯ জনের নাম উল্লেখ আছে। তালিকায় নামের সংখ্যা আরও বাড়বে। তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে। তিনি আরও বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। ওই নির্বাচনগুলো হয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে। দিনের ভোট রাতে হয়েছে। মো. সালাহ উদ্দিন খান বলেন, পরপর তিন নির্বাচনে যারা ভোট কেটে নিয়েছিল, আমরা তাদের বিচার চাই।

ইসি থেকে বের হয়ে বিএনপি নেতারা শেরেবাংরা নগর থানায় মামলা করতে যান। মো. সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন মো. মিজানুর রহমান, মো. ইকবাল হোসেন, শরিফুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। তারা বিএনপির মহাসচিব স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র থানায় জমা দেন। এতে ২০১৪ সালের নির্বাচনের জন্য ৮ জন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৯ জন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে ৪ জনসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৭১-এর (খ, ঘ, ছ, জ ও হ) উপধারায় অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকারকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে বলা হয়েছে, ওইসব আসামি ও নির্বাচন কমিশন মিলে সংবিধান লঙ্ঘন করে নির্বাচন করার জন্য সব জেলা, উপজেলা ও মহানগর নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ায় পর বিএনপির নেতাকর্মীদের গুম, খুন ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটায়।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন আয়োজন করায় ওই সময়ের সিইসি কেএম নূরুল হুদা, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী ও একেএম শহীদুল হক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, সাবেক এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলামের নাম উল্লেখ এবং গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও এনএসআই-এর তৎকালীন মহাপরিচালকদের নাম উল্লেখ না করলেও তাদের আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পক্ষে রাতে ভোট কারচুপির অভিযোগ করা হয়েছে। ওই সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া বাকি সব জেলায় অনিয়ম হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সময়ের নির্বাচন কমিশনার মরহুম মাহবুব তালুকদারকে আসামি করা হয়নি।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন আয়োজন করায় সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ-সদস্য হয়ে যান। সেই সংসদকে ‘বিনা ভোটের সংসদ’ আখ্যা দেয় বিএনপি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে। অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়। সে নির্বাচনের নাম হয় ‘রাতের ভোট’। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে শরিক দলগুলোকে আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহীদের। এ নির্বাচনের নাম হয় ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম