এস আলম গ্রুপ
বিদেশে বাড়ি ও ২৫ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি : সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিতর্কিত ব্যবসায়ীগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এই গ্রুপকে আইনবহির্ভূতভাবে ঋণ দিয়ে সহায়তা করা ইসলামী ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার দুদকের পৃথক তিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক এ আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, সাইপ্রাসে থাকা একটি দোতলা আবাসিক ভবন এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে ১৮টি কোম্পানির শেয়ার ফ্রিজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে ‘হাজেল ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেড’ ও ‘পিকক প্রপার্টি হোল্ডিংস লিমিটেড’ পুরোপুরি এস আলম পরিবারের মালিকানাধীন। বাকি ১৬টি কোম্পানির শেয়ার শুধু সাইফুল আলমের নামে।
এছাড়াও ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের অধীন দ্বীপ অঞ্চল জার্সিতে সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের প্রতিষ্ঠিত ৬টি ট্রাস্টের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। ট্রাস্টগুলো জার্সিভিত্তিক একটি ট্রাস্ট কোম্পানি কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। এ ৬টি ট্রাস্টের মধ্যে ‘ম্যাপল ট্রাস্ট’-এ মালয়েশিয়ার রেনেসাঁ হোটেল ও ফোর পয়েন্টস বাই শেরাটনে ২১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। বাকি ট্রাস্টগুলোর সম্পদের পরিমাণ এখনো জানা যায়নি।
এর আগে ১৭ জুন সাইফুল আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা আরও ১৮০ কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।
২৭ এপ্রিল এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা আরও ৫৫৯ কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।
এর আগে ২৩ এপ্রিল এস আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা আরও জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। এর আগে ৯ এপ্রিল এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরও ৬৬টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৩৭৪ কোটি ৬১ লাখ ৭ হাজার ২২১ টাকা। তারও আগে ১০ মার্চ এস আলম গ্রুপের আরও স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।
২৩ ফেব্রুয়ারি এস আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা ৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। তিন দফায় সাইফুল আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা ১৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ১৪ জানুয়ারি সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন জায়গায় থাকা জমি, ফ্ল্যাট, প্লট, ভবনসহ ২০০ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ৬৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করারও আদেশ দেন আদালত।
এছাড়া গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ১২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। দুদকের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়েছিল, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে ১০০ কোটি ডলার পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক। গত বছরের ৭ অক্টোবর মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তার স্ত্রী, সন্তান, ভাইসহ ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
ইসলামী ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা : এদিকে এস আলম গ্রুপকে আইনবহির্ভূতভাবে ঋণ দিয়ে সহায়তা করার অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ ইহসানুল ইসলাম, মো. সিরাজুল কবির, মোহাম্মদ কায়সার আলী, তাহের আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ, হোসেন মোহাম্মদ ফয়সাল, আহাম্মদ জুবায়েরুল হক ও এসএম তানভীর হাসান।
