আগামী অর্থবছর নিয়ে আইএমএফের পূর্বাভাস
দেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৪ ভাগ, মূল্যস্ফীতির হার ৬.৫ শতাংশ
চলমান ঋণ কর্মসূচি ৪৭০ কোটি থেকে ৫৫০ কোটি ডলারে উন্নীত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি : সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে ও মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে। সোমবার রাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হবে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি প্রত্যাশিত হারে না বাড়ায় সংস্থাটি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে ও মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে। তবে এপ্রিলে আইএমএফ বলেছিল আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির হার কমে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামবে। এদিকে আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণ অনুমোদনের পরিমাণ আরও ৮০ কোটি ডলার বাড়িয়েছে। ফলে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫৫০ কোটি ডলার। এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ঋণ অনুমোদন করেছিল ৪৭০ কোটি ডলার। এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইএমএফের কাছে চলমান ঋণ কর্মসূচি আরও ১০০ কোটি ডলার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। চলমান ঋণ কর্মসূচির মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য আইএমএফ ১৩৪ কোটি ডলার ছাড় করার প্রস্তাব সোমবার রাতে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদে অনুমোদন করেছে। অচিরেই এ অর্থ ছাড় করা হবে।
আইএমএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। এর আগে এপ্রিলে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে বলেছিল, আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৬ শতাংশ। পাশাপাশি সোমবারের বিবৃতিতে বলেছে, আগামী অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াবে সাড়ে ৬ শতাংশে। এপ্রিলে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুক প্রতিবেদনে বলেছিল, মূল্যস্ফীতি হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্যও আইএমএফ প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে। এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংক আরও কম প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
আইএমএফ বলেছে, গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের পর দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ফলে রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হয়। ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে পর্যায়ক্রমে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। তবে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান বাধা এবং ব্যাংকিং খাতে চাপ বাড়ার কারণে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আগের চেয়ে কমেছে। যে কারণে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো ও মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস বাড়ানো হয়েছে। যদিও এখন মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় নীতি, কার্যক্রম ও সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসাবে মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এবং বাজেটে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আইএমএফ। কঠিন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে এবং বর্ধিত নিম্নমুখী ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচিসংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রমের অগ্রগতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সন্তোষজনক। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, ঝুঁকিগ্রস্ত মানুষকে রক্ষা করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশবান্ধব টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সংস্কার এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে আইএমএফ।
