Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রাজধানীতে সক্রিয় ১৫ কিশোর গ্যাংয়ের ৪৭৭ সদস্য

বিচারাধীন ৫১ মামলা, তদন্তাধীন দুটি * নিষ্পত্তি ১১টির মধ্যে ১০টিতে খালাস ও অব্যাহতি আসামিরা, সাজা মাত্র একটিতে

মহিউদ্দিন খান রিফাত

মহিউদ্দিন খান রিফাত

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীতে সক্রিয় ১৫ কিশোর গ্যাংয়ের ৪৭৭ সদস্য

প্রতীকী ছবি

রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমেনি এখনো। অন্তত ১৫টি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। এ গ্যাংয়ের সদস্যরা সংঘবদ্ধভাবে মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া ঢাকার আদালতে ২০২০ সালের জানুয়ারির পর থেকে হওয়া ৬৬ মামলার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫১টি মামলা বিচারাধীন। নিষ্পত্তি হওয়া ১১টি মামলার মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র একটিতে। বাকি ১০টি মামলায় আসামিরা খালাস ও অব্যাহতি পেয়েছে। পুলিশ ও আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মোহাম্মদপুরের দুর্গা মন্দির গলি এলাকায় ১৭ মে রাতে নূর ইসলাম নামে এক তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এবং তার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এছাড়াও হাতিরঝিল, হাজারীবাগ, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ মহড়া দিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ১৫টি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা ৪৭৭ জন। এর মধ্যে তেজগাঁও জোনে ১০ গ্যাংয়ে ১৬৫ সদস্য, লালবাগ জোনে দুটি গ্রুপে ৪১ সদস্য, মতিঝিল জোনে দুটি গ্রুপে ৩৭ সদস্য ও উত্তরায় একটি গ্রুপে ৮৯ সদস্য রয়েছে।

২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি উত্তরায় স্কুলছাত্র আদনান কবিরকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে ‘ডিসকো বয়েজ’ ও ‘বিগ বস’ নামের দুটি কিশোর গ্যাং জড়িত ছিল। আদনানের মৃত্যুর পর থেকে সারা দেশে আলোচনায় আসে কিশোর গ্যাং। এর আগে কিশোর গ্যাংয়ের এসব কর্মকাণ্ড মেয়েদের হয়রানি ও চাঁদাবাজির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীকালে মাদক পাচার ও খুনের সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর থেকে সমাজে কিশোর গ্যাংয়ের আতঙ্ক তৈরি হয়।

সূত্র জানায়, দেশে কিশোর গ্যাংয়ের সহিংসতা ১৯৯০ সালের দিকে শুরু হয়েছিল, তবে এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান ছিল না। ২০২৪ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ আমলে রাজধানীর আটটি ক্রাইম বিভাগে অন্তত ৮০ কিশোর গ্যাং সক্রিয় ছিল। এরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মাদক কারবার, পাড়া-মহল্লায় মারামারি, দখল, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধ কার্যক্রম চালিয়েছে সরাসরি জড়িত হয়ে। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, কিশোর গ্যাং যারা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদেরকে আমরা আইনের আওতা নিয়ে আসছি। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। 

বিচারাধীন মামলার হালচাল : সূত্রাপুরের বাসিন্দা আলাউদ্দিন খন্দকারের ছেলে আরিফ খন্দকারের (১৩) ওপর ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট হামলা চালানো হয়। পরে এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। বর্তমানে ঢাকার নারী শিশু-১ আদালতে এ মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। আদালত সূত্র জানায়, ঢাকার বিভিন্ন থানায় কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত ৬৬ মামলা করা হয়। এর মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ৬২ মামলায়, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে দুটি মামলায় এবং তদন্তাধীন রয়েছে দুটি মামলা। আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৫১ মামলা। আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে ১১টি মামলা। এর মধ্যে ১০টি মামলায় আসামিরা খালাস ও অব্যাহতি পেয়েছে। সাজা হয়েছে একটি মামলায়। বিচারাধীন মামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এমন অধিকাংশ মামলাই সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আটকে আছে। নিয়মিত সাক্ষী না আসার কারণে এসব মামলায় আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী যুগান্তরকে বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের অধিকাংশ মামলা বেইলেবল। যার কারণে দীর্ঘ সময় তাদের আটকে রাখা যায় না। অনেক সময় তাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ার কারণে জামিন হয়ে যায়। এসব মামলায় অনেক সময় আদালতে পাবলিক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসে না। যার ফলে বিচার আটকে থাকে। শিশুদের জন্য আলাদা আদালত করা উচিত। শুধু নারী ও শিশু নয়, শিশুদের জন্য আলাদা আদালত হলে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ যুগান্তরকে বলেন, কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াই শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার দায়িত্ব নয়। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজকে একত্রে কাজ করতে হবে।


Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম