বৃক্ষমেলা উদ্বোধন
প্লাস্টিক বর্জনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
বাসস
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পরিবেশ সুরক্ষা ও দূষণ রোধে প্লাস্টিক বর্জন করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ‘প্লাস্টিক পরিবেশের বিষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর সব প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। বিশ্বে প্রতিদিন মানুষ বাড়ছে বাংলাদেশেও বাড়ছে, এর সঙ্গে বাড়ছে জনপ্রতি প্লাস্টিকের ব্যবহার। আসুন আমরা এ বিষয়ে সচেতন হই এবং এখন থেকে মনে মনে ঠিক করি প্লাস্টিক বর্জন করব।
বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০২৫ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
পরিবেশ সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জীবন বাঁচাতে হলে পরিবেশ বাঁচাতে হবে। পরিবেশ ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করতে পারলে আমরা সুন্দর পৃথিবী উপভোগ করতে পারব। তিনি বলেন, আজকের পৃথিবী নানা রকমের সংকটের মুখে রয়েছে। যেমন-যুদ্ধবিগ্রহ, প্রযুক্তির প্রসার ও অপব্যবহার আমাদের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ এখনো অনেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারছি না, তা হলো প্রকৃতির বিধ্বংসী রূপ। এটা প্রকৃতির দোষ না, আমাদের দোষ। আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার কথা, সেটা না করে উলটো দিকে চলছি। মানুষ প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি এর ব্যবহার বন্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিক যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে সপ্তাহে অন্তত একটা দিন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জন করে, তাহলে ক্রমান্বয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে। কিন্তু এর জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত লাগবে। সিদ্ধান্ত ছাড়া কঠিন এ পথ আগানো যাবে না। তিনি বলেন, প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক মতো না থাকায় পৃথিবীর জলাশয়গুলো প্লাস্টিকে ছেয়ে গেছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়েছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে তিনি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও নতুন কর্মোদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, প্লাস্টিক এমন এক জিনিস যার জন্ম আছে, মৃত্যু নেই। প্লাস্টিক আমাদের ধ্বংস করে দেবে। দৈনন্দিন জীবনযাপন আমরা বদলাতে না পারি তাহলে প্লাস্টিক দূষণের এ যুদ্ধে আমাদের পরাজয় অবধারিত। জলবায়ু সংকট ও দূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান। দূষণ রোধে শুধু পলিথিন বর্জন নয়, পলিথিন উৎপাদন বন্ধ করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। উৎপাদন বন্ধ করতে পারলে পলিথিন বর্জনের বিষয়টা আর থাকে না। পলিথিন ছাড়া পৃথিবী অচল নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সরকারি অফিসগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি কীভাবে জীবনযাপন করব, সেটি আসলে নিজের ওপর নির্ভর করে। তাই দৈনন্দিন জীবনযাপনে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করতে পারলে এ নির্দেশ কোনো কাজে আসবে না।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দৈনন্দিন জীবনযাপনে (লাইফস্টাইল) পরিবর্তন ছাড়া সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয় অবধারিত। পরিবেশ সুরক্ষায় বর্তমান তরুণ প্রজন্ম অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানস্থলে একটি সোনালু গাছ লাগিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বৃক্ষরোপণ অভিযানের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
