Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: মাগুরা-১

ধানের শীষ চান চারজন জামায়াতের একক প্রার্থী

Icon

আবু বাসার আখন্দ, মাগুরা

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ধানের শীষ চান চারজন জামায়াতের একক প্রার্থী

ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাগুরার রাজনৈতিক দলগুলো সরব হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন জেলার সংসদীয় দুটি আসনেই সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। নীতিনির্ধারণী মহল এবং সম্ভাব্য নির্বাচনি বোর্ডের নজর কাড়তে একক উদ্যোগসহ দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা চলাচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তবে এই দলগুলো ছাড়া অন্যান্য দলের তৎপরতা এই দুই আসনে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

মাগুরা-১ আসন : মাগুরা পৌরসভা, সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে সংসদীয় এ আসনটি গঠিত। বিগত ১২টি নির্বাচনের মধ্যে বিএনপি প্রার্থী মেজর জেনারেল মজিদ উল হক ৩ বার (৭৯, ৯১ ও ৯৬র ১৫ ফেব্রুয়ারি) এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী মেজর জেনারেল এমএ মতিন ২ বার (৮৬ ও ৮৮) এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। বাকি ৭টি নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। এর মধ্যে ৭৩-এর প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী সোহরাব হোসেন এবং ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পরপর ৪ বার নির্বাচিত হন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাক্তার সিরাজুল আকবর। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নৌকা মার্কা নিয়ে বিজয়ী হন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পান মাগুরা জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খান। কিন্তু নির্বাচনের আগেই নাশকতার মামলায় তাকে কারান্তরীণ রেখে নির্বাচিত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর।

আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন কারা নির্যাতিত বিএনপি নেতা মনোয়ার হোসেন খান। বরাবরের মতোই দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা প্রদান এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি নিজের জনসমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে ২৪-এর জুলাই আন্দোলনে মাগুরায় নিহত এবং আহতদের পরিবারকে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আর্থিক ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। নিজের পরিচ্ছন্ন ইমেজের কারণে আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মনোয়ার হোসেন খান।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলি আহমেদও এ আসনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে দলের সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি নেতাকর্মী, সমর্থকদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে মাগুরার রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও বেশকিছু নতুন মুখের পদচারণা দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত মেজর জেনারেল মজিদ উল হকের মেয়ে ডাক্তার সিমিন আকতার অনজু। তিনবার বাবার দখলে থাকা আসনটিতে মনোনয়ন পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রাভা হেলথের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. সিমিন। এছাড়া সাবেক মন্ত্রী এম মজিদ উল হকের সহকারী একান্ত সচিব শামসুল আলম, শ্রীপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বদরুল আলম হিরো দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তবে মনোনয়ন যিনিই পান দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন বলেও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জানিয়েছেন।

মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘সব সময় দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। এটি আমার পরিচয়। বিগত নির্বাচনে আমাকে হারাতে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সব শক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যায়ভাবে জেলে আটকে রেখেও তাদের আশঙ্কা ছিল আমি জিতে যাব বিধায় রাতে ভোট কেটে নেওয়ার পরও দিনে বিএনপির ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেয়নি। মনোনয়ন পেলে সব শ্রেণির মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে অতীতের জবাব দেবে এটা নিশ্চিত।’

অন্যদিকে নিজের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলি আহমেদ বলেন, ‘সব কিছুই নির্ভর করছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও নির্বাচনি বোর্ডের ওপর। দলের পক্ষ থেকে মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব।’ এদিকে ৫ আগস্টের স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা অভ্যন্তরীণ কোন্দল, গ্রুপিংসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়লেও মাগুরায় জামায়াতে ইসলামী সুশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় আমির ড. শফিককে নিয়ে মাগুরা শহরের নোমানী ময়দানে বিশাল জনসমাবেশের মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদের নজর কাড়তে সমর্থ হয়েছে দলটি। এ আসনে মাগুরা জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আবদুল মতিনকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দলীয় প্রার্থীর বিজয়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নিজেদের সাংগাঠনিক ভিত মজবুত এবং দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী অমুসলিম শাখা গঠন করে সংখ্যালঘু শ্রেণি এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটারদের সমর্থন পেতেও সংগঠনটির বিভিন্ন কর্মসূচি সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছে।

এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান বেশ সুদৃঢ়। বিগত বছরগুলোতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দিয়ে বিজয় লাভের মধ্যে দিয়ে নিজেদের সেই অবস্থানের জানান দিয়েছে দলটি। এ আসনে মাগুরা জেলা কমিটির সেক্রেটারি মাওলানা নাজিরুল ইসলাম প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হোসেন এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে জেলা-উপজেলা কমিটি গঠন এবং দলীয় প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ নাকাল অবস্থা বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি।

ঘটনাপ্রবাহ: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম