Logo
Logo
×

শেষ পাতা

২৪ ঘণ্টায় আরও ২ মৃত্যু

জুনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড

Icon

জাহিদ হাসান

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জুনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড

প্রতীকী ছবি

আষাঢ়ের অনিয়মিত বৃষ্টিতে যত্রতত্র জলাবদ্ধতায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। দুজনই বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা। এ সময় ১৫৯ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আগের দিন বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য বিভাগ ২ মৃত্যু ও ১৯৫ জনের হাসপাতালে ভর্তির তথ্য দিয়েছিল। এ নিয়ে জুনের ২৭ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৮৭৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। মাসভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১০৫৫ জন, মারা যান ১৪ জন। ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি ৩৩৯ জন, মারা যান ৩ জন, মার্চে ভর্তি ৩১১ জন, মৃত্যু ৫, এপ্রিলে ভর্তি ৫০৪, মৃত্যু ২, মেতে ভর্তি ৬৪৪, মৃত্যু ১২ এবং জুনের প্রথম ২৭ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৯০ জন এবং ৫ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া চলতি বছরের মেতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৭৭৩ জন এবং মারা যান ৩ জন। এপ্রিলে ভর্তি হন ৭০১ জন, মারা যান ৭ জন, মার্চে ভর্তি ৩৩৬ জন, তবে কারও মৃত্যু হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি ৩৭৪ জন ও মৃত্যু ৩ জনের, জানুয়ারিতে ভর্তি ১১৬১ জন এবং ১০ জনের মৃত্যু হয়।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার যুগান্তরকে বলেন, এডিস মশার লার্ভার প্রাক-মৌসুম জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস অ্যাজিপ্টাই মশা এবং ঢাকার বাইরে এডিস অ্যালবোপিক্টাস নামক মশা বেশি দায়ী। ঢাকায় বহুতল ভবনে সবচেয়ে বেশি (৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ) এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগের বরগুনায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেশি দেখা যাচ্ছে। জ্বরের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৪৫ শতাংশের ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হচ্ছে।

ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রত্না দাস বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষিত বা জমা পানি এক বা দুদিন পর ফেলে দিতে হয়। কিন্তু অনিয়মিত বৃষ্টিপাতে অনেক জায়গায় পানি জমে থাকছে। উপকূলীয় অঞ্চলে অনেকে নির্ধারিত সময় পর পাত্রের জমা পানি ফেলে না দিয়ে পুনরায় ব্যবহার করছে। এতে সহজে এডিস মশার লার্ভা তৈরির অনকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্তরা বাড়িতে মশারি ব্যবহার করছেন না। এ কারণেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। মশার প্রকোপ বৃদ্ধির মধ্যেই ঈদের ছুটিতে অনেকে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। এতে ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগের বরগুনাসহ বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৫ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ছয়জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ছয়জন ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুজন রয়েছেন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৯ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর এ যাবত আট হাজার ১৬২ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।

বরিশালে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি : বরিশাল ব্যুরো জানায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশালে গেল ২৪ ঘণ্টায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। একই সময়ে জেলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৫ জন। বরিশালের ছয় জেলার মধ্যে ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। চলতি বছর বিভাগজুড়ে মোট আক্রান্ত ৪ হাজার ৩০৫ জনের মধ্যে বরগুনার বাসিন্দাই ২ হাজার ৬৩২ জন। বিভাগজুড়ে মারা যাওয়া ১১ জনের মধ্যে বরগুনার ৬ জন। এ তথ্য দিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, সরকারি হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হয়েছে তার চেয়েও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ অনেক রোগী বাসা বাড়িতেও চিকিৎসা নিয়ে থাকে। সেই সংখ্যা আমাদের কাছে নেই। সেই সংখ্যা থাকলে সবাই বুঝত ডেঙ্গু কত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম