ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: মাগুরা-২
বিএনপির নিতাই রায় ও কাজী কামাল, জামায়াতের বাকের
আবু বাসার আখন্দ, মাগুরা
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মাগুরার শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলা এবং সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাগুরা-২ সংসদীয় আসন। স্বাধীনতা-পরবর্তী জাতীয় সংসদের ১২টি নির্বাচনে এ আসন থেকে ৯ বার আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি তিনটি নির্বাচনে বিএনপি দুইবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ ও ২০০১) এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার (১৯৮৮) নির্বাচিত হন। পরিসংখ্যান বিবেচনায় আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত হলেও এবারের নির্বাচনি মাঠে তারা নেই। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির আলোচিত তিন এবং জামায়াতের এক প্রার্থী নির্বাচনি এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিজেদের ভূমিকা তুলে ধরছেন।
১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুর রশিদ বিশ্বাস নির্বাচিত হন। এ আসনে সর্বাধিক পাঁচবার নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার। তিনবার একই দলের অ্যাডভোকেট আছাদুজ্জামান। এর বাইরে ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের অধীনে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির সেই সময়কার প্রার্থী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কথিত রাতের ভোট এবং ভোটকেন্দ্র দখল সত্ত্বেও ওই নির্বাচনে তিনি প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পান। এবারও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আগামী দিনের নির্বাচনেও তার ওপর আস্থা রাখবেন বলে মনে করেন নিতাই রায় চৌধুরী।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতের ভোটের কাহিনির কারণে দেশের নির্বাচনব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। তবে তার আগ পর্যন্ত ১৯৯৪ সালে মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচনে ভোট কারচুপির জন্য বিএনপিও বেশ সমালোচিত। বহুল বিতর্কিত সেই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জিকিউ গ্রুপের কর্ণধার কাজী সালিমুল হক কামাল প্রয়াত সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট আছাদুজ্জামানের ছেলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট শফিকুজ্জামান বাচ্চুকে পরাজিত করে প্রথমবার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন তিনি। তবে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডভোকেট শফিকুজ্জামান বাচ্চুকে হারিয়েই মূলত কাজী কামাল আসনটিতে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করেন। সেসময় নির্বাচনি এলাকায় সড়ক যোগাযোগসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভোটারদের আস্থা অর্জনে সমর্থ হন তিনি। মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী সালিমুল হক কামাল ওয়ান-ইলেভেনের সময় দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাজা ভোগ করেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কারামুক্ত হয়ে তিনি নির্বাচনি এলাকা মহম্মদপুর ও শালিখায় স্মরণকালের ইতিহাসে বৃহৎ দুটি জনসভা করেছেন। ওই দুটি জনসভাকে ঘিরে নির্বাচনি এলাকার সাধারণ মানুষ এবং বিএনপির নেতাকর্মীরাও তার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন।
কাজী সালিমুল হক কামাল বলেন, দলের পুনর্গঠন এবং ৩১ দফা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। অতীতে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। এখন দলের পক্ষ থেকে আমাকে মনোনয়ন দিলে বরাবরের মতোই এলাকার মানুষের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ পাব।
এদিকে উল্লিখিত দুটি জনসভা সফল করতে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি দলের জেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিট পরিচালনায় ভূমিকা রেখে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। বিগত সরকারের সময় পুলিশি নির্যাতনের শিকার নয়ন মহম্মদপুর উপজেলার সন্তান। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। একইভাবে সরকার পতনের পর মাগুরা-২ নির্বাচনি এলাকা ছাড়াও জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসহায় ও দরিদ্র মানুষের প্রতি তিনি সহায়তার হাত আরও প্রসারিত করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সাম্প্রতিককালে ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সব শ্রেণির মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনিও এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। সে লক্ষ্যে আসনের মহম্মদপুর ও শালিখা এলাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। তবে মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হোক, দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করাই নিজেদের মূল্য লক্ষ্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন প্রার্থীরা।
যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন বলেন, জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকে প্রাধান্য না দিয়ে অতীতে দলের কর্মীদের পাশে ছিলেন-এমন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে মানুষ উপকৃত হবে। দলীয় হাইকমান্ড আমার ওপর আস্থা রাখলে তা পূরণে শতভাগ সচেষ্ট থাকব। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসাবে জেলা কমিটির আমির এমবি বাকেরের নাম চূড়ান্ত করেছে দলটি। মাগুরার দুটি আসনের মধ্যে এ আসনটিতে জামায়াতের অধিকসংখ্যক ভোট রয়েছে। সে ভোটের সংখ্যা বৃদ্ধিতে তিনি নিয়মিত নির্বাচনি এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি মুফতি মোস্তফা কামালকে এ আসনে প্রার্থী হিসাবে চূড়ান্ত করেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং নতুন নিবন্ধন পাওয়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের সুনির্দিষ্ট নাম এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি।
