জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতি
মূল্যস্ফীতি কমেনি অর্জিত হচ্ছে না জিডিপির প্রবৃদ্ধি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মুদ্রানীতির মূল চারটি লক্ষ্যের মধ্যে দুটিতে সফল হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে এবং রিজার্ভ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির হার কমছে, তবে তা প্রত্যাশার তুলনায় বেশ কম। জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে জুলাইয়ের শেষদিকে আগামী অর্থবছরের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতির লক্ষ্যগুলোর অর্জন এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পর্যালোচনার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারিশ ও স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে মুদ্রানীতির কৌশল প্রণয়ন করা হবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের শর্ত দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এটি আইএমএফ-এর পরামর্শ। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির কৌশল প্রণয়ন করবে। ইতোমধ্যে গভর্নর একটি অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের মধ্যে নেমে আসতে পারে। তখন থেকে সুদের হার কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করেছে। এবার মুদ্রানীতি নিয়ে ঢাকার বাইরে দুই দফা বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রথম বৈঠক হবে সিলেটে। দ্বিতীয় বৈঠক রাজশাহীতে। গত বছর প্রথম বৈঠক করেছিল চট্টগ্রামে। ওইসব বৈঠকে স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, সমাজকর্মীদের মতামত নেওয়া হবে।
এছাড়া ঢাকায় বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে খসড়া মুদ্রানীতি তৈরি করা হবে। এটি পরবর্তী সময়ে মুদ্রানীতির কমিটির বৈঠকে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদসভায় অনুমোদনের মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত হবে। এর আগে চলতি মুদ্রানীতির লক্ষ্য ও অর্জনগুলোও পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। চলতি মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য ছিল ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, রিজার্ভ বাড়ানো, মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনা এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন।
এখন পর্যন্ত পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনমিয় হারে স্থিতিশীলতা এসেছে। আগে ডলারের দাম যেভাবে বেড়েছে, এখন তা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। ডলারের দাম এখন আর বাড়ছে না। তবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর ঋণ ছাড় হওয়া, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ার এবং আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের কারণে ডলারের দাম এখন কিছুটা কমেছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বিশ্বব্যাপী পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে দাম বেড়ে যায়। বাংলাদেশে বেশি দামে পণ্য আমদানি করতে গিয়ে আমদানি খরচও বেড়ে যায়। এর প্রভাবে দেশে ডলারের দাম বেড়ে যায়। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। ২০২৩ সালের শেষদিকে ডলারের দাম ব্যাংকগুলোয় সর্বোচ্চ ১৩২ টাকায় উঠেছিল। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ডলারের দাম ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু ওই দামে ব্যাংকে ডলার মেলেনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডলার পাচার বন্ধ হয়। এতে ডলারের দামে স্থিতিশীলতাও আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক দফায় এর দাম বাড়িয়ে এখন বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। বাজারের ওপর ছাড়ার আগে ডলারের দাম ১২২ টাকা ছিল। বাজারের ওপর ছাড়ার পর তা এক টাকা বেড়ে ১২৩ টাকায় ওঠে। বর্তমানে এর দাম কামে ১২২ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে ৯০ পয়সায় ওঠানামা করছে। বর্তমানে ডলারের দাম স্থিতিশীল থাকা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় সরকারের ঋণের জোগান দেওয়া বন্ধ করায় এবং পণ্যমূল্য কমানোর ফলে মূল্যস্ফীতির হারও কমতে শুরু করেছে। গত মাসে এ হার কমে ৯ দশমিক ০৫ শতাংশে নামে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত জুলাইয়ে এ হার ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল।
চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে সাড়ে ৪ শতাংশ নির্ধারণ করে। কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ফলে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ কমিয়ে আনতে সরকার সক্ষম হয়েছে। এর প্রধান কারণ ব্যাংকের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার বহুলাংশে কমানো হয়েছে। পাশাপাশি হুন্ডির দাপট কমার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। এছাড়াও রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক ঋণের প্রবাহও বেড়েছে। এসব কারণে রিজার্ভ বাড়ছে। বর্তমানে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আড়াই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি অর্থবছরের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ, যা এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অর্ধেকেরও কম। তবে মে ও জুন মিলে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।
গত অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়েছিল ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ।
