Logo
Logo
×

শেষ পাতা

অবহেলায় বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর

Icon

শাহজাহান খান, বাবুগঞ্জ (বরিশাল)

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অবহেলায় বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের রহিমগঞ্জ গ্রামে ২০০৮ সালে নির্মাণ করা হয় গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বরিশাল জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে জাদুঘরটি। কিন্তু এটি দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। এর কারণ হিসাবে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, নির্মাণের দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও সরকারি সহযোগিতার অভাবে পূর্ণতা পায়নি জাদুঘরটি। এটির এখন বেহালদশা। জাদুঘরটি সংস্কার করে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

জাদুঘরটিতে আকৃষ্ট করার মতো মুক্তিযুদ্ধের তেমন কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। গ্রন্থাগারে নেই পর্যাপ্ত বই। জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে আসবাবপত্র। দর্শনার্থীদের অভিযোগ, জাদুঘরটির বাইরে জঙ্গলে ঘেরা, ভেতরেও তেমন কিছু নেই।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে জাদুঘরে ঢোকার আগেই জানা গেল, সেখানকার অযত্ন-অবহেলার কথা। জাদুঘরের ভেতরে গিয়ে সেসবের সত্যতা মিলেছে। গত তিন বছর ধরে কেয়ারটেকার নেই। সাহিত্য, প্রযুক্তি-বিজ্ঞান, রচনাবলীসহ আরও কিছু শেলফ ভাঙাচোরা এবং খালি পড়ে আছে। একইসঙ্গে জাদুঘরের ভেতরে ড্যামেজ হয়ে পানি পড়ছে। কক্ষের দরজা পুরোটাই ভাঙা। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর হলেও সেখানে তার বীরত্বগাঁথা ও জীবনী সংক্রান্ত কোনো বই পাওয়া যায়নি।

বীরশ্রেষ্ঠর আত্মীয় ও একই গ্রামের বাসিন্দা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, আমি সহকারী লাইব্রেরিয়ান হিসাবে অস্থায়ীভাবে বিনা পারিশ্রমিকে দুই বছর দায়িত্ব পালন করি। এরপর একজন লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেওয়া হলে প্রায় তিন বছর থাকার পর চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। এরপর একজন কেয়ারটেকার দেখাশোনা করেন।

তিনি ২০২২ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে বর্তমানে দুটি পদই শূন্য। কোনো দর্শনার্থী এলে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। এ অবস্থায় বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মনজুরুল ইসলাম বাচ্চু এবং এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সাহসী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয়ভাবে যতটা সম্মানের সঙ্গে আছেন, নিজ জন্মভূমিতে ঠিক ততোটাই অবহেলার শিকার। বীরশ্রেষ্ঠর একমাত্র জীবিত ভাই মনজুরুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পারিনি। জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধকালীন ছবি ও ভিডিও আর্কাইভ থাকলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ইতিহাস জানার সুযোগ পেত। আগে এখানে মোটামুটি জনসমাগম হলেও এখন আর নেই।

বাবুগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার বীরপ্রতীক রতন শরীফ বলেন, এটি সত্যিই একটি কষ্টদায়ক বিষয়। যাদের রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি, তাদের স্মৃতি ও ইতিহাসকে আমরা অবহেলা করে চলেছি। এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে হলে আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের এই মহান বীরসহ সব মুক্তিযোদ্ধার প্রতি যথাযথ সম্মান দিতে হবে। তাদের চেতনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। এই মহান বীরদের প্রতি এমন অযত্ন-অবহেলা কখনোই কাম্য নয়।

সম্প্রতি গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে গিয়ে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, বাবুগঞ্জের সন্তান ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, শুধু বাবুগঞ্জ নয়, সারা দেশের যে কোনো জায়গায় এ রকম ইতিহাস-ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের জানার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি মুহাম্মদ আমানুল্লাহ খান নোমান বলেন, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানের নামে একটি জাদুঘর করলেও সেখানে দর্শনার্থীসহ সাধারণ জনগণের যাওয়া-আসার সুবিধার জন্য জেলার কোথাও কোনো পথনির্দেশক নেই। বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর নামে বরিশালের বাবুগঞ্জের একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান রয়েছেন এটি এখনকার প্রজন্ম ভালোভাবে জানে বলে আমার মনে হয় না। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ, তারা যেন এ বিষয়ে অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম