ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: নাটোর-৪
মাঠে বিএনপির আজিজ জামায়াতের হাকিম
মো. শহীদুল হক সরকার, নাটোর
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভোটের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও নাটোর জেলার চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচনি উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-৪ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগাম প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডে বিভিন্ন সংগঠনের নামে সভা-সমাবেশে তারা অংশ নিচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের পারিবারিক নানা অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন তারা।
দুটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২০ হাজার ৪৭০ জন। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ ও জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের জয়েন্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল হাকিম। স্বাধীনতার পর থেকে আসনটি বেশির ভাগ সময় আওয়ামী লীগের সাবেক জেলা সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের দখলে ছিল। মাঝে তিনবার বিএনপি ও দুবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আব্দুল কুদ্দুস ছয়বার নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২৩ সালে তিনি মারা গেলে উপনির্বাচনে একই দলের ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী নির্বাচিত হন। মাঠে-ময়দানে দেখা না গেলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ডা. সিদ্দিকুরের বেশ সরব উপস্থিতি রয়েছে। এ আসনে বিএনপি থেকে অধ্যাপক মোজাম্মেল হক দুইবার এবং অধ্যক্ষ একরামুল আলম একবার নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি বলে আজিজের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এরপর থেকে এ আসনের দুই উপজেলাজুড়ে সব সভা-সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে আজিজ নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন।
জেলা বিএনপি ঘোষিত নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে আব্দুল আজিজকে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক করায় তিনি ও তার অনুসারীরা প্রচারণায় নতুন মাত্রা পেয়েছেন। সাধারণ নেতাকর্মীরা মনে করছেন, তার মতো এত সক্রিয়ভাবে মাঠে বিএনপির আর কোনো প্রার্থীও নেই। তবে তিনি ছাড়া এখানে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির সাবেক সংসদ-সদস্য প্রয়াত অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের ছেলে সদ্যঘোষিত জেলা বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার আবু হেনা মোস্তফা কামাল রঞ্জু, বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক শামসুল ইসলাম রনি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জন গমেজ। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এখানে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা জামায়াতের জয়েন্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল হাকিমকে। তিনি বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। বেশকিছু দিন তিনি উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই উপজেলাজুড়ে তিনিও দীর্ঘদিন থেকে সক্রিয়ভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এবি পার্টির পক্ষ থেকে দলের নাটোর জেলা শাখার সাবেক সমন্বয়ক অধ্যক্ষ ড. আব্দুল গাফফার মল্লিক এবং এনসিপির পক্ষ থেকে ডা. জাহিদুল ইসলাম মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে প্রকাশ্যে মাঠে ময়দানে দেখা যায় না।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আব্দুল আজিজ যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনে ১৭ বছর মানুষের মৌলিক অধিকার ছিল না। স্বাধীনতা সুরক্ষা, গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে বিএনপি দীর্ঘ আন্দোলন করেছে। মানুষের মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরেছে। এর প্রতিদান হিসাবে মানুষ বিএনপিকেই ভোট দেবে। ১৭ বছর সব আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের নিয়ে অংশ নিয়েছি। দল তাকে ২০১৮ সালে মনোনয়ন দিয়েছিল, এবার জেলা বিএনপির ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক পদ দিয়েছে। আগামী দিনে তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন। সাধারণ ভোটাররাও তাকে নির্বাচিত করবেন বলে শতভাগ বিশ্বাস রাখি।
বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক শামসুল ইসলাম রনি বলেছেন, এ আসনের দুই উপজেলার মধ্যে তার উপজেলা বড়াইগ্রামে ৭০ হাজার ভোটার বেশি। বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তিনিই বেশি সক্রিয় ছিলেন, তাই তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের বিজয় সুনিশ্চিত হবে।
জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল হাকিম যুগান্তরকে বলেন, দুর্নীতি, দখল, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জামায়াতের নেতাকর্মীরা জড়িত নয়। করোনা থেকে শুরু করে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে তারা মানুষের পাশে থেকেছেন। দেশের মানুষ আগামী দিনে বৈষম্যহীন একটা রাষ্ট্র দেখতে চায়, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে এমন সমাজ উপহার দিতে সক্ষম। নির্বাচিত হলে যুবকদের কর্মসংস্থান, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি চলনবিল অঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন।
