স্ত্রী-সন্তানসহ হোটেলে প্রবাসীর লাশ
জমি ও টাকার হিসাব নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে খুন!
সন্দেহভাজন হিসাবে প্রবাসী মনিরের বাড়ির কেয়ারটেকার রফিকুল গ্রেফতার * লাশের দাফন সম্পন্ন, থানায় মামলা
ইমন রহমান
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর মগবাজারের একটি হোটেলে স্ত্রী ও সন্তানসহ প্রবাসী মনির হোসেনের লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য এখনো ভেদ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে নিহতদের স্বজনরা দাবি করেছেন, সৌদি প্রবাসী মনির হোসেনের সঙ্গে টাকা-পয়সা ও জমিজমার হিসাবসংক্রান্ত বিরোধের জেরেই এ খুন। হোটেলে অসুস্থ হয়ে জীবন রক্ষার্থে তাদের বাড়ির যে কেয়ারটেকারকে ডেকে আনেন প্রবাসী মনির হোসেন তার পরিকল্পনায়ই নির্মম এ হত্যার ঘটনা ঘটে বলে সন্দেহ স্বজনদের।
এদিকে মঙ্গলবার মনিরের বড় ভাই নুরুল আমিন রমনা থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার পর সন্দেহভাজন হিসাবে মনির হোসেনের কেরানীগঞ্জের বাড়ির কেয়ারটেকার ও দূরসম্পর্কের চাচা রফিকুল ইসলামকে (৬০) আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া মঙ্গলবার সকালে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, ‘নিহতের বড় ভাই ইতালি থেকে দেশে এসে মঙ্গলবার হত্যা মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-১। মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সন্দেহভাজন হিসাবে মনির হোসেনের বাড়ির কেয়ারটেকার রফিকুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হলে বিচারক দুই দিন মঞ্জুর করেন।’
উল্লেখ্য, ঘটনার পর থেকেই পুলিশের সন্দেহে ছিলেন রফিকুল। তাকে রোববার হেফাজতে নিয়ে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে রফিকুলের মেয়ে ও মেয়ের জামাইকেও কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার কথার সঙ্গে বাস্তবের বেশ কিছু ফাঁক পাচ্ছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
সূত্র বলছে, ১৯৯৮ সালে সৌদি যান মনির হোসেন। সেখানে ঠিকাদারির ব্যবসা করে বিপুল টাকার মালিক হন। ২০০৬ সাল থেকে প্রবাসী মনির হোসেনের জমিজমা ও টাকা-পয়সার হিসাব রাখছেন দূরসম্পর্কের চাচা রফিকুল। রফিকুলের মাধ্যমেই বাংলাদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন মনির হোসেন। ২০১২ সালে কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে জমিসহ ৩ ও ৫ তলা ভবনের দুটি বাড়ি কেনেন মনির। ওই বাড়ি কেনার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেন রফিকুল। ৯০ লাখ টাকায় জমি কেনার পরও বিভিন্ন ফন্দি এঁটে অতিরিক্ত ১৫ লাখ টাকা বাগিয়ে নেন রফিকুল। এছাড়া হাসনাবাদের দুটি বাড়ির ভাড়ার টাকা, গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে জমিজমা কেনা ও দূরপাল্লার ৫টি বাসের ব্যবসার টাকার সব হিসাব রাখতেন রফিকুল।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল স্বীকার করেছে, মনির হোসেন কোটি কোটি টাকা পাঠাতেন তার অ্যাকাউন্টে। তবে এসব টাকা সঠিকভাবে ব্যয় করেছেন-এমন দাবি রফিকুলের।
মনিরের বড় ভাই ইতালি প্রবাসী নুরুল আমিন মানিক মামলার এজাহারে দাবি করেছেন, রফিকুলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার ফলে প্রবাস থেকে মনির রফিকুলের মাধ্যমে ঢাকাসহ গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় জমিজমা ও বাড়ি কেনে। সেসব কিছু দেখাশোনা করত রফিকুল। কিছুদিন আগে জমিজমা ও বাড়ির টাকা-পয়সার হিসাব নিয়ে মনিরের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ হয় রফিকুলের।
তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমার ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য অজ্ঞাত ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে হোটেলে তাদের খাবারে বিষ বা বিষজাতীয় পদার্থ মিশিয়ে অথবা অন্য কোনো উপায়ে ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও ভাতিজাকে হত্যা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার মনির হোসেন তার প্রতিবন্ধী ছেলে আরাফাতকে চিকিৎসা করাতে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন। তারা রাজধানীর মগবাজারের এসপিআরসি হাসপাতালে যান। এ সময় সঙ্গে ছিলেন কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলাম। তবে সেখানে ডাক্তারের সিরিয়াল না পাওয়ায় পরদিন ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মগবাজার ‘সুইট স্লিপ’ আবাসিক হোটেলের ১০৩ নম্বর রুমে ওঠেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মনিরের স্ত্রী ও ছেলের জন্য রফিকুল ভর্তা-ভাত রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে হোটেলে নিয়ে আসে। পরে রফিকুল বাসায় চলে যায়। রাতে ওই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন মনির ও তার স্ত্রী-সন্তান। রোববার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে মনির হোসেন (৪৮), তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না (৩৮) ও তাদের সন্তান নাইম হোসেন (১৮) মারা যান।
