দোহারে বিএনপি নেতাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা
প্রতিবাদে বিক্ষোভ
যুগান্তর প্রতিবেদন, নবাবগঞ্জ (ঢাকা)
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দোহারে নিহত বিএনপি নেতার স্বজনদের আহাজারি। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকার দোহারে হারুন অর রশিদ ওরফে হারুন মাস্টার (৬৫) নামে এক বিএনপি নেতাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার সকালে নামাজ পড়ে বাড়ির পাশে পদ্মা নদীর ধারে হাঁটতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করে। স্বজনরা বলছেন, দলীয় কোন্দল ও বালু ব্যবসার দ্বন্দ্বে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তিনি। নিহত হারুন বাহ্রা গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি দোহারের নয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ১৭ দিন পর তার শিক্ষকতা থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। এদিকে বিএনপি নেতাকে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সকাল ৬টার দিকে ধোয়াইর বাজারের পাশে পদ্মার বাঁধের রাস্তায় হাঁটছিলেন হারুন মাস্টার। এ সময় পেছন দিক থেকে দুটি মোটরসাইকেলে ৫ যুবক এসে তাকে লক্ষ্য করে ৪টি গুলি করে। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে শরীরে তিনটি ছুরিকাঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী সকালে ধোয়াইর বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে নদীর পাড়ে হারুন মাস্টারকে পড়ে থাকতে দেখে লোকজনকে খবর দেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দোহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে হারুন মাস্টারকে গুলি করে হত্যার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হাসপাতালে ভিড় করেন। তারা তাৎক্ষণিক এ হত্যার বিচার ও খুনিদের খুঁজে বের করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
ঘটনার পরপরই দোহার থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ বিষয়ে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান আলী বলেন, হারুন মাস্টারের শরীরে ৪টি গুলি ও ধারালো অস্ত্রের তিনটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করতে কোপানো হয়ে থাকতে পারে। ওসি বলেন, অপরাধীদের খুঁজে বের করতে র্যাব, পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।
খুনের ব্যাপারে জানতে চাইলে হারুনের স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা নাহিদা পারভীন স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, নামাজ শেষে ফোনে কথা বলতে বলতে তার স্বামী বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পরেই তিনি এই দুঃসংবাদ পান।
ছোট ভাই আব্দুল মান্নান বলেন, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নয়াবাড়ী থেকে চেয়ারম্যানপ্রার্থী হওয়ার কথা ছিল ভাইয়ের। তাছাড়া এ অঞ্চলের কিছু মাটি ব্যবসায়ীর অন্যায় কাজকে আমার ভাই সমর্থন করেননি। তাই তাকে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।
এদিকে বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কিছুদিন ধরে নয়াবাড়ীতে বিএনপির দুটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই জেরে এ ঘটনা ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া স্থানীয় বালু ব্যবসা নিয়েও টানাপোড়েন ছিল বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
নয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক মেম্বার বলেন, হারুন মাস্টারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালোই ছিল। তবে কে বা করা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা বলতে পারছি না। তবে কিছুদিন আগে হারুন মাস্টারের ছেলে শাওনের ফেসবুকে একটা পোস্ট দেওয়া নিয়ে ধোয়াইর বাজারে কথা কাটাকাটির জেরে একটি পক্ষের সঙ্গে পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানি।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক বলেন, নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর কোনো ভাষা নেই। সন্ত্রাসীচক্রকে খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
