Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মজুত করছে শত শত টন

চালের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে করপোরেট কারসাজি

Icon

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চালের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে করপোরেট কারসাজি

ছবি: সংগৃহীত

চালের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে করপোরেট হাউজগুলোর কারসাজি। করপোরেট হাউজগুলো বিভিন্ন বড় বড় মোকাম থেকে শত শত টন চাল মজুত করছে। এ কারণে চট্টগ্রামে বেড়েই চলেছে চালের দাম। গরিবের মোটা চালের দামও কেজিপ্রতি ৬০ টাকার বেশি। নানা উদ্যোগের পরও চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং পাইকারি ও খুচরা দুই বাজারেই হু হু করে বাড়ছে দাম। পাইকারি বাজারে গত এক সপ্তাহে ৫০ কেজির বস্তায় ২৫০-৩০০ টাকা বেড়েছে। খুচরায় বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়া এবং বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মজুতের কারণে দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের চালের আড়তদাররা।

এদিকে বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেট করে চালের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ‘চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজ’। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। মানববন্ধনে যৌথভাবে অংশ নেয় চট্টগ্রাম কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), প্রাণ ও আইএসডিই বাংলাদেশ। তারা চালের দাম কমানোর দাবি জানান। পাশাপাশি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

চট্টগ্রামের চাল ব্যবসায়ীরা বলেন, চালের বাজারে অস্থিরতার পেছনে রয়েছে করপোরেট হাউজগুলোর ‘কালোহাত’। দেশে করপোরেট হাউজগুলো উৎপাদিত চালের বেশিরভাগ বিভিন্ন মোকাম থেকে কিনে নিচ্ছে। তারা ইচ্ছা হলেই সেই চাল বাজারে ছাড়ছে। না হলে মজুত করছে। এ কারণে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ১৫ দিন আগে যে মোটা চালের (স্বর্ণা) কেজি ৫১-৫২ টাকা ছিল তা এখন ৫৫-৬০ টাকা। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম ও বিআর-২৮) কেজি ৬২-৬৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০-৭২ টাকা। কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মাঝারি মানের চালের। কেজিপ্রতি মাঝারি মানের চালের দাম ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে চিকন চাল নাজিরশাইল ৮২ থেকে ৮৫ টাকা, মিনিকেট ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝারি মানের বিআর ২৮ ও ২৯ চাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা এবং গুটি, চায়না ইরিসহ মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। যা আগে প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত কম ছিল।

পাইকারি বাজারে বেড়েছে চালের দাম : নগরীর পাহাড়তলী-চাক্তাই চালপট্টি ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। চাক্তাই চালপট্টিতে পাইকারি বাজারে স্বর্ণা সিদ্ধ চাল প্রতি বস্তা ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ২ হাজার ৯০০ টাকা। নাজিরশাইল সিদ্ধ ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার টাকা। যা ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা। পাইজাম সিদ্ধ ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৯০০ টাকা। যা আগে ছিল ৩ হাজার ৭০০ টাকা। চিনিগুঁড়া চাল ৫ হাজার ৮০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মোটা সিদ্ধ চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৩০০ টাকা বেড়ে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। একইভাবে প্রতি বস্তায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে মানভেদে মিনিকেট আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা। দিনাজপুরী পাইজাম ৪ হাজার ১০০ থেকে ৪ হাজার ৩০০ টাকা। যা আগে ছিল ৩ হাজার ৯০০ টাকার কাছাকাছি। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ টাকার বেশি দামে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ী ও চালকল মালিক সমিতির নেতারা জানান, চট্টগ্রামে বড় কোনো চাল কল নেই। চট্টগ্রামে যা আছে তার বেশির ভাগই ছোট ছোট চালকল। এসব চাল কল চাল মজুত করে বাজারে প্রভাব ফেলার ক্ষমতা নেই। এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বড় করপোরেট হাউজগুলো। তারা চালকল মালিক বা মিলারদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ চাল কিনে নিচ্ছে। এরপর তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের মোড়ক দিয়ে বাজারজাত করছে। পাশাপাশি এসব চাল বাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে। একটি করপোরেট হাউজ একশটি বা তারও বেশি চালকলের সব চাল একসঙ্গে কিনে নিচ্ছে। দেশের চার-পাঁচটি করপোরেট হাউজ এভাবে বেশির ভাগ চাল কল থেকে একাই কিনে নেওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। করপোরেট হাউজগুলোর সঙ্গে টিকতে পারছেন না। এ কারণে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে করপোরেট হাউজগুলো।

খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামে চালের দামের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এত বড় মিল নেই। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মোকাম থেকে করপোরেট হাউজগুলো চাল কিনে মজুত করে রাখছে। এ কারণে চালের বাজারে সরাসরি প্রভাব পড়ছে। ফলে প্রতিদিনই চালের দাম বাড়ছে। প্রশাসনের উচিত করপোরেট হাউজগুলোর মজুত তদারকি করা। মজুত নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে চালের বাজার স্থিতিশীল হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম