Logo
Logo
×

শেষ পাতা

কুষ্টিয়ায় জুলাই পদযাত্রায় নাহিদ ইসলাম

গোলামি নয় আজাদি চাই আমরা

Icon

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গোলামি নয় আজাদি চাই আমরা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ সারারাত নির্যাতন-নিপীড়ন করে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা করেছিল। আমরা শহীদ আবরার ফাহাদের উত্তরসূরি। শহীদ আবরার থেকে শহীদ আবু সাইদ, শহীদ ইয়ামিন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাবো। আমরা ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আবরার ফাহাদের পথ ধরে লড়াই করছি। মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে জুলাই পদযাত্রার পথসভায় বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন। নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, আবার যদি কোনো রাজনৈতিক দল আধিপত্যবাদের গোলাম হতে চায়, আমরা তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবো। বাংলাদেশের জনগণ তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করবে। গোলামি নয়, আজাদি চাই আমরা। ভারতের গোলামি থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। আগামী দিনে বাংলাদেশ স্বাধীনভাবে, সার্বভৌমভাবে, মর্যাদার সঙ্গে দাঁড়াবে। আমরা আমাদের রাজনীতি, রাষ্ট্র বিনির্মাণ করবো। কুষ্টিয়ার আবরার ফাহাদ, কুষ্টিয়ার শহীদ ইয়ামিন আমাদের সেই শিক্ষা দিয়েছে। আমরা সেই আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করি, সেই চেতনাকে ধারণ করি।

তিনি আরও বলেন, যখন বাংলাদেশের মানুষ কথা বলতে পারতো না, দিল্লির আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতো না, তখন আবরার ফাহাদ আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল, আমাদের বন্দর নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিল, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়েছিল। সে সময় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারতো না। কথা বলা মাত্র নির্যাতন করা হতো, হত্যা করা হতো। সেই সময় আবরার ফাহাদ মুখ খুলেছিল। আমরা সেই শহীদ আবরার ফাহাদের পথ ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। নতুন সংবিধান, বিচার এবং সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত কুষ্টিয়াবাসীকে সেই সংগ্রাম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। শহীদ আবরার ও শহীদ ইয়ামিনের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষকে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ উপহার দিবো।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, মা রোকেয়া খাতুন, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সাইফুল্লাহ হায়দার, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সাঈদ লিয়ন, ডা. মাহমুদা আলম মিতু, মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, কেন্দ্রীয় সদস্য ফিহাদুর রহমান দিবস প্রমুখ। এ ছাড়া এনসিপির অঙ্গ সংগঠন যুব শক্তি ও শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের রায়ডাঙ্গা গ্রামের গোরস্থানে আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

সেখানে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দিল্লি না ঢাকা’ সেই স্লোগান উঠেছিল আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ মিছিল থেকে। আজকের এই দিনে আমরা আবরার ফাহাদকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আবরার ফাহাদ আমাদের যে পথ দেখিয়ে গেছে, এনসিপি সেই পথেই রাজনীতি করছে। আবরার বাংলাদেশপন্থী পথ, ভারতের আধিপত্যবাদ বিরোধী পথ, আগ্রাসন বিরোধী পথ দেখিয়ে গেছে। সে পথেই জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজনীতি করছে। সেই পথ ধরেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল।

পাবনা : পাবনা প্রতিনিধি জানান, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো গণ-অভ্যুত্থান ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম মিডিয়া, পুলিশ, আমলা, সেনাবাহিনী, সংবিধানের সংস্কার লাগবে। সংস্কারের মাধ্যমেই নতুন বাংলাদেশ গড়বো। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্কুল-কলেজের দেয়ালে আমাদের ছাত্ররা যে গ্রাফিতি এঁকেছিল, সেই গ্রাফিতির মাধ্যমেই নতুন সংবিধান লেখা হয়ে গেছে। সেসব গ্রাফিতির মাধ্যমেই ৫ আগস্ট-পরবর্তী মানুষের আকাঙ্ক্ষার কথা লেখা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো অনেক দাবি পূরণ থেকেই সরে এসেছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যাকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সোমবার রাত ১১টায় পাবনা শহরের শহীদ চত্বরে (পূর্বের ট্রাফিক মোড়) জুলাই পদযাত্রা শেষে এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। নাহিদ আরও বলেন, আমরা আগামীর সংবিধান রচনা করবো। সেই সংবিধানের মাধ্যমেই আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। ৩ আগস্ট নতুন সংবিধান ও বিচার সংস্কারের দাবিতে গণমানুষের মুক্তির ইতিহাস জাতির সামনে প্রস্তাব করবো। সে দিনে আসার আহ্বান রইলো।

দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের আকাশে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। নাম না বলে কোনো রাজনৈতিক দলকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমরা নাকি নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাই। নির্বাচন তারাই পিছিয়ে দিতে চায়, যারা সংস্কার পিছিয়ে দিচ্ছে। আপনারা সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের রব তুলে নির্বাচনবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। হাসনাত আব্দুল্লাহ আরো বলেন, ভারতের ষড়যন্ত্র ও মিডিয়ার ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। একটি দল আমাদের অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যারা বলছেন এই অভ্যুত্থানের আইনগত ভিত্তি নেই, তারা নতুন করে মুজিববাদের ঠিকাদারি নিয়েছে। আগামী ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে ‘চল চল ঢাকা চল’ কর্মসূচি থাকবে।

মেহেরপুর : মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ১৯৭১ সালে মেহেরপুর থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরি করে। তবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা সংবিধানের মাধ্যমে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেহেরপুর কলেজ মোড়ে অনুষ্ঠিত এক পথসভায় তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা নতুনভাবে রাষ্ট্রগঠনের সম্ভাবনা দেখছি।

আমরা চাই, মেহেরপুর থেকেই একটি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হোক- যা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা নির্ধারণ করবে। এর আগে শহীদ ডা. সামসুজ্জোহা পার্ক থেকে একটি পদযাত্রা বের হয়ে কলেজ মোড়ে এসে শেষ হয়। এর আগে কুষ্টিয়া থেকে পদযাত্রা শেষে মেহেরপুরের গাংনী বাজারেও এক পথসভায় বক্তব্য দেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম