Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মীর মশাররফ স্মৃতি পাঠাগার

ভালোবাসার টানে ১৫ বছর সেবা দিচ্ছেন সুফিয়া

অনাহারে দিন কাটে, তবুও ছেড়ে যাননি

Icon

এ এম জুবায়েদ রিপন, কুষ্টিয়া

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভালোবাসার টানে ১৫ বছর সেবা দিচ্ছেন সুফিয়া

কুষ্টিয়ায় মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও অডিটোরিয়াম পরিস্কার করছেন সুফিয়া খাতুন। ছবি: যুগান্তর

১৫ বছর আগে চাকরি শুরু করছি। তখন মাসে বেতন ছিল ১৫০০ টাকা। এখনও সেই ১৫০০ টাকাই। এই টাকায় সংসার চলে না, অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে। টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারি না। নাতিপুতিরা স্কুলে পড়ে, তাদেরও অনেক কষ্ট। লেখাপড়া করাতে খাতা-কলম জোটাতে পারি না। কাপড়চোপড় দিতে পারি না। তিনবেলা ভাত তাদের সামনে দিতে পারি না, মাছ গোশত তো দূরের কথা। অনেক কষ্টে, এক কথায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করি। তবুও কেবল মায়া ও ভালোবাসার টানে আমি এখানে পড়ে আছি। কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন প্রখ্যাত সাতিহ্যিক মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও অডিটোরিয়ামের পরিচ্ছন্ন কর্মী সুফিয়া খাতুন।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চাঁপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়া গ্রামের মৃত সুলতান আলী শেখের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। ৭ সদস্যের পরিবারের তিনিই একমাত্র উপার্জনকারী। এ অবস্থায় ছেলের চিকিৎসার জন্য তিনি সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।

লাহিনীপাড়া গ্রামেই কথা সাতিহ্যিক মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের অর্থায়নে সেখানে একটি স্মৃতি পাঠাগার ও অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে কোনো সরকারি অনুদান নেই। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ নিজস্ব ফান্ড থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে দুইজন নারীকে নিয়োগ দিয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কেয়ারটেকার, অন্যজন পরিচ্ছন্ন কর্মী। কেয়ারটেকারের দায়িত্বে থাকা সৈয়দা আশেকুন নাহার মীর মশাররফ হোসেনেরই বংশধর।

সুফিয়া খাতুন বলেন, ২৫ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। আমার একটা ছেলে, একটা মেয়ে। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেটার একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। আরেকটি নষ্ট হওয়ার পথে। সে কোনো কাজকর্ম করতে পারে না। যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করে তার চিকিৎসা করিয়েছি। এখন অর্থের অভাবে ওষুধও কিনতে পারি না, চিকিৎসাও করাতে পারি না। অসুস্থ ছেলের তিনটি ছেলে আছে। ছেলের জন্য প্রতি মাসে তিন হাজার টাকার ওষুধ লাগে। ডাক্তার বলেছেন অপারেশন করতে ১০ লাখ টাকা লাগবে। সরকার যদি একটু সহযোগিতা করে, তাহলে আমি ছেলে ও নাতিপুতিদের নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বাঁচতে পারি। অসুস্থ ছেলেটারও চিকিৎসা করাতে পারি।

তিনি বলেন, মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা বা ভাতার কার্ড কিছুই আমি পাইনি। খেয়ে না খেয়ে আমার দিন যায়। খাবার ও চিকিৎসার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমার ছেলে, বউমা ও নাতিপুতিরা ছেলের শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে।

সুফিয়া আরও বলেন, কত স্যারের কাছে কাগজপত্র নিয়ে গেলাম বেতনটা বাড়ানোর জন্য, কিন্তু স্যাররা তাকিয়েও দেখলো না। কত জনকে বললাম, আমার ছেলের একটা কার্ড করে দেন। কেউ তাকিয়েও দেখে না, সাহায্য করে না। গরিব বলে আমাদের কথা কেউ শোনে না।

কেয়ারটেকার সৈয়দা আশেকুন নাহার বলেন, সুফিয়া খাতুন ১৫ বছর ধরে ঝাড়ুদার পদে চাকরি করে। মাসে বেতন পান ১৫০০ টাকা। তার পরিবারে কর্ম করার আর কেউ নেই। এই টাকায় সংসার চলে না। তার ছেলেটাও অসুস্থ। সে আগে ভ্যান চালাতো, এখন কোনো কাজ করতে পারে না। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকার বা বিত্তবানরা সহযোগিতা করলে তারা উপকৃত হবে।

কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্রী বলেন, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও অডিটোরিয়ামের ঝাড়ুদার পদে কর্মরত সুফিয়া খাতুন ১৫০০ টাকা বেতন পান। এখন এই টাকায় কিছুই হয় না। তার বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে তার বেতন বাড়ানো হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম