জাতীয় নির্বাচন কবে তা আমি নিজেও জানি না: সিইসি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন কখন তা আমি নিজেও জানি না। দুই মাস আগে ভোটের তারিখসহ বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হবে। সেজন্য সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাই। মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সংগঠন ‘রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ (আরএফইডি) আয়োজিত ‘ফল উৎসব ও সাংবাদিক এক্সেস কার্ড প্রদান’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আরএফইডি’র সভাপতি কাজী জেবেলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমালের মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বক্তব্য দেন।
সিইসি বলেন, ‘বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসন ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলো সেই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সুযোগ।’ তিনি বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করেছি। যখন মানুষ সমালোচনা করে যে-রাতে ভোট হয়েছে, জালিয়াতি হয়েছে। সে জন্য প্রশাসন, পুলিশকে অপবাদ দেয়। তখন মনে কষ্ট পাই।’ ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সবাই মিলে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘এখন কেন পারব না? আমাদেরকে পারতেই হবে। আমাদের এই যে প্রশাসনের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে, এদের ভাবমূর্তি সিরিয়াসলি এফেক্টেড হয়েছে; পুলিশের ভাবমূর্তি সিরিয়াসলি এফেক্টেড হয়েছে; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি সিরিয়াসলি এফেক্টেড হয়েছে; এই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য এটাই হচ্ছে সুযোগ।’ তিনি বলেন, ‘যারা এই ইলেকশনের সঙ্গে জড়িত থাকবেন, তাদের কাছে করজোরে আবেদন জানাব, যে আপনারা মানুষের শ্রদ্ধা অর্জনের চেষ্টা করুন। যে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে সেটা থেকে আপনারা ওঠে আসুন। আমরা প্রমাণ করতে চাই যে আমরা পারি, সরকারি কর্মচারীরা পারে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পারে, যদি তারা সত্যিকার অর্থে আন্তরিক হয়।’
সিইসি বলেন, ‘যেদিন ভোটাররা একদম নিশ্চিন্তে, নিজস্ব উদ্যোগে, বিনা বাধায়, নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন, সেদিনই বলা যাবে যে- ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা যা কিছু করছি, তা আপনাদের (গণমাধ্যম কর্মীদের) মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আলাপের সময় দেখি উনি সব জানেন। ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপি’র সহযোগিতা সবকিছু জানেন। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিকভাবে পৌঁছাচ্ছে। এজন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই আমরা ১৫ বছর করেছি। এখন সময় এসেছে দায়িত্ব পালনের। এখন আমাদের বার্তা হবে-ভোট দিন, নাগরিক দায়িত্ব পালন করুন। এ দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘আমরা যার যার অবস্থান থেকে সুষ্ঠু সুন্দর গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন করার জন্য যার যার তরফ থেকে যে ভূমিকা সেটা সঠিকভাবে পালন করব।’
তাহমিদা আহমদ বলেন, ‘আমরা আমাদের দায়-দায়িত্বটা যদি পালন করি তাহলে একটা নির্বাচন খুব সুন্দর হবে।’ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের সবার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য উৎসব নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা। সেখানে আমরা যত বেশি মিডিয়ার সম্পৃক্ততা পাব ততই আমাদের জন্য ভালো হবে।’
গত তিন নির্বাচনকে ‘সুষ্ঠু’ বলা বিদেশি সংস্থাগুলোকে পর্যবেক্ষক চায় না ইসি : আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ বলা বিদেশি সংস্থাগুলোকে আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ করতে চায় না নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অভিজ্ঞ ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে এমন পর্যবেক্ষক সংস্থা আগামী নির্বাচনে কাজ করার সুযোগ পাবে। মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না। যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি নির্বাচন খুব সুন্দর নির্বাচন হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছে, তাদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখেশুনেই অনুমোদন দেব। যারা অভিজ্ঞ, ডিফেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজারভ করেছে তাদের নেব।’ বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ইইউকে অবজারভার হিসাবে কাজ করার জন্য বলেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এজন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এ পর্যন্ত বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কিনা-সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন উনারা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি; বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক (ভোটার এডুকেশন) কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি। ভোটার সচেতনতা, ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকার কথা জানিয়েছে।’ কানাডা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন প্রত্যাশা করছে জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভোটার নিবন্ধনে নারী ভোটার অন্তর্ভুক্তিতে তারা গুরুত্বারোপ করেছেন। এছাড়া পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়েও কানাডার হাইকমিশনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
এআইয়ের অপব্যবহার আটকাতে পাশে থাকবে কানাডা : সিইসি বলেন, মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা। কারণ, কানাডার গত বছরের নির্বাচনে এটাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের পরামর্শ আমরা চেয়েছি। এ বিষয়ে আমরাও বেশ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। আশা করি, বিভিন্ন দেশের মতো কানাডার পূর্ণ সহায়তা পাব। আমরা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কনফিডেন্ট। আমাদের প্রতিশ্রুতি জেনে কানাডার হাইকমিশনার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’
