জুলাই অভ্যুত্থান
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে ২০২৪ সালের ১০ জুলাই (বুধবার) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ রাজধানীর ২৫টিরও বেশি পয়েন্টে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন তারা। এছাড়া সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক, রেলপথ ও বিভিন্ন শহরে একই কর্মসূচি পালিত হয়। এতে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবার যানবাহন ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহণ ও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা জানান, একদফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। দুপুরের দিকে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করা হলে শিক্ষার্থীরা স্থায়ী সমাধানের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। একই দিন কোটা বহালের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চসহ একাধিক সংগঠন। সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করেন। এরপর বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ, চাঁনখারপুল, বাটা সিগন্যাল, মৎস্য ভবন, মিন্টু রোড, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, বাংলামোটর, কাওরানবাজার, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেন। সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন, ‘একাত্তরের পথ ধর, বাংলা ব্লকেড সফল কর’, ‘দফা এক, দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’।
সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন। এর ফলে এ এলাকার সব প্রধান ও শাখা সড়ক বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা ১১টার দিকে মহাখালীর আমতলীতে তিতুমীর কলেজসহ অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। এতে আশপাশের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর-ফার্মগেট এবং মহাখালী-শিশুমেলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দুই রুটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। রামপুরা এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
এদিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও মুক্তিযুদ্ধ সংসদ সন্তান কমান্ডসহ কোটার পক্ষের বেশ কয়েকটি সংগঠন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল ও কটূক্তির বিচারের দাবিতে তারা সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য হয়ে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার প্রমুখ। এ সময় তারা ৭ দফা দাবি জানান।
সকাল ১০টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন। অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়পাশে যানবাহনের দীর্ঘ জট লাগে।
ঢাকার বাইরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা মহাসড়কের চৌদ্দপাই এলাকার বাইপাস অবরোধ করেন। দুপুর ১টায় রাবির প্রধান ফটক থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বাইপাসে অবস্থান নেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় রাবি প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে রুয়েটের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। এর মধ্যে হাইকোর্টের রায় এক মাসের স্থগিতের খবর প্রকাশ হলে শিক্ষার্থীরা বিহাস বাইপাস অবরোধ করেন। এতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকাল ৪টার দিকে তারা অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর দেওয়ানহাট এলাকায় রেললাইন অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টা ২০ মিনিটে তারা নগরীর টাইগারপাস ও দেওয়ানহাট ব্রিজ সড়কে অবস্থান নেন। বেলা ১১টায় মহাসড়ক অবরোধ করে সাংস্কৃতিক আসর করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন প্রতিবাদী কবিতা, গান, গীতিনাট্য ও অভিনয়ের মাধ্যমে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানান।
বেলা ১১টায় প্রধান ফটকের সামনে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমবেত হন। মানববন্ধন শেষে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। দুুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপাশে বহু যানবাহন আটকা পড়ে।
