এসএসসিতে পাশের হার কমলেও চিন্তা পিছু ছাড়ছে না
এবারও ভর্তি প্রতিযোগিতা
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার গড় পাশের হার ও জিপিএ-৫ দুটি কমলেও উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের পছন্দের কলেজে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা কমেনি। ভর্তি যুদ্ধে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের। এর মূল কারণ হচ্ছে ভালো মানের কলেজ ও আসন সংকট। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সবার মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। ফলে যারা এবারও ভালো ফল করেছে, তাদের জন্য ভালো মানের কলেজে ভর্তি হওয়াটাই চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা একটু বেশিই সংকটে আছেন। এবার তাদের ফল ভালো হয়েছে। এছাড়া যারা ইংরেজি ভার্সন থেকে পাশ করেছে, তাদের একই ভার্সনে ভর্তি হতে গিয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসনসহ এ সংক্রান্ত বিষয়াদি বিশ্লেষণ করে এমন তথ্যই জানা যায়।
বৃহস্পতিবার এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হয়। ফল হাতে পাওয়ার থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পছন্দের কলেজ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৩ লাখ ৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পাশ করেছে। এর মধ্যে এক লাখ ৩৯ হাজার ৩২ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়। শিক্ষা বোর্ডের তথ্য বলছে, সারা দেশে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তিযোগ্য আসন ২৪ লাখের মতো। সে হিসাবে প্রায় ১১ লাখ আসন ফাঁকা থাকবে। মানহীন কিছু কলেজ শিক্ষার্থী টানতে ব্যর্থ হয় প্রতিবছরই। কোথাও কোথাও অনুমোদিত আসনের বিপরীতে পঞ্চাশ শতাংশ শিক্ষার্থীও পাওয়া যায়নি। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান ফলের দিক থেকে এগিয়ে থাকে, সেই মানের কলেজ ও আসন সংকট থেকেই যাচ্ছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাস থেকেই অনলাইনে ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এ বিষয়ে শিগগিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে শিক্ষা বোর্ড ও মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে মানসম্পন্ন ও ভালো কলেজ হিসাবে বিবেচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আড়াই শতাধিক। এতে আসন আছে ১ লাখের কাছাকাছি। এসব কলেজেই শিক্ষার্থীদের ভর্তির আগ্রহ বেশি। তবে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে রাজধানীর নামিদামি কলেজের প্রতি। ঢাকায় মানসম্পন্ন কলেজের সংখ্যা ৩০ থেকে ৩৫টির মতো। কলেজগুলোতে সর্বসাকুল্যে আসন আছে ৩০ হাজারের কাছাকাছি। মূলত এই কলেজগুলোতেই ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এবারও সেই আশঙ্কাই করা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয় শাখা আছে। ফলে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয় শাখার শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পাবে। তাই বাইরের প্রতিষ্ঠানের জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী এসব কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি জন্য যথেষ্ট আসন রয়েছে। এ বছর পাশ করা সবাইকে ভর্তির পরও ১১ লাখের মতো আসন ফাঁকা থাকবে। সংকট হচ্ছে, অনেকেই হাতেগোনা (ভালো কলেজ) কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চান। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পছন্দ মতো ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। এ কারণে যারা ভালো ফল করেছে কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বেশি প্রতিযোগিতা করতে হবে। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও ভার্সনের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই প্রতিযোগিতা বেশি হবে।
জানা গেছে, সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য কলেজ ও মাদ্রাসার সংখ্যা ৯ হাজার ১৮৭টি। সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে ৫৬৫টি। সব মিলিয়ে একাদশে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ২৪ লাখের মতো।
শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, মানসম্মত কলেজ কম গড়ে ওঠা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্যতা। কারণ কিছু কলেজ বরাবর ভালো করছে। বাকি কলেজগুলো কেন ভালো ফল করতে পারছে না-সে নিয়ে কোনো গবেষণা বা চাপ নেই।
এবার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা হলেও এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গতবারের তুলনায় পাশের হার বেড়েছে। এবার কেবল এসএসসির সর্বোচ্চ সাফল্য হিসাবে চিহ্নিত জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৮ শিক্ষার্থী। দাখিল ও কারিগরি থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ১৪ জন। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর চাওয়া ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি।
এছাড়া জিপিএ-৫ এর নিচে কিন্তু জিপিএ-৩.৫ থেকে জিপিএ-৪ পর্যন্ত পাশ করা শিক্ষার্থী আছে ৭ লাখ ১৯ হাজার ৫৮৩ জন। এসব শিক্ষার্থীও ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের দিকে ছুটে থাকে। এর বাইরে গত বছর ভর্তি না হওয়া কিছু শিক্ষার্থীও লেখাপড়া করতে আসে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামে সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু যুগান্তরকে বলেন, যেহেতু ভালো মানের কলেজ খুবই কম। তাই মেধাবী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আকর্ষণ থাকবেই স্বনামধন্য কলেজে পড়ার। এসব কলেজে আসন কম থাকায় প্রতিযোগিতাও বেশি। তাই মেধা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ভর্তি পরীক্ষার বিকল্প নেই। শহীদ বীর উত্তম আনোয়ার গার্লস বিজ্ঞান বিভাগ গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া এক শিক্ষার্থী জানায়, একাদশে ভর্তির জন্য হলিক্রস কলেজ তার পছন্দের শীর্ষে। তবে এই কলেজে ভর্তি প্রতিযোগিতা বেশি হয়।
জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে মিশনারি বা চার্চ পরিচালিত রাজধানীর চারটি কলেজ-হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ, সেন্ট গ্রেগরি এবং নটর ডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষা ও ভাইবার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে থাকে। দেশের বাকি কলেজ ও মাদ্রাসায় এবারও প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুসরণ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে এইএসসি ভর্তিযোগ্য যোগ্য কলেজের সংখ্যা ৪৮০৮টি। ঢাকা বোর্ডে কলেজের সংখ্যা ১১৩৭টি আর আসন ৫৪০৩৯১টি। শুধু ঢাকা মহানগরীতে কলেজ রয়েছে ৩৫৩টি। কুমিল্লা বোর্ডে কলেজ সংখ্যা ৪৬৩টি আর আসন সংখ্যা ২৫৯১৯০। রাজশাহী বোর্ডে কলেজের সংখ্যা ৮১০ আসন ৩৮৬৯০০টি। যশোর বোর্ডে কলেজের সংখ্যা রয়েছে ৫৮৯টি আর আসন ২২০৯৩৯টি। চট্টগ্রামে বোর্ডে কলেজ সংখ্যা ২৮৩টি আসন ১৬৯৫২৪টি। বরিশাল বোর্ডে কলেজ সংখ্যা ৩৬৯ আর আসন সংখ্যা ১৭০৮৮০টি। সিলেট বোর্ডে কলেজ সংখ্যা ৩৩৯টি আর আসন সংখ্যা ১৪১১৩৮টি। দিনাজপুর বোর্ডে কলেজ সংখ্যা ৭০৭টি আর আসন ৩২৮৫৫৬টি। মাদ্রাসা বোর্ডে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৭৭৯ আর আসন ৩১১৩৪১টি। ময়মনসিংহ বোর্ডে কলেজ ৩২৯ আর আসন ১৩৫৮৬৭টি।

