Logo
Logo
×

শেষ পাতা

জুলাই অভ্যুত্থান

আইন না করা পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আইন না করা পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা

ফাইল ছবি

কোটাবৈষম্য নিরসনে সংসদে আইন পাশের লক্ষ্যে জরুরি অধিবেশন আহ্বান এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ২০২৪ সালের ১৩ জুলাই শনিবার তারা এ দাবি জানান। এ ছাড়া পরদিন রোববার বেলা ১১টায় বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একই দাবিতে নিজ নিজ জেলা প্রশাসক কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা নিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবে। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সংসদে আইন পাশ করে কোটার সমস্যা সমাধান না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। তবে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আপাতত অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এদিকে কোটা বহাল রাখার দাবিতে যশোরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন এবং ঝালকাঠির নলছিটিতে বিক্ষোভ করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান কমান্ড।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বিরোধীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে কঠোর হচ্ছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কথায় কঠোরতার বিষয়টি উঠে এসেছে।

ইতোমধ্যে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদান ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশ মামলা করেছে। আন্দোলনকারীদের দাবি ও বক্তব্যকে সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাস্তা বন্ধ না করে আন্দোলন থেকে সরে আসতে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আন্দোলনের নামে জানমালের ক্ষতি করলে কিংবা সড়ক অবরোধ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌক্তিক ব্যবস্থা নেবে বলে জানান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং তাদের দাবি ন্যায্য হলেও সরকার এটাকে ভিন্ন খাতে নিতে অপকৌশল করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশকে মারধর এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের গাড়িচালক খলিলুর রহমান শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ এদিন বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্য কেউ ইন্ধন দিতে পারে। ঘটনাটি অন্যদিকে ধাবিত করার চেষ্টা চলছে। কোনো গোষ্ঠীর ইন্ধনের বিষয়টি বের করতে ডিবি ও পুলিশ কাজ করছে। কেউ যদি আদালতের আদেশ না মানে, আন্দোলনের নামে জানমালের ক্ষতি করে, সড়ক অবরোধ করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে যৌক্তিক কাজ, সেটাই করা হবে।

মিন্টো রোডের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের হারুন অর রশীদ আরও বলেন, কোটা পদ্ধতি নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কেউ যদি মনে করে আদালত মানবে না, পুলিশের কথা মানবে না, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে ক্ষমতা, আমরা সেটাই করব।

শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতে সরকার অপকৌশল করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ অভিযোগ করেন তিনি।

বঙ্গভবনমুখী পদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি : শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ, মামলা তুলে নেওয়া ও কোটা সংস্কারের এক দফা বাস্তবায়নের দাবিতে রোববার বেলা ১১টায় গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেবেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, আমাদের এতদিন ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ছিল। এ কর্মসূচিকে অনেকে জনদুর্ভোগ হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা বলতে চাই, সুস্থ সন্তান জন্মদানের জন্য সাময়িকভাবে প্রসবকালীন ব্যথা সহ্য করতে হয়। আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট চলছে। সেটির পাশাপাশি রোববারের কর্মসূচি থাকবে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের জন্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া ও গণপদযাত্রা। সংসদে আইন পাশ করে কোটার যৌক্তিক সংস্কার না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

হাসনাত বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজসহ ঢাকার আশপাশের যত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গণপদযাত্রায় অংশ নেবেন।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা বহাল রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন যশোরের মুক্তিযোদ্ধারা। যশোর জেলার সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দের ব্যানারে শনিবার দুপুর ১২টায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুজিব বাহিনীর বৃহত্তর যশোর জেলার ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম। সংবাদ সম্মেলনে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকার অবমাননা ও সুপ্রিম কোর্টের আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

রাজবাড়ীতে কোটা প্রথার সংস্কার, শিক্ষা পণ্যের দাম কমানো, পরিবহণে হাফ ভাড়া ও শিক্ষায় দুর্নীতি বন্ধ করার দাবিতে জেলা ছাত্র ইউনিয়ন বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে রেলগেট এলাকায় গেলে ছাত্রদের বুঝিয়ে শান্ত করে পুলিশ। শনিবার দুপুর ১২টায় রাজবাড়ী রেলগেট শহীদ স্মৃতি চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন জেলা সংসদের নেতারা। পরে ১নং রেলগেটে গিয়ে রেললাইনের ওপর অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা।

নলছিটি (ঝালকাঠি) : নলছিটিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় বাসস্ট্যান্ডে বিজয় উল্লাস ’৭১-এর সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান কমান্ডের নেতারা অংশ নেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম