ভালুকায় মা ও দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যা
‘যে ভাইকে ঋণ করে জেল থেকে ছাড়ালাম সে-ই আমার সংসারটা শেষ করে দিল’
ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
স্ত্রী ও দুই সন্তানকে বাসায় রেখে প্রতিদিনের মতো কাজে যান পোশাক শ্রমিক রফিকুল ইসলাম। রাতভর কাজ শেষে সকালে বাসায় ফিরে দেখেন, ঘরে তালা ঝুলছে। অনেক ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া নেই। পরে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখেন, একই বিছানায় স্ত্রী ও দুই সন্তানের গলাকাটা লাশ। সোমবার সকালে ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ভালুকা-পনাশাইল সড়কের খারুয়ালিতে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হল-রফিকুলের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা বেগম (৭) ও ছেলে নীরব (২)।
রফিকুল জানান, ঘটনার পর থেকেই তার ছোট ভাই নজরুল ইসলাম পলাতক। তিনি বলেন, নজরুল গাজীপুরের শ্রীপুর থানার একটি মামলায় দুই বছর জেল খেটেছে। আড়াই মাস আগে আমি ৪০ হাজার টাকা ঋণ করে তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনি। তাকে আমার সঙ্গে রাখি। বাসা ভাড়াটাও আমি দিতাম। এর আগেও সে মানুষের গাড়ি চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছে বলে শুনেছি। যে ভাইকে ঋণ করে জেল থেকে ছাড়ালাম সে-ই আমার সংসারটা শেষ করে দিল বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন রফিকুল। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রফিকুল নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সন্তু মিয়ার ছেলে। দেড় মাস আগে ছোট ভাই নজরুল ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভালুকার খারুয়ালিতে হাইয়ুম মিয়ার বাড়ির দুই রুম ভাড়া নেন। রফিকুল কাঠালিতে রাসেল স্পিনিং মিলে কাজ করেন। নজরুল অটোরিকশা চালায়। রোববার রাত ৮টার দিকে রফিকুল কর্মস্থলে যান। কাজ শেষে সোমবার সকাল ৯টায় বাসায় এসে দেখেন দরজায় তালা। বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বাড়ির মালিক ও তার স্ত্রীকে ডেকে আনেন। পরে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখেন, বিছানায় স্ত্রী ও দুই সন্তানের গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। খবর পেয়ে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা ও রক্তমাখা একটি বিছানার চাদর উদ্ধার করেছে। তিনি বলেন, কী কারণে এই হত্যা তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে ঘটনার পর থেকে নিহত ময়না বেগমের দেবর নজরুল পলাতক। ধারণা করা হচ্ছে, সে-ই এ হত্যা করেছে।
বাসার মালিক হাইয়ুম বলেন, প্রায় দুই মাস আগে ওরা আমার বাসায় ভাড়া উঠেছিল। এক রুমে ছোট ভাই নজরুল থাকত। আরেক রুমে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে থাকতেন রফিকুল। তাদের মধ্যে কখনো ঝগড়া হতে দেখিনি।
নিহত ময়না বেগমের বোন আসমা খাতুন জানান, ময়না ও রফিকুলের দাম্পত্য জীবনে কোনো কলহ ছিল না। তাদের সংসারে অফুরন্ত সুখ ছিল। রফিকুল তার ভাইকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনে আজকে এই সর্বনাশ ঘটিয়েছে।
পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আকতার আলম জানান, নজরুলের বিরুদ্ধে এর আগেও একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সে দুই বছর জেল খেটে জামিনে বের হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক নানা কাজের তথ্য রয়েছে।
