Logo
Logo
×

শেষ পাতা

প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন শালবন বিহার

এটি সপ্তম শতকের শেষদিকে প্রতিষ্ঠিত একটি স্থাপনা

Icon

আবুল খায়ের, কুমিল্লা

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন শালবন বিহার

ফাইল ছবি

দেশের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন শালবন বিহার। কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় অবস্থিত বিহারটি হাজার বছরের ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকায় সপ্তম শতকের শেষদিকে দেব বংশের রাজা শ্রীভবদেব এটি প্রতিষ্ঠা করেন। বিহারটি ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এর চারপাশে এক সময় শাল ও গজারি বন ছিল, তাই এর নামকরণ করা হয়েছে শালবন বিহার। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের খনন কার্যের মাধ্যমে এখানে ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। এটি কুমিল্লা তথা পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন শালবন বিহার। এটি অনেকটা পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো। তবে আকারের দিক দিয়ে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার থেকে কিছুটা ছোট। কোটবাড়ি এলাকায় ১৮৭৫ সালে রাস্তা তৈরির সময় একটি ইমারতের ধ্বংশাবশেষ সবাই প্রত্যক্ষ করেন। তখন এটিকে প্রাচীন দুর্গের অংশ হিসাবে ধারণা করা হচ্ছিল। ১৯১৭ সালে ঢাকা জাদুঘরের অধ্যক্ষ নলিনী কান্ত ভট্টাশালী শালবন বৌদ্ধবিহারটিকে পর্যবেক্ষণ করে পট্টিকেরা নগর বলে মতামত পোষণ করেন। তবে ধারণা করা হয় এই বিহারটি ৭ম শতাব্দীর শেষদিকে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব নির্মাণ করেন। বিভিন্ন সময় শালবন বিহারের ছয়টি স্থাপনা নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের কথা জানা যায়। মনে করা হয়, ৮ম শতাব্দীর মধ্যে ৩য় বারের মতো কেন্দ্রীয় মন্দির নির্মাণ ও বিহারের সার্বিক সংস্কার হয়। পর্যায়ক্রমে ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে ৪র্থ ও ৫ম বারের মতো বিহারটি সংস্কার করা হয়। শালবন বিহারটি দেখতে আয়তাকার, এর প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ১৬৭.৭ মিটার। চতুর্দিকে বিহারের দেওয়াল প্রায় পাঁচ মিটার পুরু এবং কক্ষগুলো চারপাশের বেষ্টনী দেওয়ালের সঙ্গে পিঠ করে নির্মিত। বিহারে প্রবেশের জন্য একটি দরজা দেখা যায় যা উত্তর ব্লকের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। বিহারে সর্বমোট কক্ষের সংখ্যা ১৫৫টি এবং ঠিক মাঝখানে কেন্দ্রীয় মন্দিরকে চিহ্নিত করা যায়। এসব কক্ষে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বসবাস করতেন এবং ধর্মচর্চা করতেন। কক্ষের সামনের দিকে টানা বারান্দা ও শেষ প্রান্তে দেওয়াল দেখা যায়। প্রত্যেক কক্ষের দেওয়ালে প্রতিমা বা তেলের প্রদীপ রাখার তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। অন্য পাশে চারটি বিশাল স্তম্ভের ওপর নির্মিত একটি হলঘর দেখা যায়। ধারণা করা হয় এই হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবারের জন্য ব্যবহার করা হতো। বিভিন্ন সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যক্রমের মাধ্যমে শালবন বৌদ্ধ বিহার থেকে প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি, আটটি তাম্রলিপি, সিলমোহর, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা উদ্ধার করা হয়। এসব নিদর্শনের সিংহভাগই ময়নামতি জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র, যেখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রতিদিন আসেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, লালপাহাড়ের মাটির উপরে লাল ইটের সুরকির সুন্দর গাঁথুনি। ইটের গাঁথুনিগুলো আজকের দিনের মতো সিমেন্ট, কংক্রিটের তৈরি নয়। কাদামাটি আর ইট দিয়ে তৈরি। এখানে রয়েছে সুদৃশ্য কেন্দ্রীয় মন্দির, হলঘর, গুহা, পানির কূপ ইত্যাদি। এর সৌন্দর্য যে কাউকে আকৃষ্ট করবে সহজে। লালইটের এই স্থাপত্যশিল্পগুলো আজকের নির্মিত নয়।

আনুমানিক ৭ম-৮ম শতকে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপত্য, বিহার, মন্দির, স্তূপ ইত্যাদিও নিদর্শন। দেশের প্রধান প্রধান প্রত্নস্থলের মধ্যে অন্যতম দেশের কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে অবস্থিত মাটি খুঁড়ে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক শালবন বিহার। এখানে শালবন বিহার ছাড়াও রূপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, লতিকোট বিহার, রানীর বাংলো, আনন্দ বিহারসহ ছোট ছোট আরও কয়েকটি প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ডক্টর নাহিদ সুলতানা বলেন, কুমিল্লা শালবন বিহার এই অঞ্চলে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। এখানে খননের মাধ্যমে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বেরিয়ে এসেছে। শালবন বিহার নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা এখনো গবেষণা করছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম