বাংলাদেশের নেতাদের আশ্রয় প্রসঙ্গে মমতা
ভারত সরকার অন্য কারণেও অনেককে আশ্রয় দিয়েছে
বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি তকমা কেন?
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভারত সরকার অন্য কারণে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের আশ্রয় দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অতিথি করে তো কয়েকজনকে রেখেছে ভারত সরকার। আমি কি না করেছি? এর রাজনৈতিক কারণ আছে। ভারত সরকারের অন্য কারণও আছে। পাশের দেশ বিপদে পড়েছে। কই আমরা তো কখনো এসব বলি না। তা হলে আপনারা কেন বলবেন, বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি হয়ে গেল!’ বৃহস্পতিবার নিউ টাউনে এক অনুষ্ঠানে বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি তকমা দেওয়া এবং বাঙালি হেনস্তার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
নিউ টাউনের ওই অনুষ্ঠানে পাঁচটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই বক্তৃতার সময় সব ভাষার প্রতি সম্মানের কথা তুলে ধরেন মমতা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটা নোটিফিকেশন (বিজ্ঞপ্তি) করে বলছে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই তাদের ডিপোর্ট করে দাও। কেন? ওরা জানে না, বাংলা ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা সারা এশিয়ায় দ্বিতীয়। আর সারা পৃথিবীতে পঞ্চম।’
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, ভারতের যে কোনো নাগরিক দেশের যে কোনো জায়গায় যেতে পারেন। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই যে ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সে কথাও বক্তৃতায় উল্লেখ করেন মমতা। তিনি বলেন, শুধু ‘বাংলাদেশি’ বলেই নয়, ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের ‘রোহিঙ্গা’ বলেও দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা যে আসলে মিয়ানমারের একটি জনগোষ্ঠী, সেটাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। মমতা বলেন, যাকেই পাচ্ছে বাংলা ভাষায় কথা বললেই বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশি আর রোহিঙ্গা। কোথা থেকে এলো রোহিঙ্গা? রোহিঙ্গা তো মিয়ানমার। ওরা বাংলা জানল কোথা থেকে? যারা বলছেন তারা একবার বুঝবেন না! মমতা আরও বলেন, কেউ বলছে ১৭ লাখ রোহিঙ্গা আছে। আমি বলছি, ঠিকানা দিন। বলুন কোথায় তারা আছেন।
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী-মুজিবুর রহমানের চুক্তির সময়েই বাংলাদেশি উদ্বাস্তুরা এ দেশে এসেছিলেন। ওই সময় যে উদ্বাস্তুরা ভারতে এসেছিলেন, তারা যে ভারতীয় নাগরিক, সে কথাও জানান মমতা। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী অনেকের দেশবিভাগের আগে বা ১৯৭১ সালে এ দেশের চলে আসার আগে জন্ম হয়েছে। তাদের কথ্য ভাষার মধ্যে স্থানীয় টান রয়েছে। তারা বাংলাদেশি নন। ভীষণভাবে ভারতীয়। পশ্চিমবঙ্গেও একেক জেলায় কথ্য ভাষায় নিজস্ব টান রয়েছে।
কেন্দ্রের সমালোচনা করে মমতা বলেন, আজ সবার ওপর অত্যাচার হচ্ছে। কেন বলবে ১৭ লাখ লোকের নাম বাদ দিয়ে দাও! কে তুমি হরিদাস? কে তোমরা? যে ভারতীয় নাগরিক সে-ই ভোট দেবে। যারা বাংলায় বাস করেন, বাংলার নাগরিক, কেন তুমি তার নাম কাটবে? সে কোন জাত, কোন ধর্ম, তা তোমার দেখার দরকার নেই। তারা ভীষণভাবে বাংলার ভোটার।
মমতা জানান, তিনি বাংলার মানুষের জন্য গর্বিত। তিনি যে হিন্দি, উর্দু, সংস্কৃত, গুজরাটি, মারাঠি, পাঞ্জাবি, অসমিয়া, ওড়িশার মতো বিভিন্ন ভাষা বুঝতে পারেন, তা-ও বক্তৃতায় জানান। বাংলার যে শ্রমিকরা ভিনরাজ্যে কাজ করতে যান, তারা যে যথেষ্ট দক্ষ, তাও স্মরণ করিয়ে দেন মমতা। তিনি বলেন, বাংলার শ্রমিকরা দক্ষ বলেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ভিন?রাজ্যে। মমতা বলেন, রাজনীতি করতে গেলে আগে মনকে ঠিক করতে হবে। মনে রাখবেন, রাজনৈতিক লোকেরাই সরকার চালায়। যদি তারা রাজনৈতিকভাবে সঠিক না হন, তারা ভালো প্রশাসক হতে পারেন না। সরকার চালাতে গেলে মাথা চালাতে হবে। মগজ মরুভূমি হলে হবে না, মগজটাকে খুলে দিতে হবে খোলা হাওয়ায়, মুক্ত আকাশে, মুক্ত বাতাসে মুক্ত নিশ্বাস নিতে হবে।
