Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মৌন মিছিলপূর্ব সভায় মির্জা আব্বাস

জুলাইকে পুঁজি করে সুবিধা নিচ্ছে কয়েকটি দল

পিআর ও স্থানীয় নির্বাচনের দাবি অসৎ উদ্দেশ্যে, চলতি মাসেই জুলাই সনদ দিতে হবে-সালাহউদ্দিন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাইকে পুঁজি করে সুবিধা নিচ্ছে কয়েকটি দল

জুলাই অভ্যুত্থানকে পুঁজি করে কয়েকটি রাজনৈতিক দল সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, যে দল প্রতিষ্ঠিত নয়, তাদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার এক দলকে কোলে আরেক দলকে কাঁধে রেখেছে। শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও মৌন মিছিলপূর্ব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই অভিযোগ করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

অপরদিকে রাজধানীর মিরপুরে একই কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। এতে অংশ নিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচন যারা চান, তাদের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। যারা বিভ্রান্তির মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে চান, তারা স্থানীয় ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চান। পিআর পদ্ধতি খায় না মাথায় দেয়-কেউ বোঝে না।

দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নয়াপল্টনে মির্জা আব্বাস বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহীদদের বিক্রি করে কেউ কেউ রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। শহীদদের নিয়ে আফসোস হয়। কারণ, শহীদদের নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসা চলছে। তারা বেঁচে থাকলে লজ্জা পেতেন। তারা যে কারণে জান দিয়েছিলেন, যে কারণে গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন, সেই কারণগুলো আজকে হচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বিএনপির প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করবেন না। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করছি। দ্রুত নির্বাচন দিন, দেশে শান্তি ফিরবে। নির্বাচন না দিলে ভাবব, আপনারা দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করছেন।

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘একজন তথাকথিত পীর সাহেব বলেছেন, জামায়াতের ছোঁয়া যেখানে লাগবে সেই জায়গা পচে যাবে। মনে আছে কি আপনাদের কথাটা? তিনি আজ জামায়াতের কোলে উঠে বসেছেন। আবার সেই জামায়াতের নেতারা এক সময় বিএনপির কাঁধে ভর করে মন্ত্রী হয়েছেন, এক সময় আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করেও তারা মন্ত্রী হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তারা দালালি করেছে, তাদের বিক্রি করছে।’

বিএনপিকে নিয়ে কটাক্ষকারীদের উদ্দেশে দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিএনপিকে অনেকে আওয়ামী লীগের কাতারে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। দয়া করে জিহ্বায় একটু লাগাম দিন। তাতে আমাদের সবার ভালো হবে। এমন বাজে কথা বলবেন না, যা মানুষের রক্তে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। বিএনপি ঝগড়ার দল নয়, বিএনপি গণতন্ত্রকামী দল, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করে।

মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে আন্দোলন করেছে। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে কেউ কেউ। কিন্তু বিএনপির একজন নেতাকর্মীও জীবিত থাকলে তারা কখনো সফল হবে না। আমাদের নেতাকর্মীরা জেল খাটতে অভ্যস্ত, রাস্তায় আন্দোলন করতে অভ্যস্ত। জীবন ও যৌবনের অর্ধেক সময় রাজপথ ও জেলখানায় কাটিয়েছি। পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করবেন না। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল নয়। বিএনপির একজন জীবিত থাকতেও তাদের মাইনাস করে ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ পূরণ হবে না।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি এবং ছাত্রদলের প্রায় ৪২২ জন শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ওই ঘটনাগুলোকে নিয়ে বিশেষ কয়েকটি দল রাজনীতি করছে এবং তাদের বিক্রি করে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা করছে। শহীদরা কোনো একক ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে দুপুর থেকে নয়াপল্টনে জড়ো হন দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের জন্য দোয়ার আয়োজন করে দলটি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা উপস্থিত ছিলেন। পরে বিকাল ৫টায় মৌন মিছিল শুরু হয়। এতে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। মিছিলটি কাকরাইল, মালিবাগ ও মৌচাক হয়ে আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

পিআর ও স্থানীয় নির্বাচনের দাবি অসৎ উদ্দেশ্যে, চলতি মাসেই জুলাই সনদ দিতে হবে-সালাহউদ্দিন : এদিকে শুক্রবার বিকালে রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে মহানগর উত্তর বিএনপির মৌন মিছিল কর্মসূচিতে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখতে হবে। যারা নতুন নতুন বাক্যবিশারদ হয়েছেন, নতুনরা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, সেটা ভালো। কিন্তু কেউ যদি নির্বাচনকে পিছিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে, তবে তারা আবারও ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, একটি মহল ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনার পাঁয়তারা করছে; কিন্তু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে, দাফন হয়েছে দিল্লিতে। চলতি মাসের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ না হলে, ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়ী থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পরে মৌন মিছিলটি মিরপুর ১১, ১০ নম্বর গোল চত্বর দিয়ে কাজীপাড়া হয়ে শেওড়াপাড়ায় গিয়ে শেষ হয়। এই কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মোস্তফা জামানের সঞ্চালনায় মৌন মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি এসএম জিলানী, কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদল সভাপতি মো. নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন উত্তর বিএনপির সিনিয়র সদস্য আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, এবিএমএ রাজ্জাক, আকতার হোসেন, আতাউর রহমান প্রমুখ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম