ক্লাস ৫ মাস, বেতন বন্ধ ২ মাস
উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় কাটছে না কুয়েটের অচলাবস্থা
নূর ইসলাম রকি, খুলনা
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) অচলাবস্থার নিরসন শিগগিরই হচ্ছে না। উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এ সংকট কাটবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে গেল ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের পর দুই দফা উপাচার্য পরিবর্তন, শিক্ষকদের ওপর হামলার বিচারে শিক্ষক সমিতির অনড় অবস্থানের কারণেই গেল ৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ক্লাস কার্যক্রম। পাশাপাশি উপাচার্য না থাকায় দুই মাস বেতন-ভাতাদি পাচ্ছেন না শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এদিকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ইতোমধ্যে কুয়েট ক্যাম্পাসে অতি দ্রুত ক্লাস চালুর দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছেন। মঙ্গলবার সকালেও কুয়েট শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধনের কর্মসূচি রয়েছে।
কুয়েটে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে দেওয়া সব নিয়োগ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। রোববার কুয়েটের রেজিস্ট্রারের কাছে তদন্ত কমিটি নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে। এদিকে কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত এবং সৃষ্ট স্বাভাবিক পরিস্থিতির বিষয় শনিবার আরও একটি তদন্ত কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বরাবর দাখিল করবেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগতসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষ এবং পরবর্তীতে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার পর থেকে সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫ মাস ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরার চেষ্টা করলেও শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্লাস বন্ধ রেখেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচারের দাবি এবং উপাচার্য না থাকায় এই সংকট বেড়েই চলেছে।
এপ্রিল মাস অবধি কুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেতন পেয়েছেন। এর পর থেকে উপাচার্য না থাকায় গেল ২ মাস বেতন বন্ধ রয়েছে। এমনকি গেল ঈদুল আজহার সময় বেতন ও বোনাস ছাড়াই সবার ঈদ কেটেছে। ১৫ জুলাই কুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাসিক বেতন-ভাতাদির জন্য ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যোগদানের আহ্বান করছিল বেশ কয়েকদিন ধরে। তবে শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোনো শিক্ষকই ক্লাস নিতে রাজি নন। কারণ শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছনার সুষ্ঠু দাবিতে অনড় শিক্ষক সমিতি। এমন পরিস্থিতিতে রোববার তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল (ইইই) বিভাগে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হলেও কোনো শিক্ষকই ক্লাস নিতে আসেননি। পাশাপাশি কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কুয়েট গার্ডিয়ান ফোরাম নামে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অতি দ্রুত কুয়েটের ক্লাস চালুর দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা আরও জানান, গেল ১৮ ফেব্রুয়ারির পর অনেক ঘটনাই ঘটেছে। উপাচার্য প্রত্যাহার, শিক্ষক লাঞ্ছিত, বহিষ্কারসহ নানান ঘটনা। এসব ঘটনার কারণে আমরা লিখিতভাবে শিক্ষকদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তারা আরও বলেন, শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হোক এটা আমরাও চাই।
কুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য ড. এস কে শরীফুল আলমকে শিক্ষা অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক মো. হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি গত ২২ মে শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে কুয়েট উপাচার্য পদ শূন্য রয়েছে। পরবর্তীতে কুয়েটের উপাচার্য পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২৬ জুন ছিল আবেদনের শেষ সময়। একটি সূত্র জানায়, প্রায় দেড় ডজনের কাছাকাছি শিক্ষক উপাচার্য পদের জন্য আবেদন করেছেন।
কুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও উপ-রেজিস্ট্রার মো. মঈনুল হক যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন কুয়েটের উপাচার্য না থাকায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন পালন করছেন। এপ্রিল মাসের পর কারোর বেতন হয়নি। এমনকি ঈদের সময়ও বেতন-বোনাস পাইনি।
কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার যুগান্তরকে জানান, আমরা এখন অভিভাবকহীন। সব সমস্যার সমাধানের জন্য খুব দ্রুতই কুয়েটের উপাচার্য নিয়োগ প্রয়োজন।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন বলেন, সোমবার শিক্ষক সমিতির একটি সভা হয়েছে। কুয়েটের এই অচলাবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য উপাচার্য নিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। আজ মঙ্গলবার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে মানববন্ধন করবেন। উপাচার্য নিয়োগ হলে সব সমস্যার সমাধান হবে। উপাচার্য নিয়োগের পর শিক্ষক সমিতির পরবর্তী সিদ্ধান্ত আলোচনার মাধ্যমে নেওয়া হবে।
