Logo
Logo
×

শেষ পাতা

পেশাজীবীদের সভায় তারেক রহমান

সুকৌশলে নির্বাচন আয়োজনে বাধা দেওয়া হচ্ছে

শাসক পালটেছে কিন্তু শাসনের চরিত্র পালটায়নি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সুকৌশলে নির্বাচন আয়োজনে বাধা দেওয়া হচ্ছে

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কেউ কেউ ফায়দা হাসিল করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, তারা নিজেদের খবরদারি বহাল রেখে আখের গোছাতে চায়। কৌশলে এরাই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বাধার সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে এমন কথা সামনে আসছে। গণ-অভ্যুত্থানে কৃতিত্ব কিন্তু কোনো একক গোষ্ঠী বা দলের নয়। নিত্যনতুন রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ বা রাজনৈতিক মেরুকরণের আড়ালে আমরা গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা যেন ভুলে না যাই। সোমবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের (বিএসপিপি) উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ১৬ বছরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে পেশাজীবীদের অবদান নিয়ে আলোচনা সভা এবং শহীদপরিবার ও নির্যাতনের শিকার পেশাজীবীদের সম্মাননায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন ও দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শাসনামলের দুঃশাসনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি পেশাজীবীদের ভূমিকা নিয়ে স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পরে শহীদপরিবারের সদস্য ও আহতদের হাতে সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার কারণে অনুষ্ঠানটি দ্রুত শেষ করা হয়। সভায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে তিনি হতাহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

তারেক রহমান বলেন, শাসক পালটিয়েছে, কিন্তু শাসনের চরিত্র বোধহয় পালটায়নি। তিনি বলেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে রাষ্ট্র ও সরকারে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখার জন্য নানা ধরনের অপকৌশল করছেন। তাদের প্রতি আহ্বান-শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবেন না। জনমনে যদি এমন ধারণা হয়, তবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হবে। এজন্য বারবার বলতে চাই-নিজের জীবন দিয়ে যেসব বীর সন্তান দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছেন, এবার সেসব শহীদের প্রতি আমাদের ঋণ পরিশোধে পালা।

অন্তর্র্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, সরকার পরিচালনায় গৃহীত কার্যক্রমে অগ্রাধিকার ইস্যুগুলো বোধহয় থাকা উচিত। কারণ, রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন তালিকায় যদি নিত্যনতুন ইস্যু সংযুক্ত হয়, তবে বিভিন্ন রকম সমস্যাও দেখা দিতে পারে। জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনায় সুযোগ পেলে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণ শহীদদের নামে করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা দেখছি কয়েকটি রাজনৈতিক দল হঠাৎ দেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি করছে বা দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। বাংলাদেশে এই নির্বাচনি ব্যবস্থা প্রবর্তনের অর্থ রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদ, ফ্যাসিবাদ, চরমপন্থার বিকাশের পথ সুগম করে দেওয়া। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থা বিভ্রান্তিমূলক। এ ব্যবস্থায় সরকার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। দেশের জনগণের ঐক্য চাইলে কোনোভাবেই সংখ্যাপনুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থা চালু হওয়া উচিত নয় বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের দাবি উত্থাপনের বিষয়টি কোনো কোনো দল গণতান্ত্রিক অধিকার হিসাবে দেখলেও বাংলাদেশ পিআর সিস্টেমে নির্বাচনি ব্যবস্থার জন্য উপযোগী নয় বলেই আমরা মনে করি। দেশকে যদি তাঁবেদারমুক্ত রাখতে হয়, ফ্যাসিবাদমুক্ত রাখতে হয়, তবে জনগণের ঐক্যই জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, সংবিধান আর আইনকানুন দিয়ে ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারকে রোধ করা যায় না। বরং আইনকানুন না মানার কারণেই কেউ কেউ ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পারে। ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে চাইলে জনগণকে যে কোনো মূল্যে রাজনৈতিকভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রে জনগণের সব ধরনের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারের চর্চা এবং প্রয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ যদি ক্ষমতাবান থাকে, রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ থাকে, তবে ফ্যাসিবাদ কিংবা স্বৈরাচার ঠেকানোর জন্য তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি যথেষ্ট।

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষের অবদান ও আত্মত্যাগ সবচেয়ে বেশি। গণ-অভ্যুত্থানে শ্রমজীবী, কর্মজীবী, পেশাজীবী মানুষ সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শহীদ হয়েছেন। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ, চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিমসহ কমপক্ষে ছয়জন শহীদ হয়েছিলেন। ওইদিনই মূলত আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। ঐতিহাসিক ১৬ জুলাই ছয়জন শহীদের অন্যতম ছিলেন চট্টগ্রামের ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী শহীদ ফারুক। শহীদরা কিন্তু শুধু একটা সংখ্যা নয়। কারণ, একটি প্রাণের সমাপ্তির অর্থ হলো একটি পরিবারের মৃত্যু। একটি সম্ভাবনার অবসান।

শহীদের তালিকা নিয়ে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দেশের প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মানুষের একটি আকাঙ্ক্ষা আছে। সরকার রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সংস্কারের জন্য অনেক সময় ব্যয় করছে। আর কয়দিন পরেই এক বছর হবে। কিন্তু এই এক বছরও গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে আমার কাছে মনে হয়েছে, দীর্ঘ এক বছরেও শহীদদের সংখ্যা চূড়ান্ত বা তালিকা চূড়ান্ত করতে না পারার বিষয়টি ভবিষ্যতে ইতিহাসে হয়তো একটা চূড়ান্ত ব্যর্থতা হিসাবে চিত্রায়িত হবে।

তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব কুক্ষিগত করার জন্য অনেকেই তৎপর। শহীদদের তালিকা তৈরি করার ক্ষেত্রে যদি এই তৎপরতাটা থাকত, তাহলে হয়তো নিশ্চয়ই আমরা এতদিনে একটা চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে পারতাম।

বিএসপিপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী ও ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, প্রয়াত সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আফফান আবরার আমিন, শহীদ ব্রিগেডিয়ার আব্দুর রহিমের ছেলে আবরার রহিম, শহীদ সাংবাদিক হাসান মেহেদীর বাবা মোশাররফ হোসেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শহীদ মুক্তাক্কিন বিল্লাহর স্ত্রী নাঈম এরিন মিতুসহ আহত শহীদপরিবারের সদস্যরা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, নূরুল ইসলাম মনি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, মিজানুর রহমান মিনু, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, এমএ মালিক, যুগ্ম-মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, পেশাজীবীদের মধ্যে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ভিসি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, রুয়েটের ভিসি অধ্যাপক এসএম আবদুর রাজ্জাক, পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এসএম সোহাগ আউয়াল, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক লুৎফর রহমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, প্রকৌশলী মো. মোস্তফা-ই জামান সেলিম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, সাংবাদিক কামাল উদ্দিন সবুজ, এমএ আজিজসহ চিকিৎসক, শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার নেতাকর্মী। এছাড়াও ছিলেন- অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী নাসরিন হক, অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, ডা. নাসিম মূসা পরশ, রফিক-উম মুনির চৌধুরী প্রমুখ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম