খাগড়াছড়িতে ঈসমাইল অপহরণ
বাবা-মায়ের কান্না আমাদের সন্তানকে ফিরিয়ে দিন
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মায়ের অশ্রু আর বাবার আর্তনাদ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছাপ ফেললেও গত ৪ মাসে আশ্বাস ছাড়া আর কিছু মেলেনি। নরসিংদীর বেলাব উপজেলার তরুণ ঈসমাঈল মিয়া (৩০) খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি রবি আজিয়াটার নেটওয়ার্ক টাওয়ারে টেকনিশিয়ান হিসাবে কর্মরত থাকাবস্থায় অপহৃত হন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, বীর বাগবের এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে ঈসমাইল মিয়াকে উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
যুগান্তর অফিসে বুধবার রাতে ঈসমাইলের মা আছিয়া বেগম ও বাবা নুরুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এভাবে আমাদের সন্তান অপহরণ হলো অথচ রাষ্ট্রের কোনো দায়ভার নেই। তাকে উদ্ধারের জন্য সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। সবাই শুধু বলছে অভিযান চলছে, তদন্ত চলছে। এতদিন হয়ে গেলেও সন্তানের খোঁজ পাচ্ছি না। সরকারের কাছে দাবি জানাই-আমাদের সন্তানকে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দিন। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, গত ১৯ এপ্রিল অফিস থেকে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির টাওয়ারে পাঠানো হয় ঈসমাইলকে, পরে সেখান থেকেই অপহরণকারীরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত আমরা তার কোনো খোঁজ পাইনি।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঈসমাইলকে উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে আবেদন করা হয়েছে। ঢাকা ও নরসিংদীতে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে তার পরিবার। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, প্রথম দিকে মুক্তিপণ চেয়ে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন এলেও এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। আগে যেসব নম্বর থেকে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করা হয়, সেসব নম্বরে অনবরত ফোন দিয়েও নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ঈসমাইলের পরিবারের সদস্যরা জানান, তার মুক্তির জন্য কোম্পানির কাছে ৫০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এই টাকা দিয়েই তাকে মুক্ত করতে হবে নতুবা তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। তবে ঈসমাইলের সঙ্গে থাকা আব্রে মারমার কাছে কোনো মুক্তিপণ দাবি না করায় অপহরণের সঙ্গে আব্রে মারমা যুক্ত থাকতে পারে বলে দাবি পরিবারের।
ঈসমাইলের পিতা নুরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ দুই বছর ধরে টেকনিশিয়ান হিসাবে রবি আজিয়াটায় চাকরি করে আসছেন। সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে রবি কোম্পানির ৭-৮টি টাওয়ার বিকল হয়ে যাওয়ায় নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এই অবস্থায় কোম্পানির নির্দেশনায় ঈসমাইল খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে ময়ুরখীল এলাকায় টাওয়ার মেরামতের উদ্দেশ্যে গত ১৯ এপ্রিল সকালে রওনা হন। যাওয়ার পথে মানিকছড়ি কলেজ এলাকা থেকে দুর্বৃত্তরা ঈসমাইল মিয়া ও তার অপর সহযোগী আব্রে মারমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল যুগান্তরকে জানান, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় পুলিশের সঙ্গে যৌথ বাহিনী উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনায় আমরা অভিযান চালাচ্ছি। আশা করি, দ্রুত সময়ে তাদের সন্ত্রাসীদের জিম্মা থেকে উদ্ধার করতে পারব।
ঈসমাইলের ভাই শাহীন মিয়া (৩৫) বলেন, গত ১৯ এপ্রিল ঈসমাইল অপহৃত হয়। আমরা রবি কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার গিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো খোঁজ পাইনি। খাগড়াছড়িতে একটি জিডি করেছি। কিন্তু এতদিন পরেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। অপহরণের পর রবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ‘ইডটকো বিডি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কথা জানান। পরে ইডটকো আবার ‘সার্বস কমিউনিকেশন’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আমাদের পাঠায়। কিন্তু দুই প্রতিষ্ঠানই বিষয়টি এড়িয়ে গেছে এবং তারা কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। আমরা চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছি। যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কারও কাছ থেকেই সহায়তা পাইনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মানিকছড়ি থানার এসআই সাদ্দাম হোসেন জানান, যেহেতু পাহাড়ি এলাকা, তাই যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে অভিযান চালানো হচ্ছে। আর দুর্বৃত্তরা ঈসমাইলের কোম্পানির কাছে চাঁদা দাবি করছে এটাও মাথায় রয়েছে। এছাড়া ঈসমাইলের সঙ্গে থাকা আব্রে মারমার কাছে চাঁদা না চাওয়ায় বিষয়টি সন্দেহের তালিকায় নিয়েই কাজ করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার, রবি আজিয়াটা, ইডটকো বিডি ও সার্বস কমিউনিকেশন কর্তৃপক্ষ ঈসমাইল নিখোঁজের বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাননি। তাদের দাবি-বিষয়টি সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করছে।

