Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ঢাকা ওয়াসা প্রকৌশলীর কাণ্ড

নিজের দপ্তরেই শ্যালকের নামে ঠিকাদারি ব্যবসা

এটা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট; এ ধরনের অপরাধ প্রমাণিত হলে চাকরিচ্যুতির বিধান রয়েছে -জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া

মতিন আব্দুল্লাহ

মতিন আব্দুল্লাহ

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নিজের দপ্তরেই শ্যালকের নামে ঠিকাদারি ব্যবসা

ঢাকা ওয়াসার পদ্মা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী আসরিব বিন সালাম। সরকারি চাকরির পাশাপাশি এই প্রকৌশলী নিজ দপ্তরে নিজেই শুরু করেছেন ঠিকাদারি ব্যবসা। সরাসরি নিজের নাম ব্যবহার না করে আপন দুই শ্যালকের নামে ঠিকাদারি কাজ অব্যাহত রেখেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

তারা জানান, দুই শ্যালকের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে নিজের ঠিকাদারি ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন প্রকৌশলী গাজী আসরিব। এর মধ্যে এম এইচ কনসালটেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সের স্বত্বাধিকারী মাহমুদুল হাসান। অন্যটি ওসমান ট্রেডিং করপোরেশন। এর স্বত্বাধিকারী মো. মোয়াল্লেম হোসেন। এই দুজনই প্রকৌশলীর স্ত্রী ফারহানা দিল আফরোজের আপন ভাই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা ওয়াসায় কর্মীর তথ্য বিবরণীতে গাজী আসরিব বিন সালামের স্ত্রীর নাম রয়েছে ফারহানা দিল আফরোজ। তার জাতীয় পরিচিতি তথ্যে দেখা গেছে, তার বাবার নাম মো. মোতাহার হোসেন এবং মায়ের নাম শামসুন নাহার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এইচ কনসালটেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সের স্বত্বাধিকারী মাহমুদুল হাসান এবং ওসমান ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মো. মোয়াল্লেম হোসেন-উভয়ের বাবা ও মায়ের নামের জায়গায় একই নাম লেখা।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এম এইচ কনসালটেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স একটি আমদানিকারক, প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। ৭১/১/এ, উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকার ঠিকানায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে প্রতিষ্ঠানটি ট্রেড লাইসেন্স বা ব্যবসায়িক অনুমোদন নিয়েছে। আর ওসমান ট্রেডিং করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স অনুযায়ী এটিও একটি আমদানিকারক, প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এটি ১১/৩, রোড-১, কল্যাণপুর, মিরপুর, ঢাকা থেকে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ঢাকা ওয়াসা সংশ্লিষ্টরা জানান, ওসমান ট্রেডিং করপোরেশন এবং এম এইচ কনসালটেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পদ্মা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ ঢাকা ওয়াসায় বহু কাজ করছে। হিসাব বিভাগ থেকে বিল উত্তোলনের প্রমাণপত্রও মিলেছে। দুই শ্যালকের নামে এই প্রকৌশলীর ব্যবসার বিষয়টি ঢাকা ওয়াসায় ‘ওপেন সিক্রেট’। বছরের পর বছর তিনি চাকরির পাশাপাশি শ্যালকদের নামে ব্যবসা করলেও কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। কারণ হিসাবে জানা যায়, প্রকৌশলী গাজী আসরিব নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য এবং ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন বলে দাপট দেখাতেন। পাশাপাশি সমালোচিত ঢাকা ওয়াসার সাবেক এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় এসব থেকে রেহাই পেয়ে গেছেন।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, নিজের দপ্তরের দরপত্রে স্বজনদের ঠিকাদারি কাজ দেওয়া সরকারি আচরণবিধির পরিপন্থি। এখানে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বা স্বার্থের সংঘাতের বিষয় থাকে। এ ধরনের ঘটনায় তিরস্কার দণ্ড থেকে চাকরিচ্যুতি ঘটানোর বিধান রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এম এইচ কনসালটেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সের স্বত্বাধিকারী মাহমুদুল হাসান বলেন, গাজী আসরিব বিন সালম তার নিকটাত্মীয় নন। এলাকার সম্পর্কে ভগ্নিপতি হন। তবে সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদি উপস্থাপন করলে নিজের ভগ্নিপতি বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কয়েকটি কাজ করার পর সমালোচনা শুরু হয়। এরপর সেখানে আর কোনো কাজ করছেন না। এখন গণপূর্তসহ সরকারি অন্যান্য দপ্তরে কাজ করছেন। আর তার ভাই ওসমান ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারীও এখন আর কাজ করছেন না।

পদ্মা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী আসরিব বিন সালাম অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ঘটনা সত্য। তবে এটা কয়েকবার আমি না বুঝে করেছি। বোঝার পর আর কখনো করিনি।’

তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদ যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের দরপত্র দেখার বিষয় নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বাধীন কমিটির। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জড়িত থাকেন না। যাদের দায়িত্ব তারা যদি কোনো ভুল বা অপরাধ করেন, এটা তাদের দায়। এর সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা বা দায় নেই।

পদ্মা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সার্কেলের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মির্জা গোলাম কিবরিয়া যুগান্তরকে বলেন, সরকারি চাকরিজীবী হয়ে কেউ আচরণবিধি ভাঙলে তার শাস্তি যা আছে, সেটা পাবে। কোনো প্রকৌশলী কোনো অপরাধ করলে তার শাস্তি তাকে পেতে হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম