৩৩০ পুলিশের ভাগ্য ঝুলছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে
আসাদুল্লা লায়ন
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ঝুলছে ২০০৬ সালে নিয়োগবঞ্চিত ৩৩০ সাব-ইনস্পেকটর ও সার্জেন্টের ভাগ্য। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি ১৭ বছর তারা অপেক্ষা করছেন চাকরির জন্য। গত বছর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। নামেন আন্দোলনে।
সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তাদের আশ্বাস দেওয়া হয় দাবি পূরণের। অথচ গত এক বছরেও তাদের দাবি পূরণ হয়নি। তবে তাদের চাকরিতে বহাল করতে প্রধান উপদেষ্টার সানুগ্রহ কামনা করেছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটি।
এ সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয় তিন মাসেরও বেশি সময় আগে। অথচ এখনো বিষয়টির সুরাহা হয়নি। ফলে অনিশ্চয়তা কাটছে না নিয়োগ নিয়ে। তাই চাকরিপ্রত্যাশীরা ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে।
ভুক্তভোগী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, পুলিশের ২০০৬ সালে নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার পরও ৫৩৬ জন নিরস্ত্র সাব-ইনস্পেকটর এবং ২২১ জন পুলিশ সার্জেন্টের নিয়োগ ২০০৭ সালে ‘দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ’-এর অজুহাতে বাতিল করা হয়।
প্রার্থীদের লিখিত, মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা হওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান থাকাবস্থায় এসবি একটি প্রতিবেদন দেয়। এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেন। ওই সময় চাকরিপ্রত্যাশীরা উচ্চ আদালতে রিট করেও প্রতিকার পাননি।
নিয়োগবঞ্চিতদের মধ্যে বর্তমানে যোগদানে আগ্রহী ২০৭ জন সাব-ইনস্পেকটর (পুরুষ/নারী) ও ১২৩ সার্জেন্ট। গত নভেম্বরে তাদের পুনর্বহালের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উচ্চ পর্যায়ের ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটির কাছে প্রয়োজনীয় সব দালিলিক তথ্য-উপাত্ত দেন নিয়োগবঞ্চিতরা। ওই কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিও সুপারিশ করে।
এরপর আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তরের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কমিটি নিয়োগ পুনর্বহালে সম্মতি দেয়। তারা প্রার্থীদের জ্যেষ্ঠতাসহ বয়স, প্রশিক্ষণকালীন প্রমার্জনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে সারসংক্ষেপ পাঠান। অথচ, তিন মাসের বেশি সময়েও বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। এ বিষয়ে জানতে বুধবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নম্বরে ফোন ও এসএমএস করে সাড়া পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, চলিত বছরের মার্চে এ সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিটির দ্বিতীয় সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে বলা হয়, আবেদনকারীদের আর্জি, আদেশ ও আদালতের পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনার মাধ্যমে তাদের একটি বিশেষ ব্যাচ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
অ্যাডহক ভিত্তিতে পদ তৈরির মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ ও মেডিকেল বোর্ডে সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার শর্তে নিয়োগের সুপারিশ করা যায় কি না-এ বিষয়ে আইনি মতামত দিতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরে সরকার তাদের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে একটি আলাদা বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে এই ব্যাচটির নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির মতো বিষয় নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করা হবে।
এরই ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় নিয়োগের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নিয়োগের সুপারিশ করে। এতে বলা হয়, ১৯৯১ সালের একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হলে ১৯৯৭ সালে তাদের বিশেষ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় চাকরি ফেরত দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু একই প্রক্রিয়ায় ১৯৯৭ সালে আবেদনকারীদের চাকরি ফেরতের নজির রয়েছে, এর আলোকে মানবিক কারণে তাদের অ্যাডহক ভিত্তিতে আলাদা পদ সৃজনের মাধ্যমে নিয়োগ এবং চাকরিকাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদ বিলুপ্ত করা যায় কি না।
