বিশ্ব সেরা একশত বক্তৃতা এবং ৭ই মার্চের ভাষণ
মিনার মাসুদ
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আচার-আচরণ পরিবর্তিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ভাষণ বা বক্তৃতারও ধরন পালটাতে থাকে বলে ইতিহাস প্রমাণ করে। সক্রেটিসকে তার দর্শন, জ্ঞান, সমাজপতিদের সমালোচনা ও তরুণ সমাজকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৩৯৯ সালে। বিভিন্ন বক্তৃতায় যে কথাগুলো তিনি বলতেন, তা আজও ইতিহাস হয়ে রয়েছে। ‘নিজেকে জানো’, ‘মৃত্যুই হলো মানুষের সর্বাপেক্ষা বড় আশীর্বাদ’, ‘তুমি কিছুই জানো না এটা জানাই জ্ঞানের আসল অর্থ’, আর মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তার বলে যাওয়া, ‘আমি মারা যাচ্ছি, তুমি বেঁচে থাকবে। কোনটি বেশি ভালো, তা শুধু ঈশ্বরই জানেন।’ মৃত্যুর ২৪০০ বছর পর আজও তাই সক্রেটিস প্রাসঙ্গিক। সেই সক্রেটিসকে সত্য কথা বলার জন্য তৎকালীন শাসকরা বা সমাজপতিরা হেমলক পানে আত্মহননে বাধ্য করেছিল। সক্রেটিস পিছপা হননি হেমলক পানে, নতজানু হয়ে সত্যকে অস্বীকার করেননি। সক্রেটিস দেহান্তরিত হয়েছেন, কিন্তু তার সত্য ভাষণ এখনো মানুষের কাছে অবিনশ্বর হয়ে আছে। অনেক অবিনশ্বর ভাষণের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ একটি শোষণ মুক্তির দলিল ও ইতিহাস।
মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার তার বইয়ের প্রাক কথনে তিনি লিখেছেন-
‘বাচিক শিল্পটা এখন বিশ্ব স্বীকৃত। সবারই চেষ্টা থাকে সুন্দর কথা বলার জন্য। তবে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা শুধু সুন্দর করেই বলেন না, হয়ে ওঠেন সমাজের আয়নায় সৎ, যোগ্য ও দক্ষ নেতা। সে যোগ্যতার মাপকাঠিতে ভর করে তিনি হয়ে ওঠেন যোগ্যতর নেতা এবং দেশ বা জাতির ত্রাতা।
মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার তার বইতে ভাষণের আলোচনা বা সমালোচনা অথবা তুলনা করার চেষ্টা করেননি। তিনি এখানে যুগে যুগে জাতির প্রয়োজনে ভাষণের একটা পরম্পরা সাজানোর চেষ্টা করেছেন মাত্র। ভাষণ বা বক্তৃতাগুলো সময়ের পরম্পরার সঙ্গে সাজিয়ে এনেছেন। যাতে পাঠক, স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় প্রতিটি ভাষণের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন।
লেখক ৭ মার্চের বক্তৃতা উপস্থাপনের উপসংহারে লিখেছেন, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধিকারের জন্য সাড়ে তেরো বছর কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। তিনি জনতার দাবির একবিন্দুও ছাড়তে রাজি হননি কখনো। শোষিতের পক্ষে থাকতে থাকতে এক সময় হয়ে উঠলেন মুক্তিকামী মানুষের ত্রাতা। তার ঘোষিত ছয়দফা দাবি তাই হয়ে উঠেছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। সেই মুক্তির সনদের সোপানে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দ্বীপ্ত ও দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন-এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তর্জনী উঁচুতে তুলে সেদিন তিনি যে নির্দেশ নিরস্ত্র-শান্তিপ্রিয় বাঙালিকে দিয়েছিলেন, সেই দৃপ্ত কণ্ঠের তেজস্বী আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি লাঠি, কোদাল, বাঁশ, বৈঠা আর মনোবল নিয়ে আধুনিক অস্ত্র আর সুসজ্জিত পাকিস্তানি হায়েনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে মাত্র নয় মাসে দেশকে স্বাধীন করে ফেলেছিল। বঙ্গবন্ধুকে ওরা গ্রেফতার করে অজানা জায়গায় অন্তরীণ করে রাখলেও ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে’র আহ্বান মাথায় নিয়েই মুক্তিযোদ্ধারা দেশ মাতৃকাকে স্বাধীন করে ফেলেছে। ৭ মার্চের ভাষণকে তাই বিশ্ব এখন শব্দের বাণ না বলে বলতে শুরু করেছে ৭ মার্চের শব্দাস্ত্রই বাঙালিকে স্বাধীন করেছে। তার সেই শব্দমালাকে ইউনেস্কো বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করেছে। আর তাকে আসন দিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসাবে।
জনাব তালুকদার সূত্রসমেত আরও উপস্থাপন করেছেন ‘মহান আব্র্রাহাম লিঙ্কনের বক্তৃতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ তুলনা করা হয়, কিন্তু লক্ষ রাখতে হবে-সে বক্তৃতাটি ছিল মাত্র তিন মিনিটের। মার্টিন লুথার কিংয়ের বক্তব্য ছিল ১৭ মিনিটের, যা প্রথমে ছিল লিখিত এবং পরে অলিখিত। তাই পৃথিবীর কোনো ভাষণের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের তুলনা হয় না। কারণ ব্যক্তি ভাষণের মধ্য দিয়ে একটি জাতির জন্ম হয়েছে, এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ তাই অবিনশ্বর ও অতুলনীয়।
মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার একাধারে সরকারি কর্মকর্তা ও লেখক। তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনের অংশ হিসাবে সিঙ্গাপুর, ভারত, অস্ট্রিয়া, চেক রিপাবলিক, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ সফর করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে এক লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের অনুশীলনের সুযোগ সৃষ্টি করে কয়েক হাজার খুদে শিক্ষার্থীর ৭ মার্চের ভাষণ বঙ্গবন্ধুর মতো করে উপস্থাপন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন তখনকার ভালুকার ইউএনও জনাব কামরুল আহসান তালুকদার।
তার লেখা বইয়ের মধ্যে ‘মাঠ প্রশাসনের বিবর্তন: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা : প্রেক্ষিত : বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জলাভূমি উল্লেখযোগ্য। ‘বিশ্ব সেরা একশত বক্তৃতা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণ’ তার অনবদ্য সৃষ্টি।
বইটি প্রকাশ করেছে ঝালকাঠি পাবলিকেশন্স (জেকেটি)। হার্ডকভার ও অফসেট কাগজ ও ছাপায় বইটি মোট ৪২ ফর্মার। মূল্য রাখা হয়েছে-১৮২৫/- টাকা। পাওয়া যাচ্ছে রকমারি ডট কমে আর শাহবাগের পাঠশালা ও পাঠক সমাবেশে।
