ম্যান অব দ্য ওয়েস্ট : আকুতাগাওয়ার ট্র্যাজিক হিরো
মেজবাহ উদ্দিন
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রিউনোস্কে আকুতাগাওয়া ছিলেন একজন জাপানি লেখক। তাকে ‘জাপানি ছোটগল্পের জনক’ মানা হয় এবং তার নামে জাপানের সেরা সাহিত্য পুরস্কার ‘আকুতাগাওয়া পুরস্কার’ দেওয়া হয়। ১৯২৭ সালের ২৪ জুলাই রাতে রিউনোস্কে আকুতাগাওয়া একটি মারাত্মক মাত্রার ভেরোনাল খেয়ে স্ত্রীর পাশে গা এলিয়ে শুয়ে পড়লেন এবং শেষবারের মতো ঘুমিয়ে পড়ার আগে বাইবেল পড়তে লাগলেন। তখন তার বয়স মাত্র পঁয়ত্রিশ। নিজেকে নাস্তিক দাবি করলেও, খ্রিষ্টধর্ম নিয়ে তিনি গভীরভাবে ভাবতেন। আত্মহত্যার কিছুদিন আগে তিনি লিখেছিলেন ‘ম্যান অব দ্যা ওয়েস্ট’ নামের পঞ্চাশটি ক্ষুদ্র আখ্যানের সংকলন, যেখানে যিশু খ্রিষ্ট একজন আত্মজৈবনিক রচয়িতা-যিনি অন্য সব মানুষকে গভীরভাবে বুঝতে পারেন, শুধু নিজেকে বাদে।
আকুতাগাওয়া ছিলেন একজন বহুলপ্রসিদ্ধ ও উদ্যমী লেখক এবং প্রথমদিককার আধুনিক জাপানি সাহিত্যিকদের একজন যিনি পাশ্চাত্যে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি যিশুর প্রতি আকৃষ্ট হন এমন এক সময়ে, যখন তিনি দৃষ্টি ও শ্রবণের বিভ্রমে ভুগতেন, সঙ্গে থাকত তীব্র মাইগ্রেন। তার স্ত্রী মাঝে মাঝে তাকে টোকিওর ঘরে দেওয়ালে আঁকড়ে ধরে বসে থাকতে দেখতেন-এই ভেবে যে, দেওয়ালগুলো যেন তার ওপর ভেঙে পড়ছে।
মৃত্যুর কয়েক দিন আগে আকুতাগাওয়া তার পরিবার ও বন্ধুদের উদ্দেশ্যে একাধিক চিঠি লেখেন। তার আত্মহত্যার পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে, বন্ধু মাসাও কুমে চিঠি পড়ে শোনান-‘এক পুরোনো বন্ধুকে চিঠি’, যা সাধারণত আকুতাগাওয়ার আত্মহত্যার চিঠি হিসাবে পরিচিত। এ চিঠিতে একটি ডার্ক কমেডি আছে, যেখানে দেখা যায় কীভাবে আত্মহত্যার মতো এক গম্ভীর বিষয়কেও ছোটখাটো বাস্তবিক দুশ্চিন্তা- যেমন, তার রচনার কপিরাইট, সম্পত্তির মূল্য বা বন্দুক মাথায় ধরার সময় হাত কাঁপবে কি না-অর্থহীন করে তোলে।
তবে চিঠিটি তার অন্তরের শেষ মুহূর্তের এক অন্তর্মুখী প্রতিচ্ছবিও। ‘আজ পর্যন্ত কেউই আত্মহত্যার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে খোলাখুলি লেখেনি,’-এ বাক্যে চিঠির শুরু। তিনি লেখেন, ‘তার একটি ছোটগল্পে (হেনরি ডি) এক আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিকে চিত্রিত করেছেন, যিনি নিজেই জানেন না কেন তিনি আত্মহত্যা করছেন।’ আকুতাগাওয়ার মতে, ‘অধিকাংশ আত্মহত্যাকারী তেমনই, নিজের প্রকৃত প্ররচনা সম্পর্কে অজ্ঞ।’ ‘ম্যান অব দ্যা ওয়েস্ট’র যিশু-কবির মতোই, তিনি অন্য সব মানুষের আত্মা বুঝতে পারতেন-শুধু নিজেরটা নয়। হয়তো তিনি তাকাতে পারেননি; হয়তো তাকাতে চাননি। কারণ, যেখানে প্রেরণা আছে, সেখানে দায়ও আছে-যা তিনি মৃত্যুর মাধ্যমে এড়াতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি লেখেন, ‘আমি বাস করি এক স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত জগতে, যা বরফের মতো স্বচ্ছ।’ তিনি চেয়েছিলেন শুধু একটু বিশ্রাম। ‘ম্যান অব দ্যা ওয়েস্ট’-এ তিনি লেখেন, ‘এই বিশাল ও বিভ্রান্তিকর জীবন নামক জিনিসে আমরা কেবলই এক যাত্রী। শুধু ঘুমই আমাদের শান্তি দেয়।’
আকুতাগাওয়া ১৮৯২ সালে টোকিওতে জন্মগ্রহণ করেন। ‘দ্যা নোজ’ (১৯১৬), ‘হেল স্ক্রিন’ (১৯১৮), এবং ‘ইন দ্যা ব্যাম্বু গ্রোভ’ (১৯২১)-এর মতো তার অনেক গল্পই সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে- সেইসঙ্গে অনেক গল্প আজও জাপানি উচ্চবিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্য। ফরাসি চিত্রশিল্পী মানের মতো, যিনি ঐতিহাসিক পোশাকে সমকালীন ছবি আঁকতেন; আকুতাগাওয়াও প্রাচীন জাপানি কিংবদন্তির চরিত্রগুলোকে আধুনিক মনোভঙ্গিতে পুনর্জীবিত করতেন। তিনি ছিলেন নির্মমভাবে আবেগহীন।
আকুতাগাওয়ার গল্পগুলো প্রস্ফুটিত হয়েছিল এমন এক সময়ে, যখন টোকুগাওয়া শোগুনাতের পতনের পর জাপান দ্রুত আধুনিকায়নের পথে হাঁটছিল এবং প্রাচীন রীতিনীতিগুলো পাশ্চাত্য প্রভাবের কাছে ম্লান হয়ে যাচ্ছিল। আধুনিক জাপানি সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছিল একটি সমৃদ্ধ সাহিত্যিক সংস্কৃতির মধ্যে যেখানে সাহিত্য পত্রিকাগুলো সমালোচনা ছাপাতো, কখনো কখনো একটি ছোটগল্প নিয়ে গোটা প্রবন্ধ লিখে ফেলত। জাপানি ‘আই-নভেল’ ধারা (জাপানি স্বীকারোক্তিমূলক সাহিত্যের একটি ধারা)-আত্মজীবনীভিত্তিক উপন্যাস ও ছোটগল্প, যেগুলোতে বর্ণনা ও প্রবন্ধধর্মী গদ্যের সংমিশ্রণ ঘটত-টোকিওর সাহিত্যিক, সমালোচক ও সম্পাদক গোষ্ঠীর উচ্চ প্রশংসা পেত। আই-নভেলকে ‘অন্তর্মুখী সাহিত্যের’ একটি স্বতন্ত্র জাপানি রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হতো যার শিকড় হেইয়ান যুগের যুগপৎ গদ্য ও কবিতার মিশ্রণধর্মী ‘জুইহিৎসু’ ধারায় পাওয়া যায়-এক ধরনের আত্মজৈবনিক গল্পকথন, যেখানে কবিতা, প্রবন্ধ ও সাহিত্য সমালোচনা মিলেমিশে থাকে।
সমসাময়িক অটো-ফিকশনের মতো, আই-নভেলও প্রায়ই একটি অকপট স্বীকারোক্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকত-এমন স্বীকারোক্তি যা সাধারণত অপ্রীতিকর এবং যেখানে কথকের সঙ্গে লেখকের আত্মপরিচয় মিশে থাকত। ইতিহাসভিত্তিক সাহিত্যের প্রতি যখন পাঠকের আগ্রহ কমছিল, তখন আই-নভেলের মর্যাদার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আকুতাগাওয়া তার সাহিত্য জীবনের শেষ পর্বে আত্মজীবনীমূলক ছোটগল্প ও ব্যক্তিগত প্রবন্ধে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। এসব রচনায় আমরা এমন এক যুবককে দেখি, যে রসবোধসম্পন্ন এবং আত্মসচেতন, বিদ্যায় তীক্ষ্ণ কিন্তু মজার, অস্বাভাবিকভাবে প্রজ্ঞাবান, আবার কামনা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার কাছে দুর্বল। টোকিওর সাহিত্যি-সমালোচকরা এ ধরনের সাহিত্যকে প্রশংসা করত-তার চরিত্রগুলোর অপ্রিয়তার জন্যই, কারণ সেটি লেখকের পক্ষ থেকে একটি সাহসী ঝুঁকির ইঙ্গিত দিত-উচ্চতর বাজি।
আকুতাগাওয়ার আত্মহত্যাপত্র পাপ ও অধর্ম নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি লিখেছেন যে তিনি ‘নিজের সমস্ত দোষ ও দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন, একেবারে প্রতিটা।’ তিনি অস্পষ্টভাবে ক্ষমা চেয়েছেন : ‘আমি দুঃখিত, দুর্ভাগ্যবশত আমাকে একজন খারাপ স্বামী, খারাপ ছেলে খারাপ বাবা হিসাবে যাদের সহ্য করতে হয়েছে।’ তার কিছু আত্মজীবনীমূলক গল্প থেকে, যা মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়, আমরা জানতে পারি যে কবি শিগেকো হিদের সঙ্গে আকুতাগাওয়ার এক পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন এ সম্পর্কই তার আত্মহত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যেমনটি তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ প্রচ্ছদ ডিজাইনার রিউইচি ওয়ানাকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। ‘স্টুপিড ম্যান’ গল্পে শিগেকোকে কেবল ‘পাগলি মেয়ে’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাকে একদিকে ক্যারিশম্যাটিক আবার অন্যদিকে নিষ্ঠুর নারী হিসাবে দেখানো হয়েছে। কুমে মাসাও-কে লেখা এক পৃথক চিঠিতে আকুতাগাওয়া লিখেছেন, ‘আমি সচেতনভাবে, অন্তত নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করিনি। তবুও, অদ্ভুতভাবে আমার কোনো অনুশোচনা নেই।’ তার লেখার ভেতর দিয়ে যেন আত্মগ্লানির চেয়ে আত্মগ্লানির অভাবই বেশি ফুটে ওঠে। মনে হয়, আকুতাগাওয়া যেন একসঙ্গে দুদিকে মুখ করে কথা বলছেন-একদিকে নিজেকে রক্ষা করতে চাইছেন, আবার অন্যদিকে স্বীকারোক্তি দিতেও চাইছেন, যেন নিজের শর্তে আত্মসমর্পণ করতে চান।
আকুতাগাওয়া ঠিক কী থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চান-বা চান না? ‘দ্য পিলো বুক’ (১০০২) থেকে শুরু করে ‘দ্য লাইফ অফ অ্যান অ্যামোরাস ম্যান’ (১৮৬২) পর্যন্ত শত শত বছর ধরে জাপানি সাহিত্যে পরকীয়াকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে আরও বড় পাপ খুঁজে পাওয়া যায় আকুতাগাওয়ার ১৯২৩ সালের গল্প ‘দ্য বেবির সিকনেস’র শেষ লাইনগুলোতে, যেখানে তিনি তার সদ্যোজাত ছেলের প্রায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসার ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আকুতাগাওয়া স্বীকার করেন যে তিনি তার সন্তানের হাসপাতালে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি রচনার খসড়া লেখার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু ‘একটা কুসংস্কারগ্রস্ত অনুভূতি থেকে সে চিন্তা বাদ দিয়ে ছিলাম-যদি আমি সেই অভিজ্ঞতা লিখে ফেলি, সে আবার অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এখন, সে বাগানের দোলনায় ঘুমোচ্ছে। পরে আমাকে যখন গল্প লেখার অনুরোধ করা হয়েছে, ভাবলাম এটা নিয়ে কিছু একটা লিখি। পাঠক হয়তো চাইতেন আমি অন্য কিছু করি।’
আকুতাগাওয়ার পাপ হলো লেখার কাজ নিজেই-এমন লেখা যা যন্ত্রণাকে বিষয় হিসাবে নেয়। তিনি তার শ্রেষ্ঠ গল্প ‘হেল স্ক্রিন’-এ এ যন্ত্রণাদায়ক কাহিনি বলার স্যাডোম্যাসোকিস্টিক আকাঙ্ক্ষাকে রূপক আকারে তুলে ধরেছেন। গল্পটি এক হেইয়ান যুগের চিত্রশিল্পীকে নিয়ে, যে কেবল বাস্তব দেখে চিত্র আঁকতে পারে। তাকে নরকের আগুনে দগ্ধ হওয়ার দৃশ্য আঁকতে হবে-তাই সম্রাট তার সামনে একজন মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেন। চিত্রশিল্পী রাজি হন, কিন্তু আঁকার সময় তিনি বুঝতে পারেন যে, সেই দগ্ধ মানুষটি তার নিজের মেয়ে, যাকে জ্বলন্ত রথে বেঁধে আগুনের মধ্যে পাঠানো হয়েছে। তিনি আতঙ্কে তাকিয়ে থাকেন, এরপর উচ্ছ্বাসে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠেন-‘ধর্মীয় উচ্ছ্বাসের আলোয়।’ তার তৈরি চিত্রকর্ম ‘হেল স্ক্রিন’ সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়। এরপর সেই চিত্রশিল্পী আত্মহত্যা করেন।
শিল্পী তখনই ভেঙে পড়েন যখন তিনি জীবনের বাস্তবতা আর শিল্পের কল্পনার মধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। আকুতাগাওয়ার আত্মজৈবনিক ধারার লেখায় এটি একটি সাধারণ থিম। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে থেকেই ভয় পাচ্ছিলেন-তিনিও কি বাস্তবতা ও কল্পনার পার্থক্য হারিয়ে ফেলবেন? সম্ভবত সব আত্মজৈবনিক লেখকই কোনো এক সময় অনুভব করেন-তাদের লেখা স্মৃতির কল্পনা, বাস্তবে যা ঘটেছিল তা-কে অতিক্রম করে যায়। আকুতাগাওয়ার লেখা ‘দাইদোজি শিনসুকে : দ্য আর্লি ইয়ার্স’ (১৯২৪), তৃতীয় পুরুষে লেখা, এক স্মরণীয় লাইন বহন করে : ‘সে রাস্তয় মানুষদের দেখে জীবন শেখেনি; বরং বই পড়ে জীবনের পাঠ নিয়েছে যাতে রাস্তায় মানুষদের বুঝতে পারে।’ এখানে লেখক আর বাস্তবতার সঙ্গে নিজের কল্পনার সীমা টানতে পারছিলেন না।
অ্যারিস্টটলের মতে, ট্র্যাজিক নায়কের বীরত্বের মধ্যেই নিহিত থাকে তার ধ্বংসের বীজ : ট্র্যাজিক ত্রুটি। কিন্তু নিটশের The Birth of Tragedy (১৮৭২)-এর ট্র্যাজিক নায়কের কোনো ত্রুটি নেই; বরং তার মধ্যে আছে এক অতিমানবীয়, আধিদৈবিক আধিক্য, যার জন্য তাকে ‘চিরকাল যন্ত্রণা ভোগ করে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়।’ নিটশের প্রভাব আকুতাগাওয়ার ওপর গভীর ছিল, যা তিনি বহুবার লিখেছেন এবং তার জীবনের শেষ পর্যায়ে এটি আরও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আত্মহত্যার চিঠিতে আকুতাগাওয়া লেখেন : ‘আমি অন্যদের চেয়ে বেশি দেখেছি, ভালোবেসেছি, ও বুঝেছি। এটুকুই আমার জন্য সান্ত্বনার কিছু কারণ, এ অপার দুঃখের মাঝেও।’ তার এই অতিমানবীয় দেখা, ভালোবাসা ও বোঝার ক্ষমতাই তার মরণ-অপরাধ। চিঠির পরিশিষ্টে তিনি লেখেন : ‘এম্পেডোক্লিস (একজন প্রাক-সক্রেটিক গ্রিক দার্শনিক)-এর জীবন পড়ে আমি বুঝলাম, নিজেকে দেবতা বানানোর আকাঙ্ক্ষা কত প্রাচীন।’
প্রতিবার ‘Note to an Old Friend’ পড়ার পর ভিন্ন ভিন্ন মানুষকে দেখা যায়। এমন এক মানুষ, যে নিজেকে ঈশ্বর ভাবতে চেষ্টা করছে, অথবা এক ঈশ্বর, যে নিজেকে মানুষ ভাবতে চেষ্টা করছে। আকুতাগাওয়া আত্মহত্যার কল্পনা করতেন যেমন করে মানুষ টেলিভিশন দেখে। জ্ঞানগম্যের উপহার দ্বারা বিভ্রান্ত এক সংবেদনশীল মানুষ, যিনি অন্যদের সহানুভূতির প্রতিক্রিয়া দেখাননি, কারণ তার নিজের প্রতি কোনো সহানুভূতি ছিল না। তিনি তার ভয়কে বুদ্ধির আড়ালে ঢাকতে চেষ্টা করতেন, আত্মদয়াকে বিনয়ের ভুল রূপ হিসাবে দেখতেন। তিনি চেয়েছিলেন ক্ষমা পেতে-কিন্তু কখনো ক্ষমা চাইতেন না। নিজের তৈরি করা আত্ম-গাথাকেই তিনি ভাবতেন জনসেবা। আকুতাগাওয়া হয়তো আত্মার এক কম্পন অনুভব করেছিলেন, তিনি মনে করেছিলেন যা কেবল শূন্যতার সঙ্গে মিশেই শান্ত করা সম্ভব।
সূত্র : প্যারিস রিভিউ
