অন্যান্য বস্তুরও কি ডান হাত বাম হাত আছে
বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ছোটবেলায় আমার একটা সমস্যা ছিল। আমি ডানদিক বামদিক চট করে চিনতে পারতাম না। কেউ যদি বলত ডানে যাও, একটু চিন্তা করে দিক ঠিক করে তারপর ডানে যেতে হতো। পরে একটা বুদ্ধি বের করি। আমার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে পোড়া চিহ্ন আছে, সেদিকটা হচ্ছে আমার ডানদিক। এরপর থেকে অনেক বড়বেলা পর্যন্ত ডান-বামের ব্যাপার থাকলে দ্রুত ওই আঙুলটা দেখে দিক ঠিক করতাম। এখন আর প্রয়োজন হয় না, তবে অভ্যাসের দাস হিসাবে মনের অগোচরে আঙুলটা দেখে নেই কি না তা বলা মুশকিল। মানুষের হাতের এই যে ডান-বাম থাকা, এ হ্যান্ডেডনেস (handedness)-কে বাংলায় ‘পার্শ্বধারণা’ বলা যেতে পারে। দিক না বলে ‘পার্শ্ব’ শব্দটাই জুতসই মনে হলো। দিক বলতে সাধারণত পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত, ঊর্ধ্ব, অধ-এই দশ দিক বোঝায়। মানুষের ডান হাত বাম হাতের উদাহরণ দিয়ে বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-কাইরালিটি (chirality) সহজে বোঝা যায়। কাইরালিটির আভিধানিক সংজ্ঞা আগে দেখে নেওয়া যাক। কাইরালিটি গ্রিক শব্দ ‘খেইর (kheir) থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ হাত। কাইরালিটি বলতে কোনো বস্তুর অসমমিতিক বা অসামঞ্জস্যসূচক সেই বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়, যার ফলে একটি বস্তু তার আয়নাচিত্র বা প্রতিচ্ছবির (mirror image) মতো হয় না, আলাদা হয়। বস্তুটিকে তার আয়নাচিত্র বা প্রতিচ্ছবির ওপর হুবহু মিল করে বসানো যায় না। বোঝা গেল কী? উদাহরণ দিলে আশা করি পরিষ্কার হবে। আমাদের ডান ও বাম হাত একে অপরের আয়নাচিত্র। আপনি যদি আপনার বাম হাতটি আয়নার সামনে ধরেন, তাহলে আয়নায় যে প্রতিবিম্বটি দেখবেন, সেটি আপনার ডান হাতের মতো দেখাবে। কিন্তু আয়নার ডান হাত যেদিকে মুখ করে আছে, আপনি যদি আপনার বাম হাতটি ঘুরিয়ে সেদিকে মুখ করে ওই ডান হাতের ওপর রাখেন, তাহলে দেখবেন যে, এদের হুবহু মিলানো যাচ্ছে না, বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বাম দিকে থেকে যাচ্ছে, ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ডান দিকে থেকে যাচ্ছে; তর্জনি, মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠাও পরস্পরের ওপরে বসছে না। দুটি হাত একে অপরের আয়নাচিত্র, কিন্তু আমরা একটিকে ঘুরিয়ে অন্যটির ওপর পুরোপুরি বসাতে (superimpose) পারি না। এ বৈশিষ্ট্যটিকেই কাইরালিটি বলা হয়। এবার ক্রিকেট ব্যাটটি দেখুন। মূল ব্যাটটি (ব্যাটের মূল চিত্রটি) তার আয়নাচিত্রের ওপর সুপারইম্পোজ করা যাচ্ছে; এমনভাবে মিলেছে যে, কোন পার্থক্য করা যাচ্ছে না, ব্যাট একটা দেখাচ্ছে। অর্থাৎ ক্রিকেট ব্যাটের কাইরাল বৈশিষ্ট্য নেই।
একটি বস্তু, সিস্টেম বা অণুকে কাইরাল (chiral) বলা হয় যদি এটিকে তার আয়নাচিত্র থেকে পার্থক্য করা যায়। এভাবেও বলা যায়, যদি একটি বস্তু এবং তার আয়নাচিত্র সুপারইম্পোজ করা না যায়, তাহলে বস্তুটিকে কাইরাল বলে। একটি কাইরাল বস্তু এবং তার আয়নার প্রতিচ্ছবিকে ইন্যানটিওমর্ফ (enantiomorph) বলে, গ্রিক ভাষায় যার অর্থ বিপরীত রূপ। আর যদি একটি বস্তু এবং এর আয়নাচিত্র সুপারইম্পোজ করা যায়, তাহলে বস্তুটি অ্যাকাইরাল (achiral), অর্থাৎ কাইরাল নয়। অত্রএব, ক্রিকেট ব্যাট অ্যাকাইরাল। ফরাসি রসায়নবিদ এবং মাইক্রোবায়োলজিস্ট লুই পাস্তুর কাইরালিটি আবিষ্কারের কৃতিত্বের অধিকারী। জাপানি বিজ্ঞানী রিওজি নয়োরি, মার্কিন বিজ্ঞানী উইলিয়াম এস. নোলস এবং কে. ব্যারি শার্পলেস কাইরালবিষয়ক গবেষণার জন্য ২০০১ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তারা তিনজন মূলত কাইরাল অনুঘটক (catalyst)-এর ভূমিকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।
মানুষ কাইরাল, কারণ মানুষের ডান এবং বাম হাত একে অপরের আয়নাচিত্র, কিন্তু অভিন্ন নয়। তবে মানুষেরই যে কেবল ডান হাত বাম হাত আছে তা নয়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কাইরালিটি বস্তুজগতের জন্যও একটি মৌলিক ধারণা। এ কারণেই বাম হাতের দস্তানা (glove) ডান হাতে পরা যায় না, বিপরীতভাবে ডান হাতের দস্তানা বাম হাতে পরা যায় না। কাইরাল বস্তুর আরও উদাহরণ : জুতা, স্ক্রু, শামুকের খোলস ইত্যাদি। বস্তুজগতের কিছু অণু ঠিক আমাদের হাতের মতো; তার একটি আয়না-প্রতিচ্ছবি থাকে যা গড়নে-গঠনে ওই অণুর মতো নয়, আলাদা। এ অণুগুলোকে কাইরাল বলে এবং তাদের আয়না-প্রতিচ্ছবিকে ইন্যানটিওমার (enantiomer) বলে। অণুর জৈবিক কার্যকলাপে কাইরালিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইন্যানটিওমারগুলোর জৈবিক কার্যাবলিতে ভিন্নতা থাকতে পারে এবং কাইরালিটির গুরুত্ব সেখানেই। প্রায়শই একটি ইন্যানটিওমার (যেমন, বা-হাতি বা L-ফর্ম) উপকারী প্রভাব ফেলতে পারে, অন্যদিকে অপরটি (যেমন, ডান-হাতি বা D-ফর্ম) নিষ্ক্রিয় বা এমনকি ক্ষতিকারকও হতে পারে।
একটি ঐতিহাসিক ঘটনা দিয়ে দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। ১৯৫০ দশকের শেষের দিকে এবং ৬০ দশকের গোড়ার দিকে থ্যালিডোমাইড (Thalidomide) নামক একটি ওষুধ বিশ্বের ৪৬টি দেশে গর্ভবতী মহিলাদের সেবনের জন্য ব্যবহৃত হতো। এটি মূলত গর্ভবতী মহিলাদের ‘মর্নিং সিকনেস’ উপশমের জন্য দেওয়া হতো। কিন্তু ৬০ দশকেই এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে থ্যালিডোমাইড চিকিৎসার ফলে হাজার হাজার শিশু গুরুতর জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নিছে। নভেম্বরে জার্মানির শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. উইডুলিন্ড লেঞ্জ (Widulind Lenz) এবং পরের মাসে অস্ট্রেলিয়ার ড. উইলিয়াম ম্যাকব্রাইড (William G. McBridge) রিপোর্ট করেন যে থ্যালিডোমাইড গ্রহণকারী মায়েদের জন্ম নেওয়া শিশুদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গুরুতর ত্রুটি (Teratogenicity) রয়ে যাচ্ছে। জন্মগত ত্রুটিগুলোর মধ্যে ছিল ফোকোমেলিয়া (হাত বা পা অস্বাভাবিকভাবে ছোট, আঙুল ও পায়ের আঙুল সংযুক্ত, নিতম্ব এবং ঊরুর হাড়ের অনুপস্থিতি ইত্যাদি), অ্যামেলিয়া (এক বা উভয় বাহু বা পা না থাকা), বোন হাইপোপ্লাশিয়া (হাড়ের বৃদ্ধি যথাযথভাবে না হওয়া) এবং কান, হৃৎপিণ্ড বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে প্রভাবিত করে এমন সব ত্রুটি। গর্ভাবস্থায় থ্যালিডোমাইড ব্যবহারের ফলে আক্রান্ত মোট ভ্রূণের সংখ্যা ছিল ১০ হাজারেরও বেশি (মতান্তরে ২০ হাজার পর্যন্ত); এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ জন্মের সময় বা তার কিছুক্ষণ পরই মারা যায়। হাজার হাজার গর্ভপাত সংঘটিত হয়। যারা বেঁচে ছিলেন তাদের ওই ত্রুটিগুলো থেকে যায়। বিশ্বজুড়ে ব্যাপক হইচই পড়ে যায়। ইউরোপের বাজার থেকে ১৯৬১ সালে ওষুধটি প্রত্যাহার করা হয়। থ্যালিডোমাইড ট্র্যাজেডিকে ‘অদ্যাবধি সর্ববৃহৎ মানবসৃষ্ট চিকিৎসা বিপর্যয়’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে থ্যালিডোমাইড কেন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল তা জানতে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে থ্যালিডোমাইডের কাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর পরস্পরবিরোধী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ২টি ইন্যানটিওমার রয়েছে; একটি এস-ইন্যানটিওমার (Senantiomer), অপরটি আর-ইন্যানটিওমার (Renantiomer)। S-enantiomer অ্যাঞ্জিওজেনেসিস অর্থাৎ রক্তনালি গঠনে বাধা দেয় এবং ভ্রূণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনের কার্যাবলিতে হস্তক্ষেপ করে, যার ফলে জরায়ুতে শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দেয়। পক্ষান্তরে অপরটি (Renantiomer)। মস্তিষ্কের প্রাথমিক প্রতিরোধমূলক নিউরোট্রান্সমিটার GABA-কে শক্তিশালী করে প্রশান্তি, তন্দ্রা এবং শিথিলতা সৃষ্টি করে, উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং মর্নিং সিকনেস হ্রাস করে। মানুষের হাতের মতো কিছু চাবির একটি ‘বাম-হাতি’ সংস্করণ এবং একটি ‘ডান-হাতি’ সংস্করণ থাকে। এ সংস্করণগুলোর মধ্যে কেবল একটি মানুষের শরীরের তালায় ফিট হতে পারে, অন্যটি নাও হতে পারে, অথবা আরও খারাপ, তালা আটকে পর্যন্ত দিতে পারে! ঠিক যেমন একটি চাবি কেবল একটি নির্দিষ্ট তালার সঙ্গে খাপ খায়, নির্দিষ্ট ধরনের অণুও নির্দিষ্ট ‘হাতওয়ালা’র সঙ্গে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা। গর্ভবতী নারীদেহে Renantiomer হিতকর ভূমিকা পালন করলেও, S-enantiomer ভয়ংকর ভূমিকা পালন করেছিল। এটি ছিল একটি ভুল চাবি দিয়ে তালা খোলার চেষ্টা করার মতো-এটি কাজ করেনি, উলটো তালা আটকে দিয়েছিল। তবে লক্ষণীয়, তখন থ্যালিডোমাইডের নিরাপদ R-ইন্যানটিওমারটিই ব্যবহার করা হয়েছিল। তাহলে কেন বা কীভাবে বিপর্যয়টি ঘটেছিল? উত্তর হছে Racemization (রেসমাইজেশন অর্থাৎ আন্তঃরূপান্তর)-এর মাধ্যমে। শুধু একটি ইন্যানটিওমার প্রয়োগ করা হলেও, শেষ পর্যন্ত উভয় ফর্মই উপস্থিত থাকতে পারে। রেসমাইজেশন বলতে কাইরাল অণুদ্বয়কে একটি ইন্যানটিওমারের ফর্ম (সাধারণত জৈবিকভাবে সক্রিয় L-ফর্ম) থেকে তার আয়না প্রতিচ্ছবি (D-ফর্ম)-তে অর্থাৎ বাম-হাতি থেকে ডান-হাতিতে অথবা ডান-হাতি থেকে বাম-হাতিতে রূপান্তরকে বোঝায়। রেসমাইজেশন প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম উভয়ভাবেই ঘটতে পারে। থ্যালিডোমাইডের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবে ঘটেছিল; উপকারী ইন্যানটিওমারটি গর্ভবতী নারীদেহে কোনো এনজাইমের দ্বারা প্রভাবিত না হয়েই সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অপকারী ইন্যানটিওমারে রূপান্তরিত হয়েছিল এবং ভ্রূণের বিকাশে হস্তক্ষেপ করে জন্মগত ত্রুটিসম্পন্ন শিশু উৎপাদন করেছিল। ক্রিকেটে হঠাৎ হঠাৎ আমরা এমন রেসমাইজেশন দেখে থাকি; ব্যাটসম্যান আসলে ডান-হাতি, কিন্তু বোলার বল নিক্ষেপ করার সামান্য আগে বা পরে তিনি বাম-হাতি ব্যাটসম্যান হয়ে শট খেলেন। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এভাবে রিভার্স সুইপ শট খেলার জন্য বিখ্যাত।
ওষুধ ছাড়াও মানুষের জন্য কল্যাণমূলক বিবিধ পণ্য তৈরিতে কাইরালিটির ভূমিকা রয়েছে। আমরা কীভাবে স্বাদ এবং সুগন্ধ উপলব্ধি করি তাতে কাইরালিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একই অণুর দুটি ইন্যানটিওমারের গন্ধ এবং স্বাদ নাটকীয়ভাবে ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি নির্দিষ্ট অণুর একটি ইন্যানটিওমার লেবুর মতো গন্ধ পেতে পারে, অন্যটির গন্ধ কমলার মতো হতে পারে। খাদ্য বিজ্ঞানীরা খাদ্যপণ্যে নির্দিষ্ট স্বাদ তৈরি বা উন্নত করার জন্য এ জ্ঞান ব্যবহার করেন। কিছু কৃত্রিম মিষ্টি কাইরাল। কাইরালিটি বোঝার মাধ্যমে এমন মিষ্টি তৈরি করা সম্ভব হয় যা তীব্র মিষ্টি, কিন্তু কিছু পূর্ববর্তী মিষ্টির মতো অবাঞ্ছিত আফটারটেস্ট থাকে না। কৃষিকাজে ব্যবহৃত অনেক কীটনাশক কাইরাল অণু। মানুষের ওষুধের মতো কীটনাশকের একটি ইন্যানটিওমার কীটপতঙ্গ নিধনে অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে, অন্যদিকে অন্যটি পরিবেশের জন্য কম কার্যকর বা এমনকি ক্ষতিকারকও হতে পারে। বিজ্ঞানীরা সক্রিয় ইন্যানটিওমার সমৃদ্ধ কীটনাশক তৈরি করতে কাইরাল সংশ্লেষণ ব্যবহার করেন, যা তাদের আরও কার্যকর করে এবং প্রয়োজনের পরিমাণ হ্রাস করে, ফলে পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস পায়।
এখন, শুরুতে যে উল্লেখ করেছিলাম শৈশবে আমার ডান বা বামদিক দ্রুত শনাক্ত করতে সমস্যা হতো তাকে কাইরালিটিজনিত সমস্যা বলা যায় কি না? উত্তর হছে, না, একে কাইরালিটির সমস্যা বলা যায় না। ডান বা বামদিক শনাক্তজনিত সমস্যাটি ব্যক্তির স্থানিক সচেতনতা (চারপাশের বিশ্বকে বোঝার এবং তার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করার ক্ষমতা), বডি স্কিমা (মহাকাশে নিজের শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিনিধিত্ব), মনোযোগের অভাব বা চিত্তবিক্ষিপ্ততা, পার্শ্বীয়তা বা বাম-ডান বৈষম্যের সঙ্গে বেশি সম্পর্কিত। ডান থেকে বাম পার্থক্য করার এ ক্ষমতা একটি জটিল প্রক্রিয়া, যার মধ্যে মস্তিষ্কের একাধিক অংশ একসঙ্গে কাজ করে।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে কেউ ডান-হাতি, কেউ বামহাতি, কেউ উভয় হাতি বা সব্যসাচী হওয়ার কারণ কাইরালিটি কি না? উত্তর হছে, না, এটিও কাইরালিটিজনিত বিষয় নয়। মানুষের মস্তিষ্কের দুটি দিক বা গোলার্ধ (hemishere) রয়েছে : বাম এবং ডান। প্রতিটি গোলার্ধ শরীরের বিপরীত দিক নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং, মস্তিষ্কের বামদিক ডান হাতকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মস্তিষ্কের ডানদিক বাম হাতকে নিয়ন্ত্রণ করে। বেশিরভাগ মানুষের জন্য মস্তিষ্কের একদিক নির্দিষ্ট কাজের জন্য ‘প্রধান’। অর্থাৎ মস্তিষ্ক দুজন খেলোয়াড় নিয়ে গড়া একটি দলের মতো। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে ‘বাম-মস্তিষ্কের খেলোয়াড়’ শক্তিশালী এবং সে ডান হাত নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব নেয়। কিন্তু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ‘ডান-মস্তিষ্কের খেলোয়াড়’ শক্তিশালী এবং সে বাম হাতের জন্য নেতৃত্ব নেয়। এ ‘খেলোয়াড়ের পছন্দ’কেই আমরা কে কোন ‘হাতি’ সেটা বলি। আবার কিছু মানুষ উভয় হাত সমানভাবে ব্যবহার করতে পারে, যাদের সব্যসাচী (ambidextrous) বলে। এর অর্থ হলো তাদের মস্তিষ্কে কোনো এক গোলার্ধের আধিপত্য কম স্পষ্ট অথবা তারা উভয় গোলার্ধে দক্ষতা অর্জন করেছে। আবার ক্রিকেটে দেখা যায় কিছু খেলোয়াড় আছেন যারা বাম হাতে বল করেন কিন্তু ডান হাতে ব্যাট করেন এবং বিপরীতভাবেও ঘটে। এটিকে বলা হয় ক্রস-ডোমিন্যান্স বা মিশ্র-হ্যান্ডেডনেস ।
হাতে লাঠি জাতীয় জিনিস দিয়ে খেলতে হয় এমন কয়েকটি খেলা হচ্ছে-হকি, ক্রিকেট, বেইজবল, ব্যাডমিন্টন, লন টেনিস, টেবিল টেনিস, গল্ফ। এগুলোর মধ্যে গল্ফ ছাড়া সব খেলাতে ডান-হাতি বাম-হাতি সবার জন্য একই হাতিয়ার (স্টিক/ব্যাট); কেবল গল্ফে ডান-হাতি বাম-হাতির জন্য আলাদা হাতিয়ার, যাকে বলে ‘ক্লাব’ (গল্ফ স্টিক)। তো, স্বামী-স্ত্রী গল্ফ খেলছিলেন, হঠাৎ স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘সোনা, আমি মারা গেলে তুমি কি আবার বিয়ে করবে?’ স্বামী বললেন, ‘না প্রিয়তমা।’ স্ত্রী বললেন, ‘আমি নিশ্চিত তুমি করবে।’ তাই স্বামী বললেন, ‘ঠিক আছে, আমি করব’। তারপর স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তাকে আমাদের বিছানায় ঘুমাতে দেবে?’ এবং স্বামী উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ, আমার মনে হয়।’ তারপর স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তাকে আমার গল্ফ ক্লাব ব্যবহার করতে দেবে?’ এবং স্বামী উত্তর দিল, ‘না, সে তো বাম হাতি।’
