গল্প
আড়ালে তার সূর্য হাসে
ফারিহা জেসমিন ইসলাম
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘তারপর... যেতে... যেতে... যেতে... এক জীবন শূন্যতার সাথে দেখা। তার সাথে আলাপ, তার সাথেই প্রেম, অতঃপর আমাদের সুখের সংসার’। লিখে যায় বীথি। অফিসে কাজের চাপ একটু কমলে ব্যাগ থেকে নোট বুকটা বের করে কয়েক লাইন রোজ লিখে সে।
ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়। এ মুহূর্তে বাইরে সজোরে বৃষ্টি হচ্ছে, থামার কোনোই লক্ষণ নেই। রিকশা পেতে পেতেই কাকভেজা হতে হবে, ভালোই মুশকিলে পড়া গেল। আজ অফিসে আসার সময় ছাতাটাও ভুলে বাড়িতে রেখে এসেছে বীথি।
এ বৃষ্টি কতদিন চলবে কে জানে! আজকাল প্রকৃতির মন বোঝা দায়, দেখা গেল ভরা ভাদ্রে শ্রাবণ মাসের প্রবল বর্ষণ হচ্ছে। তালপাকা ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে সঙ্গে আসমান কাঁপিয়ে সারা দিন ভারী বর্ষণ, রাস্তাঘাট পানির নিচে। অফিসে আসে-যায় কার সাধ্য-লিখা বন্ধ করে বৃষ্টি দেখতে দেখতে মালিহা বীথি ইত্যাদি নানা ভাবনাই ভাবছিল জানালার এপারে দাঁড়িয়ে। আজ তার মনটা বিশেষ ভালো নেই। দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে।
তার নাম মালিহা বীথি, একটি লিডিং রিসার্চ ফার্মের সে জ্যেষ্ঠ গবেষক। শিক্ষিত, স্মার্ট, সুন্দরী, মার্জিত এসব বিশেষণকে ম্লান করে দিয়ে বীথির আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, ঠোঁটের কোণে সব সময় লেগে থাকা অকপট হাসি তার স্নিগ্ধতা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বীথি হাতঘড়িটার দিকে তাকায়, চারটা বেজে দশ মিনিট। বৃষ্টি কমে গেছে, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বীথি বাড়ি ফিরতে পারবে। যাক! আজকের মতো বাঁচা গেল! শেষ মুহূর্তে আরেকটি রিপোর্ট চেকিং এসে পড়ায় অফিসে আরও কিছুক্ষণ সময় পেরিয়ে যায়।
আজ সোমবার, মনে পড়ল বীথির, পত্রিকার জন্য একটা লিখা দেওয়ার কথা আছে আগামীকাল। নারীদের উদ্দেশে করা সাইবার বুলিং রুখতে সুশীল সমাজের ভূমিকাবিষয়ক একটি লিখা জমা দিতে হবে কাল।
বিকালের আলো ফিকে হতে আরম্ভ করেছিল। আকাশ কালো হয়ে এ সন্ধ্যা নামল বলে। বীথি দরজার লক খুলে ঘরে ঢুকল। ফাঁকা বাড়ির ভেতরটায় অন্ধকার হয়েছিল। সুইচ টিপে বীথি বাতি জ্বালাল। এ বাড়িতে তারা দুজনেই শুধু থাকে। বীথি এবং তার স্বামী নীলয়। নীলয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রমিজিং অ্যান্ড প্রগ্রেসিভ। বীথির প্রতি ভীষণ কেয়ারিং কখনো কখনো পসেসিভ।
অফিসে সারা দিনের কর্মযজ্ঞে বীথি এখন খুব ক্লান্ত। তার স্বামী অফিস থেকে ফিরলেই দুজন মিলে কফি খাওয়া হয়। কিন্তু আজ তার কোনো অপেক্ষাই ভালো লাগছে না, কারোর জন্য না। মনে মনে ভাবছে সব অপেক্ষা সুখের হয় না, সব অপেক্ষায় মিলনের সৌরভ থাকে না। কিছু কিছু অপেক্ষা না ফুরালেই ভালো, স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা পোহাতে হয় না। এসব কেন ভাবছে সে? গতকালকের জন্য?
এই তো গতকাল সন্ধ্যায় এমনি এক দীর্ঘ অপেক্ষার পর বীথির স্বামী নীলয় অফিস থেকে ঘরে ফিরল। আজ সকাল থেকে আমার দুটো লেকচার, দুটো থিসিস..., তোমার কি হোল গো? গল্প করতে থাকে নীলয়। বীথিও সাড়া দেয়। সারা দিন পর এই তো তাদের অল্প-স্বল্প আলাপ। বাকিটার সময় কই? নীলয়ের অনেক পড়ার প্রেসার, গবেষণার চাপ থাকে। উঠতি ক্যারিয়ার। বীথিরও তাই। যদিও নীলয়ের মতো না একেবারেই।
খানিকক্ষণ পর কফির মগটা নীলয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বীথি বলছিল একটা সাহিত্য সম্মিলনে অংশগ্রহণের কথা। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই, রাজশাহীতে। নীলয় রাজি হলো না। বলল, এতদূর রাজশাহী! কার সঙ্গে যাবে? কোথায় থাকবে? এ বাদলে বরষায়? না, না, কোথাও তোমার যাওয়া-টাওয়া হবে না।
কেন হবে না? বীথি প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। সবাই যেভাবে থাকে সেভাবে থাকব। নীলয় বুঝতে চাইল না। এত লিখে কী হবে? বাসা থেকে লিখ, অনলাইন আছে আজকাল, সেসব নিয়ে থাক-নীলয়ের সাফ জবাব।
কথায় কথায় তর্ক, এরপর নিলয়-বীথির চীৎকার...। এরপর সজোরে নীলয়ের হাতের মগটা মেঝেতে ছুড়ে মারা...।
গো টু হেল বলে বীথির কান্নায় ভেঙে পড়ে।
নিলয়ের এইরূপ বীভৎসতা বীথিকে হতবাক করে দেয়। আজকাল সে প্রায় এমনই করে। বীথি মগের টুকরোগুলো একটা একটা করে কুড়িয়ে নেয় যেমন করে সে নয় বছর আগেও এ সংসারের ভেঙে পড়ে থাকা টুকরোগুলোকে একটা একটা করে কুড়িয়ে নিয়ে নতুন করে গড়েছে এ সংসার। প্রতিবার যখনই নীলয় তার স্বপ্নগুলোকে ভেঙে দিয়েছে , বীথি কুড়িয়ে নিয়ে জোড়া লাগিয়েছে। কেন? সববারই কেন সে? কেন তার এ ভূমিকা?
সমাজের ভয়ে, ফেলে আসা পরিবারের ভয়ে। হ্যাঁ, তার মায়ের বাড়ির লোকেদের কথার শূলে একবারেই চড়তে চায়নি বীথি। নিজের ইচ্ছাতে বিয়ে করেছে, নিজের পছন্দের ছেলেকে।
নীলয় নিুবিত্ত পরিবারের ছেলে। হোক মেধাবী। মেধা দিয়ে খুব কম, খুব কমই কিছু পাওয়া যায় আজকাল। বীথির পরিবার মেনে নেয়নি নীলয়কে। কষ্ট হয়েছে সিদ্ধান্ত নিতে কিন্তু সব ছেড়ে নিলয়ের হাত ধরেছে বীথি। ভালোবাসার চেয়ে বড় আশ্রয় আর কি আছে এ জগতে।
মালিহা বীথি। বয়স ৩২, সুন্দরী , উচ্চ শিক্ষিতা, স্মার্ট, চাকরির জায়গায় হাইলি পেইড। কিন্তু ঘরে? ঘরে কি সে লেস রেকগ্নাইজড (কম মূল্যায়িত)? মালিহা বীথি আজ সেটাই ভাবছে। অনেক সময় সে নির্যাতিত। সব নির্যাতন শরীরে হয় না। শরীরের চেয়ে ভয়ংকর মনের ওপর নির্যাতন।
বীথি পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পরিবারে বসবাস করা সেই একই চিরাচরিত নারীমূর্তি। যেখানে কোনো স্বাধীনতা নেই। একটা হাসিমুখের জেলখানা। বছরের পর বছর এখানে কেটে যাচ্ছে। আহা! জীবন। এই তো জীবন, বহু কাঙ্ক্ষিত জীবন। আহা জীবন! বন্ধ দরজার ওপারে চোখের জল আর গভীর দীর্ঘশ্বাসের জীবন। এই তো সেই জীবন যেখানে সূর্য সদাই অস্তগামী।
নয় বছর ধরে নানা চড়াই-উতরাই পার করে এসেছে বীথি। বারবার স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণা বোবা কান্নায় ভুলেছে। নীলয়ের স্বেচ্ছাচারিতায় অনেক সুযোগ হাত থেকে বেরিয়ে গেছে। বীথি মেনে নিয়েছে। বড় লেখক হতে চেয়েছিল। দেশ-বিদেশে নাম, ভক্ত, অটোগ্রাফ, সভা, সম্মীলন, মাইক্রোফোন হাতে মঞ্চে বক্তৃতা এসব বীথির অন্তরের চাওয়া। একটা পিএইচডি বীথির জীবনের একান্ত লক্ষ্য ছিল। বীথির স্বপ্নগুলোকে গলা টিপে হত্যা করেছে তার জীবনের রুঢ় বাস্তবতা, নিলয়ের ইগো, নিলয়ের একার সিদ্ধান্ত। বীথিকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। হ্যাঁ, সে চেয়েছে বারবার কথা বলতে। নীলয়ের একরোখা সব সিদ্ধান্তকে সে প্রশ্রয় দেয়নি।
প্রতিবাদ করেছে, সারা দিন না খেয়ে থেকছে। জোর করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেছে কয়েকবার। তাতে কিচ্ছু লাভ হয়নি। নীলয় এক বাক্যেই অটল থেকেছে, সীমার মধ্যে থাকতে হবে। রান্নাঘর, অফিস, পড়ার টেবিল, ড্রয়িং রুম আর শোবার ঘর; এ সবেই শুধু বীথির বিচরণের অধিকার আছে। তার জন্য বক্তৃতার মঞ্চ নয়। বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিই বা কেন দরকার? অনেক পড়াশোনা হয়েছে।
কে তৈরি করেছে তার জন্য এ নিয়ম? এ সমাজ? না তার পছন্দের মানুষটি যার জন্য পুরো সমাজকে বীথি পায়ে মাড়িয়ে চলে এসেছিল একদিন?
ভীষণ অভিমানে কান্না পায় বীথির। কাঁদতে গিয়েও কাঁদতে পারে না সে। অশ্রুহীন ব্যথাগুলো বেশি পোড়ায়। নিজের সঙ্গে তার বড় অভিমান হয়। মা’র কথা মনে পড়ে, মা ছিল তার খোলা আকাশ, তার রক্তজবা আরও কত কী! রাত বেড়ে চলে। ঘুমে এক সময় নিস্তেজ হয়ে পড়ে বীথি। স্বপ্নের জগতে ডানা মেলে উড়তে থাকে, তার অধরা আকাশ, ফুল ফোটানো বসন্ত একে একে তার স্বপ্নে সব সব ধরা দিতে থাকে।
আকাশের বুক থেকে অন্ধকার মিলিয়ে গিয়ে শাদা রঙের ভোর হয়। বীথি জেগে ওঠে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ভোর হওয়া দেখল বীথি।
নীলয়কে ঘুম থেকে ডাকতে গিয়ে বীথি দেখল নীলয় বিছানায় নেই। এখানে সেখানে খুঁজে তাকে পাশের ঘরে পাওয়া গেল। ব্যাগ গুছিয়ে কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আশ্চর্য, নীলয় কোথাও যাবে আর বীথি কিছুই জানে না! প্রশ্ন করে বীথি যা উত্তর পেল তাতে তার মরে যেতে ইচ্ছা হলো। নীলয় চার দিনের জন্য শহরের বাইরে যাচ্ছে। ডিপার্টমেন্টের অফিসিয়াল ট্যুর। বীথিকে জানানো কিংবা অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। চার দিন, দেখতে দেখতে কেটে যাবে।
এতটাই বদলে গেল নীলয়!! অথচ গতকালই সন্ধ্যায় সে ভাবছিল রাজশাহী গিয়ে বীথি একা একা কীভাবে, কোথায় থাকবে। কিন্তু সে আজ ভাবল না বীথি চার দিন একা একা কীভাবে বাসায় থাকবে। নিজের কাজে এতটাই যত্নশীল অথচ বীথিকে কিছু করতে দেবে না অফিস ছাড়া। অফিস যেতে দিচ্ছে এটা কি কোন দয়া? আমার ভাগ্য আরেকজন নির্ধারণ করে যাবে প্রতিনিয়ত? রাগে, প্রতিবাদে পরক্ষণে অভিমানে বীথির শরীরগুলোতে থাকে। কি এক অসহনীয় ব্যথা তার যন্ত্রণাগুলোকে টেনে মুখের দিকে নিয়ে এলো।
বীথি রি-অ্যাক্ট করে বসল। না, নাহ! তুমি তো যাবে না। আমি যদি সম্মিলনে যেতে না পারি তবে তুমিও ডিপার্টমেন্টের ট্যুরে যেতে পারবে না-বলে বসল বীথি। নীলয় সর্বান্তঃকরণে বীথিকে নিরাশ করে খেঁকিয়ে উঠল। সব প্রেমের গল্পগুলো বুঝি এমনি হয়! সব পরিণতিগুলোও বুঝি এমনি। বীথি রাগে কাঁপতে লাগল। নীলয় ব্যাগ টেনে নিয়ে বেরিয়ে যায়, বাইরে থেকে দরজা লক করার শব্দ পাওয়া যায়।
বীথি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। একটা বোবা চীৎকার কেউ শুনতে পায় না। নীরবে বীথির হৃদয়ে রক্তপাত হয়। মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। নাহ, আর নাহ, সে যা হবে হোক। আর সে এ টুকরা টুকরা মনটাকে কুঁড়াতে যাবে না। এই খুন হয়ে যাওয়া জীবন, এই চুরি হয়ে যাওয়া আনন্দ তার আর ফেরত চাই না। এ টুকরা টুকরা, জোড়া তালির ঘরকন্না আর চায় না বীথি। মার কথা মনে পড়ে তার, মা বলেছিল, মা বলেছিল। এসবই বীথিকে বলেছিল। এসব ভাবতে ভাবতে তার মনের ঘূর্ণি চোখে প্রবল অনুতাপের বান ডাকে।
পরবর্তী ঘটনাটা অনুমেয়।
দুদিন পর। নীলয় আর কোথাও গেল না। বীথির পাশেই ঠায় বসে রইল। হাসপাতাল থেকে ঘরে ফিরে বীথি পড়ার টেবিলটার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মনে মনে একইসঙ্গে স্বস্তি এবং ক্লান্তি অনুভব করল সে। নিজের ফেলে যাওয়া নোট বুকটার দিকে চোখ পড়তেই কি ভীষণ কোমল এক আলো দেখতে পায় বীথি। যেন নোটবুকটি বলে উঠল কোথায় গিয়েছিলে? কোথায় যেতে চেয়েছিলে?
বীথি চোখ মুছে নোটবুকটা হাতে তুলে নেয়। বীথির কলম চলতে থাকে... তার মতো নবজীবন খুঁজে পাওয়া কারও উদ্দেশ্যে লিখতে থাকে-
তুমি এবং তোমার জীবন মহামূল্যবান। জীবনের সার্থকতা আপেক্ষিক বিষয়। দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। এটা জরুরি নয় যে, তোমার জীবন ফুলে ফসলে ভরে যাবে। সব জীবন ফুলে ফসলে ভরে না। খুব অল্প কিছু জীবন ভরবে। তারাই বরেণ্য হবে। এটাও জরুরি নয় যে, সবাই তোমার সঙ্গে অন্তিম দিন পর্যন্ত থাকবে। কেউ তোমার হাত ধরবে, কেউ ছেড়ে দেবে। সবাই সব সময় পাশে থাকবে না, থাকে না। তাই সাহসী হও, একা বাঁচতে শিখ, পরিস্থিতি মেনে নিতে শিখ। দোষারোপ করা বাদ দিয়ে দাও, প্রত্যাশা করা ছাড়তে হবে।
বীথি লিখে যায়, ক্ষমা করে দিয়ে দেখ কতো প্রশান্তি! নিজের একটা জগৎ তৈরি কর। হাসিখুশি থাকো। যে কয়েকজন তোমার পাশে আছে তাদের ভালোবাস। এটাই আমার কাছে জীবনের সার্থকতা।
জীবন সৃষ্টিকর্তার দেওয়া একবারের সুযোগ। মৃত্যুর পর পৃথিবীতে আরেকটিবার ফিরে আসা যায় না। হতেই পারে লড়তে লড়তে তুমি ক্লান্ত, হতেই পারে হতাশা তোমাকে গ্রাস করেছে। তাই বলে তুমি হাল ছেড়ে দিতে পার না। দিন যাপনে সুখ দুঃখ পাশাপাশি থাকবেই। প্রাপ্তির আনন্দ, হারানোর শোক জীবনের অংশ। যে জীবনে লড়াই নেই তা আমার কাছে কোনো জীবন নয়। যত লড়াই তত অভিজ্ঞতা। হাল ছাড়তে হয় না, চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। তুমি সৃষ্টির সেরা। স ষ্টা তোমাকে অসীম সম্ভাবনা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তুমি যথেষ্ট শক্তিশালী। তোমার জয় সুনিশ্চিত। শুধু অনুরোধ, হাল ছেড় না। মনে রেখ, জীবনের এ কঠিন যাত্রায় সবাই একা। তাই একাই চেষ্টা কর, লড়াই কর। নিজেকে প্রমাণ কর।
বীথির মতো ভালোবাসার টানে ঘর ছেড়ে অজানার পথে নামে যারা তারা অনেক সময়ই পথ হারিয়ে ফেলে। নিয়তি তাদের খোঁজ রাখে না, পরিবার তাদের ফিরে পেতে চায় না। একই গ্রহে তারা নির্বাসিত। ঠিকানাহীন মানুষগুলো উড়োচিঠির মতো, কারও কাছে ম্যাটার করে না। তাই একটা ঠিকানা জরুরি। যেখানে বাক্স পেট্রায় কাপড়চোপড় রাখা যায়। সংসারের সাথে নিজেদের অনুভবগুলোকে সযত্নে রাখা যায়। রাখা যায় দুঃখ- কষ্ট , পাওয়া-না পাওয়াগুলোকেও।
লিখা শেষ করতে করতে রাত ১২টা বেজে যায়। বীথির চোখ পড়ে ফ্যানের বাতাসে উড়তে থাকা ক্যালেন্ডারটার দিকে। আজ কত তারিখ? আজ ২১ সেপ্টেম্বর। আজ তার জন্মদিন, রাতের নীরবতায় পুরো ঘরে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে পাশ থেকে নীলয়ের হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ...
বীথি মনে মনে বলে-তেত্রিশের কৃপায় আরও একবার জীবন জাগল অহর্নিশ ভালোবাসায়, উত্তরে আমারও ভালোবাসা রইল। শুভ জন্মদিন মালিহা বীথি।
