এখনো উপেক্ষিত প্রতিবন্ধীরা
মো. সাজেদুল ইসলাম
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তাদের অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এই দিবসটি ১৯৯২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদা সমুন্নতকরণ, অধিকার সুরক্ষা, প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, আমাদের দেশের ৮ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধিতার শিকার।
অধিকার কর্মীদের মতে, দেশে অনেক দিন থেকে দিবসটি পালন করা হলেও এর তাৎপর্য আমরা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছি। একযুগ হতে চলল বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সনদ অনুস্বাক্ষর করেছে। কিন্তু এতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাগ্যের তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি, বিশেষ করে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষাগ্রহণের সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়লেও চাকরির বাজারে দেখা যায় অনেকেই যোগ্যতা অনুযায়ী টিকে থাকতে পারছেন না। সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে উপবৃত্তি দিচ্ছে, ভাতার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু সেবা গ্রহণের পথ এখনো সুগম হয়নি। এছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় রয়েছে নানা হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতা। এ দীর্ঘসূত্রতার প্রভাব পড়ে ভাতা গ্রহণেও।
দেশে এখনো প্রতিবন্ধীদের প্রবেশগম্যতার অভাব সর্বত্র। প্রতিবন্ধীদের উপযোগী বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-২০১৭ এখনো মানা হচ্ছে না। এ জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থাও লক্ষ করা যায় না। গণপরিবহণ ব্যবস্থাও এখনো প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বৈষম্য বিরাজমান। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কোটা ব্যবস্থার বাস্তবায়ন নেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনের কমিটিগুলো কার্যকর হচ্ছে না। ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার অর্জনে কোনো অগ্রগতি নেই। বস্তুত এ দিবসের তাৎপর্য আমরা কতটা উপলদ্ধি করতে পেরেছি, তাদের সামাজিক অবস্থানই আমাদের জানিয়ে দেয়। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ব্যাপারে প্রতিবন্ধীরা এখনো নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে। ফলে তারা কর্মসংস্থান, শিক্ষা, সামাজিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সমান সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দেশে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি এখনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়নি। অধিকাংশ মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। অথচ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যদি প্রয়োজনীয় সমর্থন পায়, তাহলে তারা তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে পারে এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
জনসংখ্যার একটি অংশকে উন্নয়নের বাইরে রেখে কোনো দেশের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে নিয়ে একটি সম্মিলিত সমাজ বিনির্মাণে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
মো. সাজেদুল ইসলাম : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
