Logo
Logo
×

অল্পকথা

স্মরণ

‘জিরো থেকে হিরো’ হওয়ার গল্প

Icon

রণেশ মৈত্র

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘জিরো থেকে হিরো’ হওয়ার গল্প

স্যামসন এইচ চৌধুরী

দেশের প্রথম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের চার প্রতিষ্ঠাতার অন্যতম স্যামসন এইচ চৌধুরী। তার অপর তিন সহযাত্রী ছিলেন ডা. কাজী হারুনর রশিদ, ডা. পরিতোষ কুমার সাহা এবং রাধিকামোহন রায়। কাল পরিক্রমায় স্যামসন এইচ চৌধুরী প্রতিষ্ঠানটির শতভাগ মালিকানা অর্জন করেন।

স্যামসন এইচ চৌধুরীর পিতা ইয়াকুব হোসেন চৌধুরী এবং মাতা লতিকা চৌধুরী। গোপালগঞ্জের অরুণাকান্দিতে ১৯২৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩০ সালে তার বাবা ছিলেন চাঁদপুর মিশন হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার। ১৯৩২ সালে তিনি চাঁদপুর থেকে বদলি হয়ে পাবনা জেলার আতাইকুলায় চলে আসেন। স্যামসন এই চৌধুরীকে আতাইকুলার এক গ্রামীণ পাঠশালায় ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৩৩ সালে উন্নততর শিক্ষা অর্জনের জন্য স্যামসন এইচ চৌধুরীকে ময়মনসিংহ ভিক্টোরিয়া মিশন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।

তিনি ১৯৩৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুরে শিক্ষাসংঘ হাইস্কুলে ভর্তি হন; কিন্তু ১৯৩৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে পুনরায় আতাইকুলায় ফিরে আসেন এবং আতাইকুলা হাইস্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ওই বছরই তিনি রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভিতে যোগ দেন এবং ১৯৪৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে নৌ-বিদ্রোহে অংশ নেন। এক পর্যায়ে তিনি গ্রেফতার হন এবং পাঁচদিন জেলে আটক রাখার পর তাকে একটি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সেখানে এক মাস আটক থাকার পর তিনি মুক্তিলাভ করেন। মুক্তির সময় তাকে একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। ওই সার্টিফিকেটে তাকে সরকারি প্রশাসনিক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। স্যামসন এইচ চৌধুরী ডাক বিভাগে চাকরি গ্রহণ করেন।

১৯৫২ সালে তিনি ডাক বিভাগের চাকরি থেকে ইস্তফা দেন এবং তার বাবার পরামর্শে ইসন্স (ইয়াকুব অ্যান্ড সন্স) নামে একটি ওষুধের দোকান খোলেন আতাইকুলায়। ১৯৫৮ সালে চারজন মিলে সমপরিমাণ পুঁজি নিয়ে পাবনা শহরের শালগাড়ীয়া মৌজায় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল্স নামে ছোট আকারে একটি ওষুধ প্রস্তুত কারখানা স্থাপন করেন। ধীরে ধীরে তা বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে থাকে। ৫ লাখ টাকার মূলধনের মধ্যে ৪ লাখ টাকা পেইড আপ ক্যাপিটাল নিয়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল্স প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৭ সালে একটি মার্কিন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির লাইসেন্সও অর্জন করেন।

১৯৮৫ সালে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল্স এ দেশের নেতৃস্থানীয় কোম্পানি হিসাবে বিদেশে তাদের পণ্য রপ্তানির সুযোগ অর্জন করে। স্যামসন এইচ চৌধুরী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে আন্তর্জাতিক খ্রিস্টান সংগঠনের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সহায়তালাভের ব্যবস্থা করেন। এ কারণে তিনি স্বাধীনতার শত্রুদের টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন।

অসাধারণ বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারী স্যামসন এইচ চৌধুরী তার বর্ণাঢ্য জীবন গড়ে তোলেন ব্যাপক অধ্যবসায়, দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সঙ্গে। তিনি আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠেছিলেন ‘জিরো থেকে হিরো’। সামান্য একজন ডাক কর্মচারী বা কর্মকর্তা, যার বেতন সে আমলে ২০০ টাকার বেশি ছিল না, তিনি গড়ে তোলেন আন্তর্জাতিক পরিচিতি, বয়ে আনেন অসংখ্য সম্মাননা। তার স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল্স হয়ে ওঠে একটি বিশাল রফতানিকেন্দ্রিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

২০১২ সালে ৮৬ বছর বয়সে এই কর্মবীর সিঙ্গাপুরের এক হাসতাপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি পাবনায় সমাহিত হন।

রণেশ মৈত্র : সাংবাদিক, একুশে পদকপ্রাপ্ত

 

স্যামসন এইচ চৌধুরী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম