|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। শিক্ষক শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে। মনে পড়ে যায় জ্ঞানের মশাল হাতে ছুটে চলা আদর-স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা দিয়ে কঠিন ও অজানা বিষয়কে সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করা মহান কিছু ব্যক্তির কথা। তারা পরের সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো মানুষ করার ব্রত নিয়ে শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে নয়, নেশা হিসাবে গ্রহণ করে আন্তরিকতার সঙ্গে কর্তব্য পালন করে থাকেন। তাই শিক্ষকদের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করা হয়। শিক্ষাগুরুর মর্যাদা সম্পর্কে কবি কাজী কাদের নেওয়াজ লিখেছেন, ‘শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার’। শিক্ষক জ্ঞানের আলো বিতরণের মাধ্যমে অন্ধকারকে দূরীভূত করে সমাজ ও দেশকে আলোকিত করেন। তাই শিক্ষকদের সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান স্যারকে কীভাবে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন, টিভির পর্দায় সমগ্র জাতি তা দেখেছে। লালগালিচার উপর দিয়ে ড. আনিসুজ্জামান স্যার হাঁটছেন, পাশে হাঁটছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এমনভাবে হাঁটছেন যেন একটু পেছনে-অত্যন্ত সতর্কভাবে, যেন স্যারকে ডিঙিয়ে না যান। তার হাঁটাচলায় সম্মান ও শ্রদ্ধার ভাবটা স্পষ্ট। এ দৃশ্য দেখে শিক্ষক হিসাবে গর্বে বুক ভরে গিয়েছিল। বারবার মনে পড়ছিল কবি কাজী কাদের নেওয়াজের সেই বিখ্যাত কবিতার পঙক্তি-‘আজি হতে উন্নত হলো শিক্ষাগুরুর শির/সত্যিই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।’
কিন্তু কিছু মানুষের অমানবিক আচরণ শিক্ষকদের এ শ্রেষ্ঠত্বের আসনকে কলঙ্কিত করছে। কিছু অমানুষ শিক্ষকদের লাঞ্ছনা করার ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। তাদের আচরণে আতঙ্কিত শিক্ষকসমাজ। শিক্ষকরা সুমহান জাতি গড়ার কারিগর। এ জাতি গড়ার কারিগররা আজ কেমন যেন শঙ্কিত হয়ে বসবাস করছে। জাতি গড়ার কারিগরের গলায় আজ জুতার মালা ঝুলানো হচ্ছে! সংসদ সদস্যের সামনে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে! ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে নিজের শিক্ষককে হত্যা করছে ছাত্র। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মিথ্যা অভিযোগে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে শিক্ষককে। শিক্ষকরা অর্থ-বিত্ত, ধন-দৌলতের কাঙাল নয়; একটু সম্মান ও শ্রদ্ধা তাদের কাম্য। সেই সম্মান ও শ্রদ্ধা যদি হারিয়ে যায়, বিনিময়ে অপমান ও লাঞ্ছনা জোটে, তাহলে তাদের আর কী পাওয়ার থাকে! যে দেশের প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে থাকেন, সে দেশের শিক্ষকদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যার বিচার তিনি করবেন, এটা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন-শিক্ষক লাঞ্ছনার এসব ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে আর কোনোদিন কেউ শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার সাহস না পায়।
বিভাস গুহ : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
bivashguha32261@gmail.com
